ফেলুদার পর চলে গেলেন মছলিবাবা

যেতে যেতেও ২০২০ যেন দিয়ে যাচ্ছে একের পর এক শোকবার্তা। বাংলার বিনোদন জগতে ঘটে গেল আরও এক নক্ষত্রপতন।

 

Bengal Live ডেস্কঃ রবিবার সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন বাংলা সিনেমা এবং টেলিভিশন জগতের অন্যতম বর্ষীয়ান অভিনেতা মনু মুখোপাধ্যায়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। দীর্ঘদিন হৃদযন্ত্রের অসুস্থতার কারণে চিকিৎসাধীন ছিলেন মনু মুখোপাধ্যায়।

উত্তমকুমার থেকে শুরু করে এই বাংলার সমকালীন প্রায় সব অভিনয়শিল্পীর সঙ্গে কাজ করেছেন এই অভিনেতা। সত্যজিৎ রায়ের ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’-এ ভণ্ড সাধু মছলিবাবার চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান তিনি। রোববার সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনু মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে টুইট করে শোক জ্ঞাপন করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘প্রবীণ চলচ্চিত্র ও থিয়েটার অভিনেতা মনু মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত”।

পথ দুর্ঘটনায় মৃত রায়গঞ্জের তৃণমূল নেতা, শোকার্ত কর্মীরা

পরিবার সূত্রে জানা গেছে বেশ কয়েক বছর ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন প্রবীণ এই অভিনেতা। কোমরের সমস্যা থাকায় শেষ চার বছর একেবারে শয্যাশায়ী ছিলেন। ছিল হৃদ্‌রোগের সমস্যাও।

মনু মুখোপাধ্যায় ১৯৩০ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। প্রকৃত নাম সৌরেন্দ্রনাথ। কিন্তু মনু নামেই পরিচিত তিনি। ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল তাঁর। সে সময়ে অল্প বয়সে পাড়ার নাটকের দলে নারী চরিত্রে অভিনয় করতেন। ১৯৫৭ সালে বিশ্বরূপায় যোগ দেন প্রম্পটার হিসেবে। ‘ক্ষুধা’ নাটকে ঘটনাচক্রে কালী বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবর্তে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন মনু মুখোপাধ্যায়। এরপর ধীরে ধীরে উত্তরণের গল্প। হাইকোর্টে কেরানির পদে চাকরি করতেন। তবে অভিনয় ছিল তাঁর নেশা। নেশার টানে পেশায় ইতি টেনেছিলেন।

মনু মুখোপাধ্যায় অভিনীত প্রথম ছবি মৃণাল সেনের ‘নীল আকাশের নীচে’। সেই ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে ছিলেন কালী বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিই পরিচালকের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন মনু মুখোপাধ্যায়কে। এরপর বিখ্যাত পরিচালক সত্যজিৎ রায় ও রোন্যান্ড জোফির সঙ্গে কাজ করেছেন প্রয়াত এই অভিনেতা। সত্যজিৎ রায়ের ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’-এ ভণ্ড সাধু মছলিবাবার চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।

ব্যাঙ্কের সিএসপি কর্মীকে অপহরণ রায়গঞ্জে, অভিযোগ ঘিরে চাঞ্চল্য

পাতালঘর’ সিনেমার সেই গানের দৃশ্যে মনু মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন, “পাবে না এমন দ্বিতীয় অপয়া”। অপয়া কিনা জানা নেই, তবে মনু মুখোপাধ্যায়ের মতো বিচিত্র অভিজ্ঞতার অভিনেতা সত্যিই বিরল। ছোট চরিত্রে অভিনয় করলেও দর্শক মনে নিজের ছাপ রাখতে বরাবর সফল হয়েছেন। নিজের অভিনয় দক্ষতা দিয়ে ভক্তদের মনে দশকের পর দশক ধরে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। সত্যজিতের ‘অশনিসংকেত’, ‘গণশত্রু’র মতো ছবিতেও অভিনয় করেছেন মনু মুখোপাধ্যায়। টলিউড সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি মনু মুখোপাধ্যায়ের মতো শক্তিশালী অভিনেতাকে সেভাবে ব্যবহার করতে পারেনি—এই অভিযোগ অনেকেই করে থাকেন।

দীর্ঘ সময় অতিথি চরিত্রে কিংবা পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের পর ২০০৩ সালে পরিচালক অভিজিৎ চৌধুরীর ‘পাতালঘর’ ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন মনু মুখোপাধ্যায়। সাম্প্রতিক সময়ে ‘বাকিটা ব্যক্তিগত’ ছবিতে মনু মুখোপাধ্যায়ের অভিনয় চমকে দিয়েছে দর্শকদের। তিনি অভিনয় করেছেন পরিচালক সায়ন্তন ঘোষালের ‘আলিনগরের গোলোকধাঁধা’ ছবিতেও।

মহিলা নিরাপত্তারক্ষীকে কুপ্রস্তাব পুরুষ নিরাপত্তারক্ষীর, উত্তেজনা বিশ্ববিদ্যালয়ে

রুপালি পর্দার পাশাপাশি ছোট পর্দাতেও নিয়মিত অভিনয় করেছেন তিনি। ‘পৌষ ফাগুনের পালা’, ‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে’-এর মতো ধারাবাহিকে মনু মুখোপাধ্যায়কে দেখছে বাঙালি দর্শক। প্রবীণ এ অভিনেতার মৃত্যুতে স্বাভাবিকভাবেই শোকের ছায়া বিনোদন জগতে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি দিয়ে অনেকেই স্মৃতিচারণা করে শোক প্রকাশ করেছেন।
গত ১৫ নভেম্বর কলকাতার বেলভিউ নার্সিংহোমে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন উপমহাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা ও আবৃত্তিকার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তাঁর প্রয়াণের শোক এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি বাংলা। এরই মধ্যে আজ বিদায় নিলেন মছলিবাবা খ্যাত মনু মুখোপাধ্যায়।

Exit mobile version