করোনা কেড়েছে কাজ, ফুটপাতে ফাস্টফুড বেচে পেট চালাচ্ছেন ভূগোলে স্নাতক কল্যাণী
অভাবী ঘরে কষ্ট করেই ভূগোল নিয়ে পড়াশোনা করে স্নাতক হয়েছেন কল্যাণী দেবী। বিয়ের পর সংসার টেকেনি বেশিদিন। স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে বালুরঘাটে বাপের বাড়ি ফিরেই শুরু হয় তাঁর নতুন লড়াই।
Bengal Live বালুরঘাটঃ করোনা আবহে আরও এক লড়াইয়ের কাহিনী। বালুরঘাটের খিদিরপুর এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে মেয়েকে নিয়ে থাকেন কল্যাণী বক্সী। প্রায় চৌদ্দ -পনেরো বছর আগে স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে মেয়েকে নিয়ে রায়গঞ্জ থেকে বালুরঘাটে, বাবার বাড়িতে ফিরে এসেছিলেন কল্যাণী দেবী। কিন্তু বাবার সংসারেও আর্থিক অনটন। ফলে ঠাঁই হয়নি সেখানে। অগত্যায় খিদিরপুরে ভাড়াবাড়ি নিয়ে একাই শুরু করেন লড়াই। বালুরঘাট গার্লস হাই স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর মালদা উইমেন্স কলেজ থেকে ভূগোলে স্নাতক হয়েছিলেন কল্যাণী। পাশাপাশি আবৃত্তি, অঙ্কনেও পারদর্শী তিনি। প্রথমে একটি বেসরকারি বাংলা মাধ্যমের স্কুলে শিক্ষকতা করতেন।
বছর কয়েক আগে বেশি বেতনের আশায় শিক্ষকতার কাজ নিয়ে যুক্ত হয়েছিলেন বালুরঘাটের একটি ইংরেজী মাধ্যম স্কুলে। পাশাপাশি আবৃত্তি ও অঙ্কনেরও টিউশনি করতেন। কিন্তু করোনা আবহে লকডাউন শুরু হতেই একে একে বন্ধ হয়ে যায় সব। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে কল্যাণীদেবীর। উপার্জনের পথ বন্ধ। এদিকে মেয়ের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। তার পড়াশোনার খরচ জোগাতে নাভিঃশ্বাস ওঠে। শেষ পর্যন্ত নিরুপায় হয়ে পাপরি চাট-এর দোকান শুরু করেন তিনি। পরিস্থিতির চাপে ভূগোলে স্নাতক দিদিমণি এখন ফুটপাতের ফাস্টফুড বিক্রেতা।
কল্যাণী দেবী বলেন, “ভাবিনি কোনওদিন এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে৷ করোনা আবহ তৈরির পর প্রথম প্রথম স্কুলের তরফে কম হলেও বেতন চালু রেখেছিল। পরে সব বন্ধ হয়ে গেল৷ ডিসেম্বর মাসের প্রথমেই দেখতে পেলাম আর কোনও সঞ্চয় নেই৷ দুটো পেট চালানো, বাড়ি ভাড়া মেটানোর পাশাপাশি মেয়েটার টিউশনির খরচ জোগাতে পারছিলাম না। বাধ্য হয়েই কাজ খুঁজতে শুরু করি৷ কোথাও কোনো কাজও পেলাম না। তারপর খাবার দোকানের পরিকল্পনা শুরু করি। কিন্তু হাতে পয়সা ছিল না। প্রতিবেশীদের কাছে সহায়তা চাই। শেষ পর্যন্ত পাড়ারই একটি দোকানের সামনে একটা বেঞ্চ পেতে এই পাপড়ি চাটের দোকান দিয়েছি।”