দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাকে অঞ্চল সভাপতির দায়িত্ব! তৃণমূল ছাড়ার হুমকি পঞ্চায়েত সদস্যদের
ব্লক সভাপতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে সাংবাদিক সম্মেলন পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের৷ বিধানসভা নির্বাচনের কয়েকমাস আগে চরম অস্বস্তিতে মালদা জেলা তৃণমূল।
Bengal Live মালদাঃ চাকরি দেওয়ার নাম করে বেকার যুবকদের কাছ থেকে যিনি লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়েছেন, তাঁকেই অঞ্চল সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছে দল। সাংবাদিক বৈঠক ডেকে এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ তুলল শাসকদল পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েত। এখানেই শেষ নয়, ওই নেতাকে অঞ্চল সভাপতি করা হলে গোটা পঞ্চায়েত তৃণমূল ছাড়বে, এমন হুমকিও দেওয়া হয়েছে মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লকের তুলসিহাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সহ অন্য সদস্যদের পক্ষ থেকে।
গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের দাবি, তুলসিহাটা অঞ্চল সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মনোজ রামকে। দলের তরফে ঘোষণা করা না হলেও তাঁরা নেতৃত্বের মারফত তা জানতে পেরেছেন। মনোজ রামের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ বিগত কয়েকমাস ধরে একাধিকবার দলের উপরতলায় জানানো হলেও কেন তাঁকেই অঞ্চল সভাপতি করা হল সেই প্রশ্ন তুলেছেন ক্ষুব্ধ শাসকদলের প্রধান, উপপ্রধান থেকে শুরু সব সদস্যরা।
নির্বাচনের মুখে দলের নেতার বিরুদ্ধে শাসকদলের গোটা গ্রাম পঞ্চায়েতের এ হেন নজিরবিহীন প্রতিবাদ-বিক্ষোভে অস্বস্তিতে পড়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। আর এমন ঘটনাকে স্বাভাবিকভাবেই কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিরোধীরা।
১৭ আসনের তুলসিহাটা গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূল ৪, বিজেপি ৬ ও বাম-কংগ্রেসের ৭টি আসন ছিল। কিন্তু বিজেপি বাদে সকলেই পরে শাসকদলে যোগ দেওয়ায় বোর্ড গড়ে তৃণমূল! প্রধান হন শকুন্তলা সিংহ ও উপপ্রধান হন মহবা বিবি। এর আগে তুলসিহাটা অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি ছিলেন মনোজ রাম। জেলায় সব কমিটি ভেঙে দেওয়ার পর ফের নতুন কমিটি তৈরি হয়েছে। তুলসিহাটায় ফের মনোজকে সভাপতি করা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে তারা জানতে পেরেছেন।
পঞ্চায়েতের অভিযোগ, মনোজের মতো দুর্নীতিগ্রস্থ নেতা এলাকায় আর কেউ নেই। পঞ্চায়েতের পাশাপাশি স্থানীয় নেতৃত্বের তরফে মনোজকে সভাপতি যাতে না করা হয় তা জানানো হয়েছিল। মনোজ বাদে যে কাউকে তাঁরা মেনে নেবেন বলেও নেতৃত্বকে জানানো হয়েছিল! তারপরেও মনোজকে সভাপতি করা হয়েছে জানতে পেরে কার্যত বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ।
প্রধান শকুন্তলা সিংহ বলেন, মনোজের জন্য এলাকার মানুষ তৃণমূলের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ও অনেকের কাছ থেকে চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা নিয়েছে। ফলে সামনে নির্বাচন। কীভাবে মানুষের কাছে ভোট চাইতে যাব। তাই ও পদে থাকলে আমরা পঞ্চায়েতকে নির্দল ঘোষণা করে দিব। নির্দল হয়েই নির্বাচণে মানুষের কাছে ভোট চাইতে যাব।
উপপ্রধান মহবা বিবির স্বামী আব্বাস আলী বলেন, ও থাকলে কেউ ভোট দিবে না। এত অভিযোগ থাকা সত্বেও ওকে অঞ্চল সভাপতি কেন করা হল বুঝতে পারছি না।
তৃণমূলের জেলার কো-অর্ডিনেটর হেমন্ত শর্মা এই প্রসঙ্গে বলেন, আমরা স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলব! ব্লক নেতৃত্ব সমস্যা না মেটাতে পারলে কীভাবে সমস্যা মেটে তা জেলা নেতৃত্ব দেখবে।
বিজেপি নেতা অজয় গাঙ্গুলি বলেন, নিজের দলের লোকই সভাপতিকে মানতে চাইছেন না। গোষ্ঠী রাজনীতি, দুর্নীতি তৃণমূলে নতুন কিছু নয়। আর এভাবেই ওরা মানুষের কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছে।
যদিও মনোজ রামের দাবি, চাকরি দেওয়ার নামে টাকা নেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। আর ওরা যা বলছেন তা দলবিরোধী কথা। সমস্যা থাকলে সেটা দলকে জানাক। দল যা ব্যবস্থা নিবে তা মাথা পেতে নেব।