সম্প্রীতির বিরল নজির, কোচবিহারের রাসচক্র প্রাণ পায় আলতাপের হাতে
বহু যত্ন এবং নিষ্ঠাভরে মুসলিম পরিবারের হাতে তৈরি এই রাসচক্র ঘোরানোর মধ্য দিয়েই শুরু হয় কোচবিহার রাজবাড়ির রাস উৎসব।
Bengal Live কোচবিহারঃ ধর্মান্ধতার বিষবাষ্প যখন ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র, ক্রমশ ঢেকে ফেলেছে মানুষের শুভবুদ্ধিকে তখনই এক অন্য দৃশ্য ধরা পড়ে কোচবিহার রাজবাড়িতে। লক্ষ্মী পুজোর দিন থেকে কোচ মহারাজাদের কুলদেবতা মদনমোহন ঠাকুরের রাসচক্র বানানোর কাজে হাত লাগান আলতাপ মিঞা ও তাঁর পরিবার। বহু যত্ন এবং নিষ্ঠাভরে মুসলিম পরিবারের হাতে তৈরি এই রাসচক্র ঘোরানোর মধ্য দিয়েই শুরু হয় কোচবিহার রাজবাড়ির রাস উৎসব।
সাম্প্রদায়িকতার হানাহানিতে জেরবার এই সমাজে এ যেন এক অনন্য সাধারণ সম্প্রীতির বার্তা।কোচবিহারের গুড়িয়াহাটি গ্রামের এক মুসলিম পরিবার বংশ পরম্পরায় তিন প্রজন্ম ধরে পালন করে আসছে রাজআমলের এই গৌরবময় প্রথা। জানা যায়, কোচবিহারের মদনমোহন ঠাকুরের রাস যাত্রা আগে থেকে চালু থাকলেও তা ১৮৯০ সালে মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণের আমলে অধিক আড়ম্বরের সহিত পালিত হতে শুরু হয়। কথিত আছে, এই সময়ই ধর্মনিরপেক্ষ রাজা সম্প্রীতির বার্তা চারিদিকে ছড়িয়ে দিতে রাসচক্র বানানোর ভার গ্রামেরই এক মুসলমান পরিবারের হাতে তুলে দেন। রাজআমলে সেই মুসলমান পরিবারের পানমামুদ মিঞা প্রথম রাসচক্র বানান, যা অনেকটা তাজিয়ার মত দেখতে ছিল। এই রাসচক্রে কাগজ কেটে বানানো হয় মুসলিম ঘরানার নক্সা এবং কাঠামোর গায়ে বিভিন্ন হিন্দু দেবদেবীর ছবি লাগানো থাকে।
পরবর্তীতে উত্তরাধিকারসূত্রে এই রাসচক্র বানানোর দায়িত্ব পান আজিজ মিঞা। বর্তমানে তাঁর পুত্র আলতাপ মিঞার উপর ভার পড়েছে এই রাসচক্র বানানোর। বিগত প্রায় তিরিশ বছর ধরে কোচবিহারের গুড়িয়াহাটি গ্রামের তোর্সা নদীর বাঁধের পাড়ের বাসিন্দা আলতাপ মিয়া সুদক্ষ হাতে বানিয়ে আসছেন রাজবাড়ীর রাসচক্র। এমনিতে কোচবিহারে দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ডের অধীনে আনন্দময়ী ধর্মশালাতে অস্থায়ী চাকুরি করেন তিনি, তবে লক্ষ্মীপূজো থেকেই মুলতুবি থাকে তাঁর ধর্মশালার কাজ। কারণ লক্ষ্মীপুজো থেকে রাস পূর্ণিমা পর্যন্ত এই একমাস তিনি ব্যস্ত থাকেন রাসচক্র তৈরিতে৷
আলতাপ মিঞা জানিয়েছেন, তিন পুরুষ ধরে তাঁরা নিযুক্ত রয়েছেন রাজবাড়ীর রাসচক্র বানানোর কাজে। এ এক বিরাট অনুভূতি। তাঁর আগে তাঁর বাবা এবং ঠাকুরদা এই কাজ করেছেন , ভবিষ্যতে তাঁর তাঁর ছেলে বানাবে এই রাসচক্র। তাদের পরিবারের হাত ধরেই এগিয়ে চলবে রাজআমলের এই ঐতিহ্যের ধারা এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ছড়িয়ে দেবে সম্প্রীতির বার্তা।