১৯৯৮ থেকে ২০১৯, দুই দশকেরও বেশি সময় পর রায়গঞ্জ লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থী তালিকায় নেই দাসমুন্সি পদবীর কেউ।
Bengal Live রায়গঞ্জঃ উত্তর দিনাজপুরে কার্যত দাসমুন্সি পর্বের ইতি। ১৮ তম লোকসভা নির্বাচনে রায়গঞ্জ কেন্দ্রে প্রদেশ কংগ্রেসের ভরসা এবার প্রাক্তন বাম বিধায়ক আলি ইমরান রমজ। চাকুলিয়া বিধানসভা কেন্দ্রের দুই বারের ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক আলি ইমরান রমজ ওরফে ভিক্টর এখন কংগ্রেস নেতা। রবিবার কংগ্রেসের পক্ষ থেকে রায়গঞ্জ কেন্দ্রের প্রার্থী হিসেবে তাঁরই নাম ঘোষণা করা হয়।
১৯৯৮ সালের পর থেকেই উত্তর দিনাজপুর কংগ্রেসের শক্তঘাটি হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে শুরু করে। কালিয়াগঞ্জের বাসিন্দা প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সির হাত ধরেই কার্যত রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রে কংগ্রেসের উত্থান। তাঁর সূত্র ধরেই দেশের রাজনৈতিক মানচিত্রে জায়গা করে নেয় রায়গঞ্জ। দাসমুন্সি ও রায়গঞ্জ ক্রমেই সমার্থক শব্দে পরিণত হয়। ২০০৮ সালে হেভিওয়েট কংগ্রেস নেতা আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়লে শূন্যস্থান পূরণ করতে মাঠে নামেন প্রিয় জায়া দীপা দাসমুন্সি। ২০০৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে জয় পেলেও এরপরের দুই লোকসভা নির্বাচনেই পরাজয়ের সম্মুখীন হন দীপা দেবী। সাংগঠনিক ভাবেও ক্রমশ দুর্বল হতে থাকে উত্তর দিনাজপুর কংগ্রেস। সাংসদ ও জেলা কংগ্রেস নেতৃত্বের জনসংযোগ ক্রমশ কমে যাওয়াকেই প্রধান কারণ হিসেবে মনে করে রাজনৈতিক মহল। এছাড়াও এই সময়কালে জেলায় জোড়ালো কোন আন্দোলন করতেও
দেখা যায়নি কংগ্রেসকে। ফলে মুখ ফেরাতে শুরু করেন কংগ্রেস সমর্থকেরাও। হাতছাড়া হয় একেরপর এক পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ, পুরসভা।
১৯৯৮ সালে প্রথমবার রায়গঞ্জ কেন্দ্র থেকে কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে লড়াই করেন প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সি। সিপিএম প্রার্থী সুব্রত মুখার্জির কাছে ৬২৮১ ভোটে পরাজিত হন তিনি। এক বছরের মাথায় ১৯৯৯ সালে ফের লোকসভা নির্বাচন হলে বাম প্রার্থী সুব্রত মুখার্জিকে পরাজিত করে রায়গঞ্জ কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সি। ৭৫২৫৫ ভোটে জয় লাভ করেন তিনি। ২০০৪ সালে সিপিএম প্রার্থী মিনতি ঘোষকে পরাজিত করে পুনরায় রায়গঞ্জ কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন কালিয়াগঞ্জ নিবাসী প্রিয়। তবে সেবার জয়ের ব্যবধান কিছুটা কমে হয় ৩৯৮৮৯। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে রায়গঞ্জ কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের হয়ে লড়াই করেন প্রিয় জায়া দীপা দাসমুন্সি। ৪ লক্ষ ৫১ হাজার ৭৭৬ ভোট পেয়ে সিপিএম প্রার্থী বীরেশ্বর লাহিড়ীকে ১ লক্ষ ৫ হাজার ২০৩ ভোটে পরাজিত করেন তিনি৷ তবে এই বিপুলে মার্জিনে জয় ছিল ক্ষণস্থায়ী। পাঁচ বছরের মাথাতেই হয় ছন্দ পতন। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনেই সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ সেলিমের কাছে ১৬৩৪ ভোটে পরাজিত হন দীপা দাসমুন্সি। ২০১৯ সালের নির্বাচনে দীপা দাসমুন্সির ঝুলিতে ছিল মাত্র ৮৩৬৬২টি ভোট।
২০০৯ সালে গোয়ালপোখর বিধানসভা উপ নির্বাচনে প্রথমবার ফরওয়ার্ড ব্লকের বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হন আলি ইমরান। এরপর ২০১১ ও ২০১৬ সালে চাকুলিয়া বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ফরওয়ার্ড ব্লকের টিকিটেই বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মিনহাজুল আরফিন আজাদের কাছে পরাজিত হন ভিক্টর। এরপর থেকেই ফরওয়ার্ড ব্লকের সাথে দূরত্ব বাড়তে থাকে প্রাক্তন বিধায়কের। অবশেষে ২০২২ সালের ১৭ অক্টোবর ফরওয়ার্ড ব্লক ছেড়ে কংগ্রেসের পতাকা হাতে তুলে নেন ভিক্টর। প্রাক্তন বিধায়কের দলবদলের পর থেকেই উজ্জীবিত দেখায় উত্তর দিনাজপুর জেলার কংগ্রেস নেতৃত্ব থেকে সমর্থকদের। তরুন নেতার কাঁধে ভর করেই হারানো জমি পুনরুদ্ধার করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন কংগ্রেসীরা। নতুন করে আশার আলো দেখতে শুরু করেন তাঁরা। ১৮ তম লোকসভা নির্বাচনে ভিক্টরকে প্রার্থী করার মধ্যে দিয়ে কংগ্রেস তার কর্মীদের সেই আশাতেই শিলমোহর দিল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।