রায়গঞ্জ

বৃদ্ধ মা বাবাকে নিয়ে অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন পিএইচডি ডিগ্রিধারী মেয়ে

বৃদ্ধ মা বাবাকে নিয়ে অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন পিএইচডি ডিগ্রিধারী মেয়ে

Bengal Live ওয়েব ডেস্কঃ চাকরি না পেয়ে অনাহারে দিন কাটছে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার বারাসাতের উচ্চ শিক্ষিত পরিবারের। ঝুলিতে পিএইচডি থাকার পরেও শুধু আশ্বাস ছাড়া কিছুই মেলেনি বলে দাবী ওই পরিবারের। প্রতিবেশীদের সাহায্য নিয়েই কোনওক্রমে চলছিল সংসার। তবে এখন ধীরেধীরে তাঁরাও মুখ ফেরাতে শুরু করেছেন। প্রায় দুই সপ্তাহ থেকে শুকনো মুড়ি ও বিস্কুট খেয়েই দিন কাটছে তাঁদের। এমন পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেই সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে সাহায্যের আর্জি জানিয়ে পোস্ট করলেন কমল ব্যানার্জীর প্রতিবেশী শ্যামল সরকার।

শ্যামল সরকার দাবী, ২০১৭ সালে রাস্তার ধারে কার্যত ভিক্ষা করতে দেখেছিলেন কমল ব্যানার্জীর মেয়ে গার্গী ব্যানার্জীকে। জিজ্ঞাসা করতেই জানতে পারেন, বেশকিছুদিন থেকে ভাত জোটেনি উচ্চ শিক্ষিত পরিবারের। এরপর থেকে তিনিই ওই সংসারে প্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহ করতেন। তবে একার পক্ষে সম্ভব না হওয়াতে বাধ্য হয়ে ফেসবুকে পরিস্থিতির কথা জানিয়ে সাহায্যের আর্জি করেন।

জানা গেছে, গার্গী দেবীর বাবা কমল ব্যানার্জী দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টে কাজ করতেন। তাঁর স্ত্রী গীতা দেবীও সেখানেই শিক্ষকতা করতেন। অবসর গ্রহণের পর জমানো সবটুকু খরচ করেছিলেন দুই মেয়ের উচ্চ শিক্ষা ও বিয়ের পেছনে। এরপর একখানি ছোট ফ্ল্যাট নিয়েছিলেন নিজেদের বসবাসের জন্য। নতুন করে আয় না থাকায় জমানো অর্থ শেষ হতেই অনটন দেখা দেয় সংসারে।

এদিকে ২০০৩ সালে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট উপাধি অর্জন করেছিলেন বারাসাত নবপল্লীর বাসিন্দা গার্গী ব্যানার্জী। বিয়েও হয়েছিল তাঁর। কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বিচ্ছেদ ঘটে। অতঃপর বাবা মায়ের সংসারেই ঠাঁই নেন তিনি। এদিকে পিএইচডি থাকার পরেও বহু চেষ্টা করে একখানি চাকরি জোটেনি কপালে। ফলে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুক্তভোগী বাবা মাকে সাথে নিয়ে কার্যত অনাহারেই দিন কাটছে পরিবারের। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া প্রতিবেশীরাও ধীরেধীরে মুখ ফেরাতে শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন গার্গী দেবী। তাই অবশেষে গত ২০ জুলাই জেলা শাসকের নিকট স্বেচ্ছা মৃত্যুর আবেদন জানিয়েছেন দরিদ্র এই পরিবার।

শ্যামল সরকার জানিয়েছেন, তাঁর সামর্থ্য অনুযায়ী চেষ্টা করেছেন পরিবারের পাশে দাঁড়াতে। তবে তারপক্ষেও আর সম্ভব হচ্ছে না। সরকারি সাহায্য পেলেই একমাত্র এই পরিবারটি আর্থিক অনটন থেকে মুক্তি পাবেন বলে মনে করছেন তিনি। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এই পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আর্জি জানিয়েছেন শ্যামল বাবু।

এদিকে সাহায্যের বদলে কাজ চাইছেন গার্গী ব্যানার্জী। তিনি বলেন, আমি শিক্ষিতা। একটা কাজ পেলেই সংসারের অভাব অনটন কেটে যাবে। কিন্তু বহু চেষ্টা করেছি। স্থানীয় পুরসভার দ্বারস্থও হয়েছিলাম। কিন্তু আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই মেলেনি।

এই খবর জানার পর বারাসাত পুরসভার পক্ষ থেকে বার্ধ্যক ভাতা ও খাবারের ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

Related News

Back to top button