প্রতিভার জোরেই অভিনব এক আবিষ্কার করে ফেললেন রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবকর্মী
সুইচ বোর্ড আবার বিদ্যুৎ বিহীন হয় নাকি? হ্যাঁ, বিদ্যুৎ বিহীন সুইচ বোর্ডও সম্ভব। রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্স বিভাগের ল্যাব কর্মীর অনন্য আবিষ্কার।
Bengal Live রায়গঞ্জঃ ইভটিজিং প্রতিরোধে মেয়েদের জুতো আবিষ্কারের পর এবার বৈদ্যুতিক শক খাওয়ার হাত থেকে বাঁচতে অভিনব সুইচ বোর্ড তৈরি করলেন রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকর্মী বাপ্পা রায়। ভেজা হাতে ইলেকট্রিকের সুইচ বোর্ডে হাত পড়লেও যাতে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট না হতে হয় তারজন্য নতুন ধরনের সুইচ বোর্ড উদ্ভাবন করলেন তিনি। তাঁর এই কাজে সহযোগিতা করেছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের পড়ুয়ারা। বাপ্পা রায়ের এই অভিনব উদ্যোগকে ঘিরে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে উৎসাহ উদ্দীপনা তুঙ্গে।
ভেজা আঙুলে সুইচ বোর্ডে হাত পড়লেই ইলেকট্রিক শক খাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। বর্ষাকালে বাড়িতে, অফিসে বা কর্মস্থলে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি মাঝেমধ্যেই শর্টসার্কিট হয়ে যায়। মৃত্যুও ঘটে অনেক সময়। তাই বৈদ্যুতিক শক খাওয়া থেকে বাঁচতে এক অভিনব সুইচ বোর্ড বানিয়ে তাক লাগালেন রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিভাগের ল্যাব কর্মী বাপ্পা রায়। তাঁর আবিষ্কৃত এই সুইচ বোর্ডের মধ্যে কোনও বৈদ্যুতিক সংযোগ থাকছে না। ফলে ভেজা হাতে বা স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় সুইচ টিপলেও শক খাওয়ার কোনও সম্ভাবনাই থাকবে না বলে দাবি বাপ্পা বাবুর।
তিনি জানিয়েছেন, কিছুদিন আগেই বাড়িতে ভেজা হাতে সুইচ টিপতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হতে হয় তাঁকে। এরপরেই এই বিপদ থেকে বাঁচার জন্য বিকল্প ভাবনা মাথায় এসেছিল তাঁর। ইলেকট্রনিকস সরঞ্জাম নিয়ে নাড়াচাড়া করে মসফেট, ট্রানজিস্টার ও বিভিন্ন সামগ্রী দিয়ে নতুন এক সুইচ বোর্ড তৈরি করেন তিনি। ইতিমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের সুইচ বোর্ডের মধ্যে নতুন বানানো সার্কিটটি ইনস্টল করা হয়েছে।
সেটি ভালোমতো কাজও করছে। এর পাশাপাশি বিদ্যুৎ সংরক্ষণ ও বিল কম আসার জন্য সোলার সেলের একটি ডিভাইস তৈরি করেছেন বাপ্পা রায়। এই ডিভাইসে ইলেকট্রিক সুইচ বোর্ড থেকে একটি বা দুটি আলো জ্বালাতে হবে। পরবর্তীতে সেই আলো গিয়ে পড়বে সোলার সেলের উপর। তখনই সোলার সেল চার্জিং হওয়া শুরু হবে। রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের কর্মী বাপ্পা রায় বলেন, স্কুল, কলেজ, অফিসে বিদ্যুতের খরচ কমানোর জন্য এটি আদর্শ উপায়। ছোট জায়গা হলে মেইন লাইন থেকে একটি আলো জ্বালালেই হবে। সেই আলো সোলার সেলের উপর গিয়ে পড়লে সেখান থেকে অন্যান্য আলো ও ফ্যান সহজেই চালানো যাবে৷ আর জায়গা বড় হলে মেইন লাইন থেকে দুটো আলো জ্বালিয়ে বাকি সব আলো সোলারের মাধ্যমেই জ্বালানো সম্ভব। তবে সোলার সেলের আকার যত বড় হবে, তত আলোর প্রাবল্য বাড়বে।
এই প্রথম নয়, ইতিমধ্যেই রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিভাগের কর্মী বাপ্পা রায়ের তৈরি বৈদ্যুতিক জুতো ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলেছিল। পাশাপাশি তাঁর তৈরি অটো স্যানিটাইজার মেশিন সহ বিভিন্ন ডিভাইস ইতিমধ্যে সাড়া ফেলেছে। বাপ্পা বাবুর নতুন বানানো ডিভাইসের বিষয়ে উচ্ছ্বসিত রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অধ্যাপিকা থেকে ছাত্রছাত্রীরা। ছাত্রছাত্রীরা হাতে-কলমে কাজ শিখতে পারছেন। তাঁর তৈরি এই বিদ্যুৎহীন সুইচ বোর্ড অভাবনীয় সাফল্য বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দুর্লভ সরকার বলেন, বাপ্পা রায় বরাবরই গুনি ছেলে। এর আগেও অভিনব বেশ কিছু মডেল বানিয়েছে সে। যা পড়ুয়াদের গবেষণার ক্ষেত্রে খুব কাজে লেগেছে। খুব সম্প্রতি বাপ্পা একটি সুইচ বোর্ড বানিয়েছেন। সেখানে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হওয়ার কোনও সুযোগ নেই। এই মডেলকে গুনগুত ভাবে আরও ভালো করার জন্য বিভাগীয় অধ্যাপকদের সাথে কথা বলার জন্য বলা হয়েছে। ভবিষ্যতে এই ধরণের কাজের জন্য বাপ্পা যেন গ্র্যান্ট পায় সেই দিকটি দেখা হচ্ছে।