করোনা আক্রান্তদের পাশে রায়গঞ্জের ইয়ং ব্রিগেড
নিউক্লিয়াস পরিবারে জন্মে আত্মকেন্দ্রিকতায় মগ্ন আজকের তরুণ প্রজন্ম, এইরকম হাজারো অভিযোগের তকমাকে কার্যত উড়িয়ে দিয়ে, নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করছে রায়গঞ্জ শহরের সাম্যদর্শি,অন্বেষা, সুমন, অরিত্ররা।
Bengal Live রায়গঞ্জঃ ২০১৭ সালের বন্যার পর কোভিড মোকাবিলাতেও একজোট হয়ে লড়াইয়ের বার্তা দিচ্ছে রায়গঞ্জ। বিশেষ করে অল্পবয়সী, স্কুল, কলেজ পড়ুয়াদের সরাসরি মাঠে নেমে কাজ করতে দেখা গিয়েছে। কেউ ছুটছে খাবার নিয়ে, কেউ বা আবার ওষুধ। রাতবিরেতে ফোন এলে অক্সিজেন সিলিন্ডার, অক্সিমিটার নিয়ে সরাসরি কোভিড আক্রান্তদের বাড়ীতে পৌঁছে যাচ্ছেন শহরের ভয়ডরহীন নতুন প্রজন্মের একঝাঁক ছেলে-মেয়ে। কার্যত জীবনবাজি রেখেই রোজ নিঃশব্দে কাজ করে চলেছেন তাঁরা। পাশাপাশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, রেড ভলান্টিয়ারদেরও কোভিড মোকাবিলায় ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখা গিয়েছে।
২০১৭ সালে ভয়াবহ বন্যার সাক্ষী ছিল রায়গঞ্জ সহ বিস্তীর্ণ এলাকা। সেই সময়ই প্রথম রায়গঞ্জের মানবিক রূপ চাক্ষুষ করা গিয়েছিল। ছোট ছোট দল গঠন করে শহর থেকে গ্রাম ছুটে বেড়িয়েছিলেন স্বেচ্ছাসেবীরা। ত্রাণ সামগ্রীর পাশাপাশি খাবার পৌঁছে দিয়েছিলেন বন্যা কবলিত এলাকার মানুষদের হাতে। সরকারি সাহায্যের ব্যবস্থা থাকলেও কার্যত স্বেচ্ছাসেবকদের লাগাতার প্রয়াসে দুইবেলা খাবার জুটেছিল কয়েক হাজার সহনাগরিকের। এই ঘটনার পর ফের একবার মানবিক রায়গঞ্জ। ইতিমধ্যেই করোনা মোকাবিলায় প্রায় সাত থেকে আটটি দল নিঃশব্দে কাজ করে চলেছেন। দিনরাত এক করেই চালিয়ে যাচ্ছেন যুদ্ধ।
এমনই একটি সংস্থা “আইসোলেশন হেল্প লাইন রায়গঞ্জ”। দলে রয়েছেন সাম্যদর্শি, অরণ্য মিত্র, অন্বেষা কর, সৌরভ বসাক, শ্যাম, সুন্দর পাল, চন্দ্রিমা কর, জয়িষ্ণু ভট্টাচার্য, ত্রিপর্ণ সরকার,সৌভিক ঘটকরা। সংগঠনের অন্যতম সদস্য জ্যোতির্ময় জানিয়েছেন, মূলত রান্না করা খাবারই দুই বেলা পৌঁছে দিচ্ছেন করোনা আক্রান্তদের বাড়ীতে। নিজেরাই পুষ্টিগুনে ভরপুর এমন সব খাবার রান্না করছেন। দলের সদস্যদের বাড়ীতেই চলছে এই কর্মযজ্ঞ। যেই সব করোনা আক্রান্ত পরিবার আর্থিক ভাবে দুর্বল, তাঁদের বিনামূল্যে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন জ্যোতির্ময়। তিনি আরও জানান, যাঁরা আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল তাঁদের থেকে খরচের টাকা টুকুই নেওয়া হচ্ছে। সেই টাকা দিয়েই পর দিন বাজার ঘাট চলছে। এদিকে অনেকেই আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন জ্যোতির্ময়।
এদিকে “রায়গঞ্জ অগ্রগামী” নামে আরও একটি সংস্থার সদস্যরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন এই কঠিন পরিস্থিতিতে। দুই একজন বাদে এই সংগঠনের প্রায় সকল সদস্যই কলেজ,স্কুল পড়ুয়া৷ বিনামূল্যে ওষুধ, খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন কোভিড আক্রান্তদের বাড়ীতে। চাল, ডাল, চিনি, ছাতু, সবজি, মুড়ি, ডিম, ফল ইত্যাদি খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন তাঁরা। সংগঠনের সভাপতি সুমন পাল বলেন, রায়গঞ্জ শহরাঞ্চলেই নয়, শহর সংলগ্ন গ্রাম এবং কালিয়াগঞ্জ, বুনিয়াদপুর অঞ্চলেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন “অগ্রগামি” -এর সদস্যরা। সুমন জানিয়েছেন, করোনার প্রথম বছর থেকেই তাঁরা ওষুধ, খাবার পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু করেছিলেন। গত বছর প্রায় ৪০০ বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছিলেন তাঁরা। এবছরও সংগঠনের সকল যোদ্ধারা একত্রিত হয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন বলে দাবি করেছেন সুমন।
লকডাউনের সময় থেকেই জন্ম রায়গঞ্জের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা “হিতৈষী”-র। মূলত স্কুল ও কলেজ পড়ুয়ারা মিলেই শুরু করেছিলেন সংগঠনটি। গ্রামে গ্রামে পৌঁছে শিশুদের পাঠদানই ছিল ” হিতৈষী” মূল উদ্দেশ্য। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে এবার লড়াইয়ের ময়দানে নেমেছেন সংগঠনের সদস্যরাও। করোনা আক্রান্ত পরিবারদের খাবার পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি অক্সিমিটার নিয়েও হাজির হচ্ছেন তাঁরা। করোনা আক্রান্ত ও তাঁদের পরিজনদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন চেক করছেন এই সংগঠনের সদস্যরা৷ শহর ছাড়াও সংলগ্ন গ্রামগুলিতে দিনরাত পরিষেবা দিয়ে চলেছেন ক্ষুদে সদস্যরা।
লড়াইয়ের ময়দানে শুধুই যে ইয়ং ব্রিগেডকেই দেখা যাচ্ছে তা নয়, রয়েছেন শহরের অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও। তারমধ্যে অন্যতম “মুক্তির কান্ডারি”। সংগঠনের কর্ণধার কৌশিক ভট্টাচার্য লাগাতার রক্ত সংকট মেটানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কাজ করে চলেছেন “রেড ভলান্টিয়ার-রা”। করোনা আক্রান্তদের বাড়ীতে জীবানু নাশক স্প্রে করা থেকে শুরু করে, ওষুধ, অক্সিজেন ইত্যাদি সরবরাহের কাজের সাথেও যুক্ত এই সংগঠনের সদস্যরা৷ ইতিমধ্যেই অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবাও চালু করেছে রেড ভলান্টিয়ার।