করোনা আবহে কেমন হবে এবার রায়গঞ্জের দুর্গোৎসব? জানালেন পুজো উদ্যোক্তারা
অনেক বছর ধরেই রায়গঞ্জের দুর্গা পূজার জৌলুস নজর কেড়ে আসছে উত্তর দিনাজপুর সহ পার্শ্ববর্তী জেলার মানুষেরও। বিগ বাজেট থেকে থিম, মণ্ডপ থেকে আলোক সজ্জা — সবেতেই প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য ছাপ রেখেছে রায়গঞ্জ। কিন্তু এবার ? কেমন হবে অরবিন্দ স্পোর্টিং কিংবা সুদর্শনপুর শিলিগুড়ি মোড় কিংবা সমাজ সেবক সংঘের পুজো ? জানালেন উদ্যোক্তারা।
Bengal Live রায়গঞ্জঃ করোনার আস্ফালনে এবার হয়তো জৌলুস হারাবে রায়গঞ্জের দুর্গোৎসব। পঞ্চমী থেকে নবমী শহরবাসীর প্যান্ডেল হপিং কার্যত বিশবাঁও জলে পড়ার আশঙ্কা। বিগ বাজেট তো দূরের কথা, গত বছরের অর্ধেক বাজেট দিয়েও পূজার আয়োজনের কথা ভাবছে না কোনও পূজা কমিটি। নিয়ম রক্ষার পূজা আয়োজন করার দিকেই নজর সকলের। উদ্যোক্তারা বলছেন, লকডাউন ও করোনার প্রভাবে সমাজের সকল স্তরের মানুষের আর্থিক অবস্থার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এমতবস্থায় জাঁকজমক ও চাকচিক্য ধরে রেখে পূজার আয়োজন করা কোনও মতেই সম্ভব নয়৷
বিগত কয়েক বছর থেকেই বাঙালির দুর্গোৎসব এক অন্য মাত্রা নিয়েছে রায়গঞ্জে। রায়গঞ্জ শহরে আয়োজিত হয় বেশ কয়েকটি বিগ বাজেটের পূজা। ১০ লক্ষ বা তারও বেশি টাকার বাজেটের পূজার আয়োজনে থেকেছে নানান চমক। থিম পূজা, বিদেশের কোনও মন্দিরের আদল অথবা কাল্পনিক কোনও মন্দির বানিয়ে শহরবাসীকে উপহার দিয়েছেন পূজা উদ্যোক্তারা। আলোকসজ্জা থেকে মন্ডপ ও প্রতিমা, সব ক্ষেত্রেই ছিল চোখ ধাঁধানো জৌলুস। কিন্তু চলতি বছরে পরিস্থিতি ভিন্ন। করোনার প্রবল আক্রমণে ক্রমেই ফিকে হয়ে যাচ্ছে বাঙালির দুর্গাপূজা।
কলেজপাড়া অরবিন্দ স্পোর্টিং ক্লাবের দুর্গোৎসব কমিটির অন্যতম সদস্য সম্রাট বোস বলেন, বিগত বছরগুলিতে থিম পূজার মধ্য দিয়ে শহরবাসীর মন জয় করলেও চলতি বছরে যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাতে করে নিয়ম রক্ষার পূজার আয়োজন করা ছাড়া কোনও উপায় নেই। ক্লাবের নিজস্ব মন্দিরেই দেবীর আরাধনায় ব্রতী হওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এবং দুস্থ মানুষদের মধ্যে নতুন বস্ত্র বিতরণ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
পূজার জাঁকজমক কমিয়ে নিয়ম রক্ষার পূজার আয়োজন করার কথা জানিয়েছে শহরের অন্যতম বড় পূজা উদ্যোক্তা সুর্দর্শনপুর দুর্গোৎসব কমিটি। উদ্যোক্তাদের মধ্যে অন্যতম তপাই লাহা বলেন, বিশ্বজুড়ে করোনা যেমন অগুনতি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, তেমনই সমাজের অর্থনৈতিক বুনিয়াদ নষ্ট করে দিয়েছে। কর্মহীন বহু মানুষ। এই পরিস্থিতিতে পূজার আয়োজন নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তই এখনও নেওয়া সম্ভব হয়নি। গত বছরের মতো পূজার আয়োজন এই বছর করার কোনও সুযোগ নেই তা বলাই বাহুল্য।
একই সুরে কথা বলেছেন রায়গঞ্জ সমাজ সেবক সংঘের পূজা উদ্যোক্তা সাধণ বর্মণ। তিনি বলেন, এই সময় মানুষের বাড়িতে ত্রাণ সাহায্য পৌঁছনো উচিৎ। সেখানে চাঁদার রসিদ নিয়ে কী করে যাই? তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দুর্গোৎসব কমিটির সদস্যরা নিজেদের সামর্থ্যের মধ্যে থেকেই এবার পূজার আয়োজন করবো মন্দিরে। পুরো মাঠ ফাঁকা রাখা হবে বাচ্চাদের খেলাধুলার জন্য। আলোকসজ্জার আয়োজনও করা হবে না। কোথাও অন্ধকার থাকলে সেখানে টিউব লাইট লাগিয়ে দেওয়া হবে।