চরম দারিদ্র ও অসুস্থতার সাথে লড়াই রায়গঞ্জের প্রৌঢ়ার, মেলেনি আদিবাসী উন্নয়ন প্রকল্পের সাহায্য
দুই কন্যা সন্তান নিয়ে চরম আর্থিক কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন অসুস্থ আদিবাসী মহিলা বাহামনি হেমব্রম। সরকারি সাহায্যও অপ্রতুল। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছে সাহায্যের আর্জি পরিবারের।
Bengal Live রায়গঞ্জঃ রাজ্য সরকারের আদিবাসী উন্নয়ন প্রকল্প থেকে বঞ্চিত রায়গঞ্জ শহর সংলগ্ন সোহারই মোড়ের এক আদিবাসী পরিবার। অসুস্থ অবস্থায় প্রায় অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন বছর ছাপ্পান্নের বিধবা আদিবাসী মহিলা বাহামনি হেমব্রম, তার সাথে রয়েছে তার দুই কন্যা সন্তানও। তাদের একজন বাসন্তী বেসরা সুভাষগঞ্জ বালিকা বিদ্যালয়ের এবারের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী আর অপরজন ওই স্কুলেরই নবম শ্রেনীর ছাত্রী ঝুমা বেসরা।
শর্ত না মানলে ডুয়ার্সে হোটেল-রিসোর্টে থাকার অনুমতি মিলবে না পর্যটকদের
গ্রামের বাড়ি বাড়ি সার্ভে করতে গিয়ে এই পরিবারটির খোঁজ পেয়েছিলেন সরকারি সার্ভে টিম। জানা গিয়েছে, দীর্ঘ দিন আগে সাইকেল মেকার স্বামীর মৃত্যুর পর একমাত্র ছেলেই ছিল বাহামনির পরিবারের আয়ের উৎস। কিন্তু বর্তমানে পরিবার ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছে তার একমাত্র রোজগেরে ছেলে । এবং তার পর থেকেই দুই পায়ে গোদ নিয়ে কার্যত চিকিৎসাহীন অবস্থায় প্রায় অনাহারে দিন কাটাচ্ছে বাহামনি সহ গোটা পরিবার। স্থানীয় পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানলেও এখনো কিছু সুরাহা হয়নি।
অসুস্থ আদিবাসী বৃদ্ধা বাহামনি হেমব্রমের জানিয়েছেন, তার দুপায়ের গোদ বেড়েই চলেছে। তিনি এই রোগে ভুগছেন প্রায় ২৫ বছর ধরে। এখানকার চিকিৎসকেরা বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করানোর কথা বললেও, সেই সামর্থ্য তাঁর নেই। একমাত্র রোজগেরে ছেলে বাড়ি চলে যাওয়ার পর এখন সংসারে আয় বলে কিছু নেই। বাহামনির বড় মেয়ে বাসন্তী বেসরার গলাতেও একই সুর, পরিবারের একমাত্র রোজগেরে দাদা বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ায় খুবই অসুবিধার মধ্যে দিন কাটছে তাদের। পড়াশুনাও প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। রাজ্য সরকারের বিনামূল্যে রেশনের চাল দিয়ে কোনওমতে একবেলা খাওয়া হয় কখনো তাও হয়না। কোনও সহৃদয় ব্যক্তি বা সংগঠন যদি তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে তারা উপকৃত হয়।
“বিশেষ দিন ছাড়া কারোরই আর মনে পড়েনা” – অভিমানী চাঁদিমা রায়
যদিও একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে বহুদিন আগে ওদের একটি ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল, এখন সেখানেই কোনমতে তারা বসবাস করেন। কোনোরকমে মাথার উপর ছাদ আর রেশনের চালে তাদের খাওয়াটুকু হয়ে গেলেও, অসুস্থ বাহামনি হেমব্রমের চিকিৎসার জন্য বহু জায়গায় ঘুরেও এখনও কোনও সুরাহা হয়নি। স্থানীয় ৮ নং বাহিন গ্রামপঞ্চায়েতের পঞ্চায়েত সদস্য প্রধান মুর্মু জানিয়েছেন, বাহামনি হেমব্রমের অসহায়তার বিষয়ে তিনি জানেন, তার বার্ধক্য ভাতা ও চিকিৎসার জন্য তিনি বহুবার রায়গঞ্জ ব্লকে ঘুরেছেন কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি। তিনি এও জানিয়েছেন, প্রয়োজনে পরবর্তীতেও তিনি ওই পরিবারের পাশে দাঁড়াতে তদারকি করবেন।
চরম দারিদ্র ও অসুস্থতার সাথে লড়াইয়ে বাহামনির একমাত্র ভরসা এখন সরকারি সাহায্য কিংবা কোনো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহযোগিতা। এমতাবস্থায় কেউ যদি তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে সেই দিকেই তাকিয়ে বাহামনি সহ স্থানীয় বাসিন্দারাও।