অধীর মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ উত্তর দিনাজপুর কংগ্রেস, মহামিছিলে স্তব্ধ রায়গঞ্জ
অধীরের উপস্থিতিতে যেন প্রাণ ফিরে পেল উত্তর দিনাজপুরের কংগ্রেস। প্রায় ১৫ হাজার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে সোমবার রায়গঞ্জে মহামিছিল করল উত্তর দিনাজপুর জেলা কংগ্রেস। মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্য রাজনীতি, কৃষক আন্দোলন সহ একাধিক ইস্যুতে মুখ খুললেন অধীর চৌধুরী।
Bengal Live রায়গঞ্জঃ সোমবার সড়ক পথে রায়গঞ্জে পৌঁছান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। সাংবাদিক বৈঠকে যোগ দিয়ে মিছিলে পা মেলান তিনি। মিছিল শুরু হয় জেলখানা মোড় থেকে। তবে অধীর চৌধুরী মিছিলে যোগ দেন উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন নিগমের ডিপোর সামনে থেকে৷ জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এদিন মিছিলে যোগ দিতে রায়গঞ্জে আসেন কংগ্রেসের নেতা কর্মীরা। শহর পরিক্রমা করার পর শিলিগুড়ি মোড়ে গিয়ে মিছিলটি শেষ হয়৷ সেখানেই পথ সভায় বক্তব্য রাখেন অধীর চৌধুরী। এদিনের মিছিলে অধীর চৌধুরীর সাথে নেতৃত্বে ছিলেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহিত সেনগুপ্ত সহ অন্যান্যরা৷
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে অধীর চৌধুরী বলেন, এই জেলায় পঞ্চায়েত ভোট হয়নি, পুরসভা ভোট হয়নি। দল ভাঙিয়ে কংগ্রেসকে দুর্বল করা হয়েছে। সামনে নির্বাচন, তাই মানুষকে জানান দিতে চাই, প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সির জেলা কংগ্রেসের ছিল, আছে এবং থাকবে।”
মেদিনীপুরের সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ঝাঁঝালো বক্তৃতায় তীব্র প্রতিবাদ জানান কৃষি বিলের বিরুদ্ধে। কৃষি বিল প্রত্যাহারের দাবি তোলেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী যখন এই বক্তব্য রাখছেন দক্ষিণের জেলায়, তখন উত্তরের এক জেলায় বসে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বললেন, “যখন কৃষি বিল লোকসভায় পাশ হয় তখন আজকের মতো প্রতিবাদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায় ছিল না। প্রথম কংগ্রেসই রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে ট্রাক্টর র্যালির মধ্যে দিয়ে আন্দোলন শুরু করেছিল। আজ দিল্লির বুকে কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে যখন আন্দোলন সারা দেশের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, তখন কি আর মমতা ব্যানার্জী চুপ থাকতে পারেন ?”
অধীর প্রশ্ন তোলেন, এই রাজ্যে কৃষির কী হয়েছে? ন্যুনতম সহায়ক মূল্যে কৃষক ধান বিক্রি করতে পারে? রাজ্যে কৃষক কেন আত্মহত্যা করে? এই রাজ্যের কৃষক কেন সস্তায় ঋণ পায় না, সস্তায় বিদ্যুৎ পায় না?
এই প্রশ্নের উত্তর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিতে হবে। আজ যখন ভারত জুড়ে কৃষক আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে, তখন নিজের রাজ্যে কৃষকদের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে কাটমানি, দুর্নীতির রাজনীতি করলেও এখন তিনি ভাবছেন এই ময়দানে পিছিয়ে থাকলে ক্ষতি। তাই নিজের অস্তিত্ব জাহির করতে চাইছেন।
অধীর চৌধুরী আরও বলেন, “তৃণমূল অন্তর্জলিযাত্রার পথে চলেছে। প্রতিদিন বড় বড় নেতা মন্ত্রী ক্ষোভ উগরোচ্ছে। এতদিন বিরোধীরা ক্ষোভ প্রকাশ করত। আজ মমতার নিজের দলের লোকেরাই ক্ষোভ ব্যক্ত করছে।”
অধীর মনে করেন, “নিজের ব্যর্থতার জন্য আত্মসমালোচনা করে মানুষের কাছে ক্ষমা চাইলে বুদ্ধিমানের কাজ করতেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলায় বিজেপিকে লাল কার্পেট পেতে এনেছিলেন মমতা। বিজেপির দালালি করেছে সারাজীবন ধরে৷ সেদিন যে দল ভাঙানোর খেলা খেলেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, আজ তারই শিকার হতে হচ্ছে তাঁকে।
তৃণমূলে আজ সারা বাংলা জুড়ে ভাঙন চলছে।”
বর্তমান তৃণমূল জামানায় রাজ্য রাজনীতির চরিত্র নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির আক্ষেপ, “যে বাংলায় এতদিন সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি প্রবেশ করতে পারেনি আজ সেখানে হিন্দু-মুসলিমের নামে ভোট, বাঙালি-অবাঙালির নামে ভোট হচ্ছে৷ রাজনীতি হবে ইস্যু ভিত্তিক। বাংলায় রাজনীতির পদস্খলন শুরু হয়েছে।”