পোর্টজিন

সুমন ব্যানার্জির লেখা প্রবন্ধ “শঙ্খ ঘোষ’র কবিতা :: শব্দ রৌরবের মাঝখানে সমুজ্জ্বল আলোক বিন্দু”

Bengal Live পোর্টজিনঃ পোর্টজিন কি? পোর্টজিন একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। প্রতি সপ্তাহের রবিবার এটি বেঙ্গল লাইভের (bengallive.in) এর পোর্টজিন বিভাগ থেকে প্রকাশিত হয়।

suman banerjee bengal live portzine

 

১.একটি প্রজন্মের মধ্যে থেকে যখন ক্রমশ ক্রমশ অপহ্নব হতে চলেছে ঐতিহ্যের চিহ্নগুলি , প্রচণ্ড স্বাধিকার প্রমত্ত আর দেখনদারিতে ভরা একটা সময়ের আবর্তে যখন সবাই নিক্ষিপ্ত হচ্ছি তখন কেউ কেউ এসে দাঁড়ান প্রদীপ হাতে।যেমন – শঙ্খ ঘোষ।একটা নির্বিকার এবং বিচার বিমূঢ় সময়ে দাঁড়িয়ে তাঁর সৃষ্টি হয়ে ওঠে আমাদের কাছে আত্ম-নগ্নায়নের দর্পণ। নিরন্তর প্রশ্ন করতে শেখার সহজ পাঠ। তাঁর কবিতা ধাক্কা দেয় অস্মিতায় আবিল বিবেকবোধকে, মুখোমুখি করে সত্যের ও একই সঙ্গে সুন্দরেরও।

বলার অপেক্ষা রাখে না যে , তাঁর সমস্ত সৃষ্টিই ছুঁয়ে যায় সমকালীন রাজনীতি আর সমাজজীবনের বহুস্বরকে।প্রশ্নহীন অনুশাসন ,ক্ষমতাদর্পী আর বিধ্বংসী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে তাঁর কবিতাই হয়ে ওঠে বলিষ্ঠ আয়ুধ।সস্তার চমক বা স্লোগান সর্বস্বতাতেই তা শেষ হয়ে যায় না, সেইসব কবিতা দায়বদ্ধ থাকে মানুষের ভালোবাসা, মমতা আর বিশ্বাসের প্রতি।কারণ তাঁর কবিতার সমস্ত সুরই গভীরভাবে মানবতায় প্রোথিত। শঙ্খ ঘোষ’র শেষ জীবনে (২০০০ সালের পরবর্তী) লেখা সাতটি কাব্যের একটি করে কবিতাকে আলোচনার জন্য বেছে নিয়েছি।

২.
মহাভারতের বনপর্বের যুধিষ্ঠির ও বক’র (বস্তত ধর্ম) বিখ্যাত কথপোকথনকে আধারিত করেই “জলই পাষাণ হয়ে আছে” কাব্যের ‘বক’ কবিতাটি রচিত। মিথকে তিনি বিনির্মাণ করেছেন সমকালীন প্রেক্ষিতে।যে কবিতার মধ্যে উঠে এসেছে প্রশ্নহীন, চিন্তা চেতনা বিযুক্ত , অনুকরণসর্বস্ব সময়ের কথা।বক প্রশ্ন করছে ‘সুখী’ কে ? উত্তর আসছে যে কিছুই না জানতে চেয়ে সবকিছু মেনে নেয় সেই সুখী। অর্থাৎ যাঁর মধ্যে নেই কোন কিছুকে তলিয়ে দেখার আগ্রহ। দ্বিতীয় প্রশ্ন ‘পথ’ কাকে বলে ? উত্তর এল তুমি যা ইশারা কর সেটা ছাড়া ত্রিভুবনে কোন পথ নেই।অর্থাৎ নেই নতুন কোন কিছু আবিষ্কারের আগ্রহ, আছে শুধু অন্ধ আনুগত্য। তৃতীয় প্রশ্ন বার্তা কী ? উত্তর এল যেদিকে যাই বিলয় তোমারই হাতে।অর্থাৎ বীরের মত কোন কিছু করে মৃত্যু বরণ করার গৌরব বলে কিছু নেই।শাসক যদি তাকে মৃত্যু দেয় সেটাই সে মাথা উঁচু করে গ্রহণ করবে দ্বিধাহীনভাবে : এতটাই প্রভুভক্তি। শেষ প্রশ্ন আশ্চর্য কী ? উত্তর এল —

“তোমার আদেশমতো না এগোলে তুমি তাকে অনায়াসে কর গুমখুন / তবুও তোমাকে আজও ধর্ম বলে মানে লোকে কিমাশ্চর্যমতঃপরম্।”

প্রভুত্বকামী শক্তি বা আধিপত্যকামী রাষ্ট্রশক্তি পছন্দ করে না কোন ভিন্ন মত, ভিন্ন রূচি কোন প্রশ্ন ও বিরুদ্ধাচরণ।যদি কেউ তা করতে সাহস দেখায় তাঁর কন্ঠ নির্মমভাবে স্তব্ধ করা হয়। তৈরি করা হয় চরম আতঙ্ক পাণ্ডুর পরিবেশ।এই কবিতার নিহিত ব্যঞ্জনা ও শ্লেষ যুগে যুগে সমস্ত মুক্তচিন্তা বিরোধী ফ্যাসিস্ট শক্তিরই ম্যানিফেস্টো।

৩.
ক্ষমতাদর্পী রাষ্ট্রশক্তি সবসময় জিততে চায়।সে অন্যকে স্বপ্ন দেখায় জয় হবে জয় হবে বলে। কিন্তু আসলে সে চায় স্তাবক, প্রশ্নহীন আনুগত্য।সেই প্রশ্নহীন আনুগত্যেরই পোশাকি ও ব্যবহারিক রূপ হল দলতন্ত্রের অনুশাসন।সেখানে সত্যও মিথ্যা আর মিথ্যাও সত্য হয়ে যায় অবলীলায় —

“তুমি বলেছিলে দল হবে দল হবে / দলের বাইরে থাকবে না কিছু আর / অনুগত হলে সহজে পেরিয়ে যাবে / দুর্গম গিরি দুস্তর পারাবার।”

কিন্তু মানুষের সম্মিলিত শক্তি কাছে তুচ্ছ হয়ে যায় রাষ্ট্রশক্তির পরাক্রম। মানুষ অত্যাচারিত ও পীড়িত হতে হতেই হয় জোড়ালোভাবে সংঘবদ্ধ ও বিদ্রোহী। তখনই ভিত নড়ে যায় ক্ষমতাতন্ত্রের।শাসক তখন মুখোমুখি হয় রূঢ় বাস্তবের যে কোন জয়ই চিরন্তন নয় সর্বোপরি মানুষকে বাদ দিয়ে নয়।কবি তির্যক ভঙ্গিতে বলেন —

“তুমি বলেছিলে যার হবে তার হবে / তোমার ই মোহরে চলমান সংসার –/ এই অবেলায় কখনো ভাবিনি আগে / জয়ের ভিতরে এত দুর্বার হার !” (‘তুমি বলেছিলে জয় হবে জয় হবে’)

৪.
হত দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা পাঁচ বছরের উশকোখুশকো চুল ইজের পরিহিত ধূপ বিক্রেতা মেয়েটির থেকে কেউ ধূপ নেয়নি।সবাই বলেছিল না।তাকে তাচ্ছিল্যের সঙ্গে তাড়িয়ে দিয়ে বলেছিল ‘ভাগ্’।সেই করুণ মুখটি দেখে তৎক্ষণাৎ ঘরে থাকা আদরে আহ্লাদে বড় হওয়া শিশুর মুখ মনে পড়ে গেছিল কবির।মনে হয়েছিল যে —

“ঘরে-রেখে-আসা শিশুটির মুখখানা ঝলক দিয়ে জেগে ওঠা ছাড়া / আর কোনো বিস্ফোরণ ঘটেনি কোথাও কোনোখানে / আর কোনো চুক্তিও না।” (‘বিস্ফোরণ’)

এমন এক রাষ্ট্র ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে আমরা চালিত হচ্ছি, এমন স্বাধীনতা পেয়ে আমরা আহ্লাদিত যে স্বাধীনতা এখন রাষ্ট্রের সমস্ত শিশুর খাদ্য, শিক্ষা ও বাসস্থানের ন্যূনতম চাহিদাটুকু পূরণ করতে অক্ষম। পরিবারের গ্রাসাচ্ছাদনের জন্য তাকেই পথে নামতে হয়।অথচ এমনটা তো কাঙ্ক্ষিত ছিল না ! একটা নীরব অথচ সরোষ বিস্ফোরণে কবির অন্তর্জগতটা কেঁপে উঠে ছিল। যেখানে প্রতিবাদের সঙ্গে মিশে ছিল একরাশ ঘৃণা ও লজ্জাও।

রাজনীতির পাশা খেলা ভূখণ্ডকে বিভাজিত করে।মানুষ হয় বাস্তুহারা।শিকড় ছিঁড়ে চলে আসার যন্ত্রণা আমৃত্যু তাঁকে কুরে কুরে খায়।নাড়ির নিবিড় টান, অপরিসীম মমতা ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জড়িয়ে থাকে নিজের জন্মভূমির মাটির প্রতি।ওপার বাংলা (পূর্ব পাকিস্তান অধুনা বাংলাদেশ) ছেড়ে দেশভাগের সময় এপার বাংলায় চলে আসার যন্ত্রণা, দুঃখ মর্মরিত হয়েছে তাঁর বহু কবিতায় যার মধ্যে এটি অন্যতম।মনোমুকুরে ভেসে ওঠে কত স্মৃতি ! বুকের মধ্যে অপার মায়া বিছিয়ে রেখেছে জন্মভূমি ,যার শব্দ স্পর্শ গন্ধ প্রতিনিয়ত স্পন্দমান হয়ে ওঠে —

“মেঘনার মধ্যরাত, ডেকের উপরে একা তুমি — / তোমার দুচোখভরা আমার নিরালা জন্মভূমি। … দুধার সজল চুপ, তার মাঝখানে তুমি একা / দাঁড়াও, দাঁড়িয়ে থাকো।ঘুমোক, ঘুমোতে চায় যারা। / আবারও জেগেছে ঢেউ, ডেকের উপরে জাগো তুমি / তোমাকেই জানি আজ আমার বিষাদজন্মভূমি।” (‘বিষাদজন্মভূমি’)

সমপ্রতীতি সঞ্চারক একটি কবিতা পাই ”বহুস্বর স্তব্ধ পড়ে আছে” কাব্যের প্রথম কবিতা ‘সীমান্ত’-তে। কাঁটাতার আলাদা করেছে দুই রাষ্ট্রকে কিন্তু বাতাসকে কি আলাদা করা যায় ? বুকের ভেতর যে শ্বাস প্রশ্বাস চলছে তা তো অখণ্ড বাংলাদেশেরই। এখানে যে সোনার ফসল ফলে তা কবির কাছে ‘অলৌকিক শস্য’। বাংলাদেশ আসলে একটা আইডিয়া : নদী, মাঠ, জঙ্গল, পাহাড় আর ভাষা এক আশ্চর্য স্বপ্নিল মমতায় ভরপুর —

“সে-বাতাস বয়ে যায় আজও এ আমার দেশ জুড়ে / তোমারও দেশের শ্বাস কান পেতে যেন শোনা যায়। / প্রহরী-নজর ছেড়ে এভাবে অবাধ যাওয়া-আসা — / এ-যাওয়া-আসার কোনো আদি নেই, নেই কোনো শেষও / হয়তো জানো না — তাই লিখে রাখি কীভাবে আমাকে / না-থাকার কণা দিয়ে আরো বেশি জড়িয়ে রেখেছ।”

৫.
এমন এক প্রতিবাদহীন ও সংবেদনহীন ব্যবস্থা আমাদের গ্রাস করছে যেখানে আছে শুধু পুঁজির উল্লাস আর বাচালতা।খুন, হিংসা, বর্বরতা মানবতার অপমৃত্যু দেখেও আমাদের আশ্চর্য নীরবতা ! আসলে সবাই নিজেকে বন্দি করে রেখেছে এক একটা খাপে, একে অন্যকে মেপে নিচ্ছে প্রতিনিয়ত।এই নির্লজ্জ সুবিধাবাদকেই কবি প্রতিকায়িত করেছেন এই মিতায়তনিক কবিতাটিতে —

“জলতলে জাল ফেলে নরমুণ্ড উঠে আসে কটি। / ‘ও কিছুই নয়’ ব’লে / হিতব্রতী / আমরা ফিরিয়ে নিই মুখ। / উৎসব-আসরে বসে মনে মনে বলি : / ‘আপাতত / যে ভাবে চলছে, চলুক।’ ” (‘দর্শন’)

এইভাবেই তৈরি হয় একটা আদর্শ পঙ্গু সমাজ ও চলচ্ছক্তিহীন নিরুত্তাপ বুদ্ধিজীবী।

”প্রতি প্রশ্নে কেঁপে ওঠে ভিটে” কাব্যের ‘ছেলের তর্পণ করছে বাবা’ কবিতাটি শুধু করুণ রসে আচ্ছন্ন করে না, আমাদের অস্তিত্বের ভিতটিকে ধরে নাড়িয়ে দেয়।যে কবিতাটির মধ্যে একটি ঔপনিষদিক চরিত্র মূর্ত ও চঞ্চল হয়ে ওঠে বিপন্ন বাস্তবের প্রেক্ষিতে। একজন মানুষ একাকী বিবেকের মুখোমুখি হয় তখনই মনের অবতলে পুঞ্জীভূত অপরাধবোধ তাঁকে কুড়ে কুড়ে খায়।কোন কোন মৃত্যু শোকজাত যন্ত্রণা নিছকই ব্যক্তিগত হয়ে থাকে না, ব্যক্তিক পরিসর ছাড়িয়ে তা তৈরি করে অনেক প্রশ্ন।বাতাস যখন প্রবল ঝড় হয়ে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে তখন তা ক্রমাগত ধাক্কা দিতে দিতে চুরমার করে দেয় ভেতরটাকে।আর তখন হিম উদাসীনতায় প্রশ্নহীন থাকতে পারি না। একজন রাজনৈতিক মানুষ কতটা রাজনৈতিক ও কতটা সে নিজের মত থাকতে পারে পার্টির অনুশাসনের বাইরে গিয়ে ? এই ‘মৃত্যুমুখী দেশে’ আর কোন্ মৃত্যুই বা আছে তারচেয়েও কম মৃত্যু ? এইসব প্রশ্ন যেন করছে নচিকেতা।

“প্রশ্ন করে নচিকেতা।প্রতি প্রশ্নে কেঁপে ওঠে ভিটে। / নচিকেতা প্রশ্ন করে, অন্যমনে থেকে তার উত্তর পারিনি কিছু দিতে / হৃদয়ে নিইনি কোনো দায় / বলেছি বরং অনাদরে / ‘চল্ তোকে দিয়ে আসি একাকীর দোরে।’ “

এইসব প্রশ্নে অভিঘাত তৈরি হয় বুকের মধ্যে।অপরাধবোধে নত হয়ে আসে মাথা।গঙ্গার ‘পিঙ্গল জলে’ ছেলের তর্পণ করে বাবা। পিঙ্গল জল শব্দবন্ধটি যথেষ্ট ব্যঞ্জানাঋদ্ধ। পিঙ্গল অর্থাৎ হলুদ বা পাণ্ডুর।জলের মধ্যে নেই সেই সজীবতা ও শুদ্ধতা। মানুষের প্রতিকারহীন অন্যায় ও ব্যভিচারের ছায়ায় জলও দূষিত হয়ে গেছে।তবু সেই জলেই তর্পণ করতে হয় অসহায় পিতাকে।একজন পিতার কাছে চরম আকাঙ্ক্ষিত সন্তানের সর্বোচ্চ সাফল্য ও পূর্ণতা।পিতার অবর্তমানে পুত্রই করে তাঁর পরলোকগত আত্মার উদ্দেশে তর্পণ। কিন্তু সন্তানের জীবনদীপ যখন অকালে নির্বাপিত হয়, সন্তানের মৃত্যু যখন পিতাকে অনেক বিবেকী প্রশ্নের সামনে এনে দাঁড় করায় তখন একজন পিতার বুকের ভিতর অপূরণীয় শূন্যতায় যে চাপা হাহাকার চলে, সে যখন পুত্রের তর্পণ করে তখন তার চেয়ে হৃদয়বিদারক আর কীইবা হতে পারে ?

“সব প্রশ্ন ফেলে রেখে আচম্বিতে গিয়েছে সে সরে। / তার পরে কিছু দূর দেখা যায়, কিছু যায় না-বা। / শব্দহীন অন্তরালে আবছা এক দৃশ্য জেগে থাকে : / অপরাধভারে কিছু নত, / প্রসারিত দুই হাত অঞ্জলিতে বাঁধা, / গঙ্গার পিঙ্গল জলে আজানু দাঁড়িয়ে আজ ছেলের তর্পণ করছে বাবা।” (‘ছেলের তর্পণ করছে বাবা’)।

ক্ষমতার জন্য ক্ষুধার্ত এই সময়ে, প্রচন্ড শীৎকার আর শব্দ রৌরবের মধ্যে দাঁড়িয়ে তাঁর কবিতা পড়লে আলো ঝলমল করে ওঠে, এক বিকল্প শিলালিপির সন্ধান দেয় শঙ্খ ঘোষ’র কবিতা।।

তথ্যসূত্র (আকর গ্রন্থপঞ্জী)::—-
১. শঙ্খ ঘোষের কবিতাসংগ্রহ ৩, দে’জ পাবলিশিং কলকাতা, প্রথম প্রকাশ মাঘ ১৪২১, পৃষ্ঠা — ৩৫, ৫৭, ১১৬, ২৪৩, ২৭০, ২৯৫, ৩৫৩।

 

 

 

 

কীভাবে লেখা পাঠাবেন?
নীচে উল্লিখিত হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার কিংবা ইমেল আইডিতে লেখা পাঠাতে পারবেন।
হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার~ 9635459953
ইমেল আইডি~ bengalliveportzine@gmail.com
লেখার সঙ্গে নিজের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর এবং একটি ছবি পাঠানো আবশ্যক।
ভ্রমণ কাহিনীর সঙ্গে নিজের তোলা দুটো ছবি পাঠাতে হবে।

Related News

Back to top button