পোর্টজিন

তুহিন কুমার চন্দের কলমে গল্প “দুধ”

story writer tuhin chanda

 

Bengal Live পোর্টজিনঃ সাত বছরের মিঠি এখন রোজ দুধ খেয়ে নেয়, কোন বায়না করে না একদম।
মা ভীষণ খুশী হয়ে মিঠিকে একটা টেডিবিয়ার কিনে দিয়েছিলো।
দিনকয় না যেতেই টেডি গেল হারিয়ে। মিঠির কোন তাপ উত্তাপ নেই সে জন্য।
আগে মা, মিঠি দুধ খেয়ে নে মা, খেয়ে নে মা বলে বলে অস্থির হয়ে যেতো। কিছুতেই মিঠি দুধ খেতে চাইতো না। এখন ভোরবেলায় পড়তে বসার আগে মিঠি মা’কে তাড়া দিয়ে দুধের গ্লাস তার টেবিলে এনে রাখে। মা অবাক হয়ে যান এই পরিবর্তনে।

আজ রবিবার। মিঠি আজও মা’কে তাড়া দিয়ে দুধের গ্লাসটা হাতে নিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে সোজা নেমে এলো রাস্তার পাশের বস্তিতে। মায়ের সন্দেহ হয়েছিল আগেই। মা মিঠির পিছু পিছু চুপচাপ হাঁটতে লাগলো। একটা ভাঙ্গাচোরা ছোট্ট নিচু মতোন ঘর,চারপাশে পিচবোর্ড আর সিমেন্টের বস্তা দিয়ে কোনভাবে ঢাকা দেয়া আছে। প্রচন্ড দূর্গন্ধ চারদিকে। মা আর সহ্য করতে না পেরে মিঠিকে বেশ জোরে ডাকলো।সিমেন্টের পর্দা সরিয়ে মা’কে দেখেই মিঠি ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেললো। মা খুব কষ্ট পেলেও তাকে বলল তুমি এখানে কেন?
মিঠি দুধের গ্লাসটা মাটিতে রেখে মা’কে জড়িয়ে ধরে বলল- একবার দেখে যাও মা।
মা শাড়ির আঁচল নাকে চাপা দিয়ে উঁকি মেরে দেখলো মিঠির টেডি একপাশে রাখা আর একটা মিঠির বয়সী মেয়ে কয়েক মাসের বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বসে আছে।

মিঠি বলল- জানো মা ঐ বুনুটাকে জন্ম দিয়েই ওদের মা মারা গেছে। ঐ বাচ্চাটা দুধ পাবে কোথা থেকে মা। তুমি যে দুধটা আমায় খেতে দাও আমি সেই দুধ যে ছোট্ট বুনুটাকে রোজ দিই মা। তুমি কি রাগ করেছো আমার ওপরে?
মা মিঠিকে দুহাত দিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল- না মা,আমি খুব খুশী হয়েছি।কাল থেকে বড় গ্লাসে দুধ দেবো আর একটু সকাল সকাল ওদের দিয়ে যেও।
ভাঙ্গা ঘরের ভেতর থেকে সেই কয়েক মাসের বাচ্চাটার প্রান খোলা হাসির শব্দে সারাটা বস্তি যেন আনন্দে দুলে উঠলো।

Related News

Back to top button