কর্ম – বর্ণালী সাহা
Bengal Live পোর্টজিনঃ পোর্টজিন কি? পোর্টজিন একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। প্রতি সপ্তাহের রবিবার এটি বেঙ্গল লাইভের (bengallive.in) এর পোর্টজিন বিভাগ থেকে প্রকাশিত হয়।
পড়ে গেল! পড়ে গেল! পলকের মধ্যে নির্মীয়মাণ দশতলা থেকে মাটিতে আছড়ে পড়ল বছর ২১-এর এক যুবকের দেহ। নীচের কর্মরত শ্রমিকরা ছুটে এল। ভিড় ঠেলে এক শ্রমিক যুবতী এগিয়ে এল। রক্তাক্ত শরীরটির দিকে তাকিয়ে আর্তনাদ করে সেও মূর্ছা গেল।
কারা এরা ! কী পরিচয় ! কী সম্পর্ক !
ধরে নিলাম তাদের নাম অশোক ও রেবা। ধরে নিলাম তারা শহরের এই মুটেমজুরদের বস্তিঘরবাসী এক দম্পতি। তাদের গল্প জানতে হলে যেতে হবে ২ বছর আগের কালিমবাগ গ্রামে।
– রেবা, এই পোড়ারমুখী রেবা ! কোথায় মড়েছিস রে ?
প্রাচীরের আড়ালে যুগলের নির্লিপ্ত আলিঙ্গন থেকে নিজেকে সরিয়ে নিল ভীত অষ্টাদশী।
– মামী ডাকছে! তুমি যাও তাড়াতাড়ি, কেউ চলে এলে…
– আগুনে পুড়ে মরার বিধান হবে, নাকি জ্যান্ত কবর ?
– অশোক! এসব অলক্ষুণে কথা না বললেই নয় ?
– যে যাই বলুক রেবা, তুমি আমার, শুধু আমার !
রেবাকে আরো কাছে টেনে নেয় অশোক।
-তুমি যাও! যাও!
প্রায় ধাক্কা দিয়ে অশোককে সরিয়ে দেয় রেবা।
– এইতো মামী, যাই…
রেবা হাসান। পড়াশোনা ? গরীব, অনাথ ও মামার অন্ন ধংসকারী মেয়ের জন্য সেটি বিলাসিতা বলে মনে করেছিলেন মামী। সংসারের যাবতীয় সমস্ত কাজ তাকেই করতে হয়। মামা তার প্রতি সদয়, তবে স্নেহশীল নন তেমন। নিজের দিদির মেয়ে বলে হয়তো ফেলে দিতে পারেননি! এই অবহেলার অন্নে জীবনধারণ করার মাঝে তার জীবনে ভালোবাসার ডালি নিয়ে হাজির হয় অশোক। এই সংসারে যে কেউ তাকেও ভালোবাসে এ নাহলে অজানাই রয়ে যেত রেবার। অশোক গ্রামের এক সাধারণ দিনমজুরের ছেলে। পড়াশোনা সেই স্কুলের গণ্ডীর বাইরে যায়নি। বাপের মতো সেও দিনমজুরি করেই সংসার চালাবে এই ভবিতব্য। সংসারে যাদের ভালোবাসার মানুষ কম তারা যেটুকু খড়কুটো পায় তাকেই জাপটে জড়িয়ে ধরতে চায়। দুজনে ভালোবাসে, উজার করে ভালোবাসে। তারা যত কাছে এসেছে তত দূরে যাবার ভয় তাদের খুন করেছে! রেবার মামা তার বিয়ে ঠিক করেন গ্রামের আরেক ছেলে সাকিনের সাথে। সে তাদের ধর্মের। সাকিন শহরে কাজ করে দিনমজুরির। ঠিক হয়েছে সামনের সপ্তাহে বিয়ের পর স্ত্রীকে নিয়ে সে শহরে চলে যাবে। অশোক রেবা ঠিক করে, বিয়ের দিন তারা পালিয়ে যাবে। কিন্তু হায় ভাগ্য ! রেবার বিয়ের দিন সকালে গাছ থেকে পড়ে গিয়ে পা ভেঙে শয্যা নেয় সে। চোখের জলে শাড়ি ভিজিয়ে আর মামীর গালমন্দ ও দু চার ঘা চড় খেয়ে সাকিনকে কবুল করে সে। পরদিন রেবাকে নিয়ে শহরে চলে আসে সাকিন। সে রেবাকে সমস্ত সন্মান দিয়ে রাখে, তাকে কখনো জোর করে না কিছুতেই। এভাবেই দু মাস যায়, ওদিকে সুস্থ হয়ে ওঠে অশোক। শহরে কাজ নিয়ে আসে। রেবার ঠিকানা খুঁজে বের করে সে। রেবার সাথে দেখা করে না অশোক। তার মনে রেবার প্রতি ঘৃনা এখন। সে ভেবেছিল তাকে ছাড়া অন্য কাউকে রেবা বিয়ে করবে না কিছুতেই। বরং বিয়ের দিন রেবার আত্মহত্যার খবর তাকে খুশি করতো হয়তো! একদিন রান্নার সময় হঠাৎ রেবার মনে হয় জানালার বাইরে দাঁড়িয়ে কে তাকে দেখছে! ভীতিগ্রস্ত হয়ে তাকায় রেবা। নিমেষে সরে যায় এক অতিপরিচিত অবয়ব। তার চিরসুখের বার্ততাবহ সেই মুখ দেখে অজানা এক আশঙ্কা ঘিরে ধরে তাকে…
ঘটনার দুদিন পর একদিন রাত্রে সাকিন ঘুমিয়ে পড়েছে অনেক্ষণ আগে। রেবা বাসন মাজছিল বাইরের কলতলায়। হঠাৎ সজোরে কিছু আছড়ে মাটিতে পরার শব্দ হয়। রেবা ছুটে গিয়ে দেখে তার বিয়ের বাঁধানো সাজানো ছবিটি মেঝেতে টুকরো হয়ে পড়ে আছে। তারপর সামনে তাকিয়ে বুকের রক্ত শুকিয়ে যায় রেবার। সাকিন বিছানায় চিৎ হয়ে পড়ে আছে। তার বুক ধারালো ছুড়ি দিয়ে এফোঁড়ওফোঁড় করা। রক্তে ভেসে যাচ্ছে চারদিক। পাশে সেই রক্তাক্ত ছুড়ি হাতে অশোক তার দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃৃষ্টে। মুখে তার পাশবিক হিংস্রতা। গলা শুকিয়ে আসে রেবার। উন্মাদের মতো হেসে ওঠে অশোক।
– রেবা, তুমি শুধু আমার ! বলেছিলাম তো আমি, শুধু আমার তুমি। তুমি কীভাবে অন্য কাউকে বিয়ে করলে ? কীভাবে? কীভাবে!
চিৎকার করে ওঠে অশোক। ভীত রেবা কোনক্রমে গলায় জোর এনে উত্তর দেয়,
-আমি বাধ্য হয়েছিলাম অশোক…
– না! তুমি আমাকে ঠকিয়েছো আর তার শাস্তি পাবে তুমিও!
বলে ছুড়ি উঠিয়ে রেবার দিকে এগিয়ে যায় অশোক। হঠাৎ ঝুঁকে অশোকের পায়ের কাছে বসে পড়ে রেবা,
-আমি অপরাধী, কিন্তু তোমার সন্তান তো নয়! আমি তোমার সন্তানের মা হতে চলেছি অশোক। সাকিন এসব কিছু জানতো না। আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক ছিল না! তুমি ওকে কেন মারলে! কেন ?
কেঁদে ওঠে রেবা। আশোকের হাত থেকে পরে যায় ছুড়ি। বসে পড়ে সে। রেবাকে জরিয়ে ধরে কেঁদে ফেলে।
– আমি কী করলাম রেবা! এবার এবার আমি কী করবো! আমিতো মরতে চেয়েছিলাম তোমাদের মেরে। কিন্তু এখন আমি বাঁচতে চাই। তোমাকে নিয়ে আমাদের সংসারে!
-কিন্তু, তুমি এক নিরপরাধকে হত্যা করেছো অশোক! এর শাস্তি তুমি জানো! তুমি পালাও, তুমি পালাও।
-তুমিও চলো আমার সাথে আমরা নিজেদের সংসার করবো! চলো, রেবা চলো রাতের বাকি নেই।
রাতের অন্ধকারে পালিয়ে গেল দুজন অন্য শহরে। অন্য নামে যোগ দেয় দিনমজুরের দলে। পুলিশ তাদের খোঁজ পায় না। তাদের ছেলে হয় একটি। এভাবে চলে এক বছর। একদিন দশতলার ছাদের কাজের সময় হঠাৎ অশোক দেখে তার সামনে বসে আছে সাকিন! চমকে ওঠে অশোক! ছিটকে যায় ছাদের ধারে। এক পা এক পা করে তার দিকে এগিয়ে আসে সাকিন। বলতে থাকে,
– আমার কী দোষ ছিল অশোক ? আমাকে কেন মারলে? বলো অশোক, বলো!
– আমি… আমি…আ……..
ছাদের শেষ প্রান্তে থেকে উলটো দিকে শূন্যে ছিটকে যায় অশোক।
রক্তাক্ত মৃতদেহের চারদিকের ভিড় সরিয়ে কোনক্রমে এগিয়ে আসে রেবা। ভয়ে আর্তনাদ ঠেলে উঠে আসে তার ভেতর থেকে। রক্তাক্ত অবস্থায় অশোকের জায়গায় শুয়ে সাকিন। তার দিকে তাকিয়ে হাসছে!
কীভাবে লেখা পাঠাবেন?
নীচে উল্লিখিত হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার কিংবা ইমেল আইডিতে লেখা পাঠাতে পারবেন।
হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার~ 9636459953
ইমেল আইডি~ bengalliveportzine@gmail.com
লেখার সঙ্গে নিজের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর এবং একটি ছবি পাঠানো আবশ্যক।
ভ্রমণ কাহিনীর সঙ্গে নিজের তোলা দুটো ছবি পাঠাতে হবে।