‘চৌর্যবৃত্তি’ – অর্নেশ ভট্টাচার্য্য

Bengal Live পোর্টজিনঃ পোর্টজিন কি? পোর্টজিন একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। প্রতি সপ্তাহের রবিবার এটি বেঙ্গল লাইভের (bengallive.in) এর পোর্টজিন বিভাগ থেকে প্রকাশিত হয়।

আজকাল দেশে এত অভাব পড়েছে যে চোরেরা লোকের বাড়ির বাগানে সবজি চুরি করতেও দুবার ভাবে না৷ আরে বাবা চুরি করবি কর বীরের মতন সেটা মানা যায় কিন্তু চুরি করতে এসে রেখে-ঢেকে; পেঁপে আর চিচিঙ্গা৷ সত্যি বলতে এটা যে কখনও আমার মধ্যে প্রথিত হয়নি এমন বলাও অসহনীয় আর আলো জ্বালিয়ে দিতেই মার দৌড় মশলা ফেলে, তাও কিনা পাঁচিল টপকে নিজের চাগিয়ে কাপড়; তাকে ছিঁচকে চোরই না হয় বললাম৷ তবে আজ পেঁপে নিলো কাল হয়ত ঝেঁপে নেবে৷ ছোটবেলায় স্যারের কাছে বেদবাক্য সর্বজনবোধ্য প্রবাদ শুনেছি ‘চুরিবিদ্যা মহাবিদ্যা যদি না পড়ো ধরা’ সেই আর কি৷ এবার আঁকি আমার চৌর্যবৃত্তির ইতিবৃত্ত তার জন্য কম্পাস লাগবে না৷

চোরের কথা বলতে গেলে সেই আদি বসতি থেকে শুরু করে নতুন বসতবাটি অবধি দাঁড় টানা যায়৷ এই ধরুন যারা ছোটবেলা থেকে চোরের কলকব্জা রপ্ত করেছে তারা হঠাৎ করে একদিন কোন বনেদী বাড়িতে চুরি করতে গেলে এই আমার কথাই বলছি৷ আমি কিন্তু পেশাদার চোর নই, চুরি করাও আমার অভ্যেসে নেই তবুও রাতবিরেতে আবডালে লুকিয়ে থেকে কারোর বাড়ি চুরি করতে গিয়ে আমার যে পরিমাণ রক্ত খরচ হচ্ছে তার দাম কে দেবে? আর ‘টু’ শব্দ হলেই তো সব ঘটি-বাটি-চাটি৷ চুরি করতে পারিনি বলে কেউ নিশ্চয়ই আমাকে নোবেল দেবে না হয়ত দেবে মুড়ো ঝাঁটা বা লাঠি বা জমজমাটি অন্য কিছু৷ তবে চোর বেটা একবার পার্কের ঝোপে এক জোড়া শালিককে প্রেমলীলায় মত্ত দেখে তার ব্যাগ হাতাতে গিয়ে তার চুরি একেবারে গলায় ছুড়ি হয়ে বিঁধলো, সে কি আর জানতো ও লীলা খেলাকে পাহারা দিচ্ছে কিছু জটায়ুর দল৷

পুলিশ এসে নাকি বলেছে চোর তো তা বলে কি তাদের সম্মান নাই!! সেইজন্যই তাকে এক বিশেষ সিঁধকাটি দেবে পুরস্কারস্বরূপ; সেটা লোহার উপর স্টিলের পাত, অনেকে সেটা নিতে পারেনা, যেমন খাসা তেমন মজবুত৷ তারপর থেকেই চোরেদের সমস্যা কিছুটা হলেও কমেছে৷ আচ্ছা আমার একটা প্রশ্ন চোর সর্দারদের কাছে, এই যে তারা তাদের ছেলেদের এতরকম চৌর্য পন্থা শেখায় পালাবার পন্থা শুধু দৌড়ানো ছাড়া আর কিছু শেখায় না কেন? যা কিছু শিখিয়েছে একটু আধটু ওই যে এক ওস্তাদের চুরিবিদ্যা যা মহাবিদ্যার অষ্টকলা তাই সমাজের কিছু সেরা লোক তাকে মাথার মুকুট বানিয়ে বন্ধক রেখেছে৷ দ্বিতীয় প্রশ্ন: চোরেরা তো চুরি করে কোন দলের হয়ে বা নির্দল যাই হোক তাদের আলাদা ইউনিফর্ম নেই কেন? আছে বলতে ওই তেল চিটচিট গেঞ্জি আর হাফ বারমুডা প্যান্ট তাও পিছন সামনে ছেঁড়া৷

গরমে সেটাও না থাকলে কোনো ললনা যদি দেখে ফেলে তাহলে খাটের বাটাম পেটা করে চোরের চুরি করার আগেই তার ইন্তেকাল ফরমাবে৷ অন্ধকার মানেই কালিমা তা এমন নয় যে মর্মভেদী দৃষ্টিভঙ্গীতে চোর তার সঙ্গীকে বলে যা চুরি করে আন তো এখন তোকে কেউ দেখতে পাবে না, সে হয়ত নিজেকে কালোতে কালোময় করে ফেলেছে শুধুমাত্র চুরির জন্য, তাহলে ভাবুন তো চুরি তাকে কতটা স্নেহময় করে তুলেছে৷ তবে দিনের বেলায়… দিনের বেলাতে যদিও চোরের খুব একটা উপদ্রব হয় না যদি ‘ডাকাতিয়া বাঁশি’ হয় তাহলে তাতে কান না দেওয়া আর ঝাঁপ বন্ধ করা বাঞ্ছনীয়৷ তবে চুরির জন্য যে দারিদ্রতাই দায়ী এমন নয় ক্ষুধা অতিরিক্ত স্নেহ তাকে বিপথে চালনা করতে সক্ষম৷ এতো গেল চোরের কথা এবার আসি পকেটমার কথায়৷ চোরের যাও বা হয় পকেটমারদের তাও হয় না কারণ আজকাল বাসে ট্রেনে পকেটে হাত ঢুকিয়ে কি একটা শক্ত ট্যাবলেটের পাতার মত জিনিস বেরোয় কি যেন বলে কার্ড আশা করি বিয়ের কার্ড নয় চোর ভাবে নাহলে লোকের হয়ে ওই সেখানে গিয়ে নিমন্ত্রণ রক্ষা করে আসতো৷ ও বাবা এটা তো ক্রেডিট কার্ড এটা দিয়ে কি হবে!

এতক্ষণে হয়ত রটে গিয়ে কার্ড lock হয়ে গেছে যার খোয়া গেছে৷ চুরি কি শুধু চোরেরা করে মশারা তাহলে কি দেয় সুড়সুড়ি!! তারা যে আমাদের গ্রীবায় হস্তে পদে যখন তখন দংশন করে রুধির পান করে না বলে; সেটা চুরি নয় বুঝি আর আমরা তাকে বাধা দিতে চপেটাঘাত করি৷ তবে চুরি জিনিসটা খুব আকর্ষণীয় যতটা প্রেমও নয় একজনার দেখে আরেকজনের ইচ্ছে জাগে, আমি বলছি চুরির কথা!!! স্থান-কাল-পাত্র-ভেদে যখন তখন চুরি করা যায় ইচ্ছে হলেই… একবার হয়েছে কি; বালিগঞ্জে ভরদুপুরে ছাতা মাথায় করে এল এক চোর, ছাতা কারণ রবির খরতাপ৷ বাড়ির রেনপাইপ বেয়ে দক্ষিণের ঝুলবারান্দায় ক্যান্টিলিভার ধরে কার্নিসে পা রেখে উঠে যায় দোতলার ছাদে; চুরি করতে নয় মিষ্টি খেতে সঙ্গে একভাঁড় রসগোল্লাও নিয়ে গেছে, রোদে যে ছাতা এনেছিল সেটা ভুলবশত পড়ে আছে৷ তা বলি শুভ বিজয়ার অনাহুত অতিথি সে তো বুঝতেই পারছি তা বলে চাঁদিফাটা রোদ্দুরে মাথার ঘিলু শুকিয়ে একটু বোধহয় ঠান্ডা খেতে এসেছিল ভাবলো শুধু ঠান্ডা বাতাস খাব পেটে তো কিছুই প্রবেশ হবে না, তারা তো নেই; থাকলে নিশ্চয়ই কিছু দিতেন তাই তাদের কর্তব্য চোরেরাই পালন করে দিল, ফ্রিজ খাঁ-খাঁ৷ অতঃপর এই কীর্তিতে পাড়ার লোকে খাপ্পা এই মারে ওই মারে, সে পরের কথা৷ মিষ্টি খেয়ে পেটের ব্যামো করে দোকানে দুটাকার ওষুধ কিনতে গিয়ে ধরা পড়ে চোরের হয়েছিল মরার উপর খাঁড়ার ঘা যা ওষুধেও বোধহয় সারেনি৷

আচ্ছা সে যদি চোরই হয় তাহলে একটু ভদ্রবেশেও তো আসতে পারে, ভদ্রবেশে আসা ভদ্রভাবে চুরি করা, না ওরা ভদ্দর নয় অভদ্দর৷ ভদ্রভাবে চুরি করতে গেলেও একটু ভদ্রপোষাক লাগে চোরভ্রাতা৷ ‘চোরে চোরে মাসতুতো ভাই’ যদি হয় তাহলে একটা সিনেমাও বানানো হয়ে যায় সেখানে৷ দৃশ্যপটে এক ভাই আরেক ভাইকে শেখাচ্ছে ‘why filling so ‘মাসতুতো’ with চোর’??? অপর ভাই উত্তর দিচ্ছে ‘no no be right fast and then join that…’ এরপর যা হয় আম জনতা গড়াগড়ি যায়৷ বলি তেলা মাথায় তেল লাগিয়ে আর কদ্দিন চলবে তবে এখন শুধু মাথায় নয় গায়েও অনেকে অইলিং করছে যেন এক একটা অইলিং মেশিন, গাল টিপলেই তৈল নিঃসরণ ঘটাবে৷ তা বাবারা ওই তেল দিয়ে একটু মাছ সবজি ভেজে দিয়ে যাও না তাহলে তো লোকের খেয়ে তৃপ্তি হয় আর গ্যাসের খরচও বাঁচে৷ গায়ে রং মাখার আগে সর্বাঙ্গে তৈল লেহন করলে নাকি রং তাকে জাপটাতে পারে না৷ তা পুলিশের হাত থেকে বাঁচার এর থেকে ভালো উপায় আর জানা নেই৷

উড়ো তেল গোবিন্দায় নমঃ বলে মাখো আর ধর্তব্যের মধ্যে এলেও পিচ্ছিলে পলায়ন করো৷ আর তেল যদি না পাওয়া যায় তাহলে সেটা এক প্রশ্ন বটে তবে প্রশ্ন থাকলে তার উত্তরও আছে ক্রিম যেমন নিভিয়া বা কোল্ড ক্রিম হ্যাঁ দাম আছে তবে চিন্তা নেই যা চুরিতে রোজগার হয় তাতে হয়ে যাবে৷ যুতসই ফ্যাশন; মাখলে ভুরুভুরু ঘ্রাণে যে কেউ জুটেও যাবে৷ নাহলে মধু যার গন্ধে মৌমাছিরা ভনভন্ ভনভন্ করে, যদি মধুতে এলার্জি থাকে তাহলে সে গোবরও মেখে চুরি করতে বেরোতে পারে কারণ তার বিকট গন্ধে শুধু মাছিরাই আসবে দিয়ে বসবে, পুলিশ দুরস্ত৷ খুব অসুবিধা বাট আনহাইজেনিক ৷ আজকাল চোরেদের চুলের ফ্যাশন লক্ষ করার মতন, আগেকার দিনের মত কদমছাঁট বা বাটিছাঁট নয় ব্ল্যাক ব্রাশ বা কালারিং এফেক্ট ভালো কথায় বলে উল্টানো ঝাঁটা৷ তাই তাদের আর ঝাঁটা পেটা করে লাভ নেই অলরেডি তারা মাথায় ঝাঁটা বেঁধেই ঘুরে বেড়াচ্ছে তবে দরকার হলে দ্বিগুণ ঝাঁটা মগজে চাপানো হতে পারে৷ আমি জানতাম বৃষ্টি হওয়াহ পরে শুভ্র গগনে রামধনু উঠতে দেখা যায়, এখানে কালো আকাশেই ইন্দ্রধনুর ঝলক দেখা যাচ্ছে তাও যখন তখন, কি অদ্ভুত না!!!

অনেকেই প্রশ্ন ঠোকে যে চোর আর ডাকাতের পার্থক্য কোথায় দুজনাই তো চুরি করে কেউ ভীতু আর কেউ বাহাদুর৷ আমি তাদের সপ্রশ্ন উত্তরে বলি চোর মানেই লুকোচুরি আর ডাকাত মানেই সামনাসামনি৷ চোর হচ্ছে ছিঁচকে আর ডাকাত হচ্ছে আভিজাত৷ তা একটা কথা বলি হে চোরগণ, আপনাদের বৃত্তি যদি আপনারা সামনে থেকে দেখাতে প্রসন্ন থাকেন তৎপর মোরা যারপরনাই আনন্দিত হয়৷ ধাপ্পাবাজি একটু মুখরোচক হয়৷ ডাকাতি কিন্তু চুরির চেয়ে প্রেস্টিজিয়াস, আমি ডাকাতি করিনি মশাই এই দেখুন আপনি কি ভাবলেন আমি শুধু স্মরণ করলাম৷ যদি এমন হয় চোর তেল মেখে আর ডাকাত আলকাতারা মেখে চুরিডাকাতি করতে এলো দিয়ে উদ্বায়ী কিছু একটা ঘটলো তার দায় কার শোধনাগারের! এবার ‘শোধনাগার’ শব্দে বলতে পারেন সমাজের৷

তস্কর যদি ওয়েস্টার্ন বা সাউথ ইন্ডিয়ান হয় তাহলে সে নিশ্চয়ই হেঁটে হেঁটে আসবে না ঘোড়ার পিঠে বা হাতির পিঠে চড়ে হরণ করে নিয়ে যাবে মেম সাহেবকে৷ সেটা অবশ্য রূপকথাতেই মানায়৷ কি বলুন তো এভাবে বেশিদিন চলতে পারে না এই মহাবিদ্যা পুকুর চুরিতে আবর চোখের ভাষা ভালোই বোঝে৷ নাহ্! আজকের নেশা ঠিক জমলো না, এমন নেশা যে নেশায় বুঁদ হয়ে সিঁধেল চোর আর ছিঁচকে চোরের পার্থক্য করা যায়৷ ঐ নেশার মত চুরি করে আর চুরুট টেনে কুন্ডলী ধোঁয়া পাক খাইয়ে সে আরেক সুখ আহা জনগণও তার অংশীদার৷ তাই এ চুরিতে আর মন বসে না এখন পুকুর চোর, সাগর চোর, মহাসাগর চোরের দিন৷ আজ বড্ড নেশা করেছি তাই কলমও চলছে না, তাছাড়া প্যাদানি খাওয়ার ত্রাসও তো আছে৷ আজ চলি রে রোজগার পেলে মার৷ এই করে আমও গেল, ছালাও গেল৷ হা হতোস্মি!!!

 

কীভাবে লেখা পাঠাবেন?
নীচে উল্লিখিত হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার কিংবা ইমেল আইডিতে লেখা পাঠাতে পারবেন।
হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার~ 9635459953
ইমেল আইডি~ bengalliveportzine@gmail.com
লেখার সঙ্গে নিজের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর এবং একটি ছবি পাঠানো আবশ্যক।
ভ্রমণ কাহিনীর সঙ্গে নিজের তোলা দুটো ছবি পাঠাতে হবে।

Exit mobile version