পোর্টজিন
“অদ্বিতীয় অন্য এক রবীন্দ্রনাথ” লিখেছেন জয়ন্ত নাথ
Bengal Live পোর্টজিনঃ পোর্টজিন কি? পোর্টজিন একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। প্রতি সপ্তাহের রবিবার এটি বেঙ্গল লাইভের (bengallive.in) এর পোর্টজিন বিভাগ থেকে প্রকাশিত হয়।
কোনো এক রবীন্দ্র অনুরাগী বলেছিলেন যে, এমন কোনো দিনের এমন বিশেষ মুহূর্ত নেই যেখানে রবীন্দ্রনাথ নেই । এবং আমাদের ক্ষেত্রেও তাই । এমন কোনো ভাবাদর্শ নেই যেখানে দিবা শেষে মানুষের চিন্তার চিত্তের কেন্দ্রভূমিতে রবীন্দ্রনাথ নেই ! আমাদের সাধারণের কাছে রবীন্দ্রনাথ নিজেই একটা পৃথিবী । যাহা অন্তহীন ।
জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের বাড়িতেই বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষক আসতেন ।তাদের কাছেই পড়তে বসতে বালক রবি । পাশাপাশি চলত ছবি আঁকা সঙ্গীত এবং শরীর শিক্ষা এমনকি সেই সময়ের বিখ্যাতকুস্তিগীর হীরা সিংহের কাছে রবীন্দ্রনাথ কুস্তিও শিখেছিলেন।
ভাইবোনদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন সবার ছোট।
তার পড়াশোনার দায়িত্ব নেন বড় ভাই হেমেন্দ্রনাথ তিনি রবীন্দ্রনাথকে জিমনাস্টিক শেখাতেন । কবি ছোটবেলা থেকেই সবার অন্ত্যন্ত প্রিয় হয়ে উঠেছিলেন ।
ছাত্রাবস্থায় আমাদের একজন শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক বলেছিলেন -” যতো বড় হবে ততো রবীন্দ্রনাথকে জানবে ।” কিন্তু আজ তাও যেনো একটা সুবিশাল সমুদ্রের ন্যায় এই বিশ্বকবি । বৃহত্তর বাংলার সূর্যোদয় তখনও হয়েছিল যখন সাহিত্যের, সংস্কৃতির, বিজ্ঞানের আলো ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশে । বাঙ্গালীরাও সাক্ষী হলো একটা স্বর্ণযুগের যখন ঘরে এলো নোবেল পুরস্কার । অবশ্য সহজে আসেনি সে পুরস্কার ।তার পেছনে ছিল বিশ্বকবির অক্লান্ত পরিশ্রম । তবে আলো যেভাবে প্রজ্জ্বলিত হয়েছিল বাঙ্গালীরা ঘরে ঘরে তেমনি ধীরে ধীরে স্তব্ধতার অন্ধকারে বিলীনও হয়েছে অনেক বার ! প্রিয় কবি, প্রাণের কবি সুকুমার রায় যখন শয্যাশায়ী অবস্থায় প্রতি নিঃশ্বাসে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন তখন একদিন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে দেখতে এসে গানও শুনিয়ে গেছিলেন । এবং সুকুমারের মৃত্যুর পর কবি শান্তিনিকেতনে জনসমক্ষে বলছেন- “মৃত্যুর দ্বারের কাছে দাঁড়িয়ে অসীম জীবনের জয়গান গাওয়া সুকুমারের রোগশয্যায়, তাঁর পাশে বসে আমার সেই গানের সুর দিতে আমার চিত্ত পূর্ণ হয়েছে।”
সুকুমার রায়ের মৃত্যুর সতেরো বছর পর তাঁর “পাগলা দাশু” গ্রন্থখানি প্রকাশনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান ছিল অপরিসীম । সেই গ্রন্থের ভূমিকা কবি নিজেই লিখেছিলেন এবং তা ছাপাও হয়েছিল তাঁরই তত্ত্বাবধানে ।
কাজী নজরুল ইসলামের উদেশ্যে কবি তাঁর “বসন্ত” নামের গীতিনাট্যটি উৎসর্গ করেন । তখন নজরুলের বয়স মাত্র চব্বিশ বৎসর । এই তরুণ যে প্রেরণা হতে পারে হাজার হাজার তরুণদের কাছে সেটা প্রথম যাঁরা লক্ষ্য করেছেন তাঁদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথের স্থান শীর্ষে। তাঁর আশিতম জন্মদিনে কাজী নজরুল কবির উদ্যেশে লিখেছিলেন – ‘‘একা তুমি জানিতে হে কবি, মহাঋষি, তোমারি বিচ্যুত-ছটা আমি ধূমকেতু।’’
বিদ্রোহে, হিংসায়, বঙ্গ ভঙ্গে দেশ টুকরো টুকরো হয়ে যখন বিধ্বস্ত, রবীন্দ্রনাথ তখনও দাঁড়িয়েছিলেন জনসাধারণের কাছে । কবি লিখেছেন –
” বীরের এ রক্তস্রোত, মাতার এ অশ্রুধারা
এর যত মূল্য সে কি ধরার ধুলায় হবে হারা।
স্বর্গ কি হবে না কেনা।” – (বলাকা)।
প্রত্যেকটা দিনের আনন্দে, দুঃখে, আবেগে, কর্মে, সাফল্যের শিখরের তৃপ্তিলাভের পরও মানুষ যখনই হেসেছে, কেঁদেছে তখন সেখানেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিরাজমান ।
“রোজ কতো কি ঘটে যাহা তাহা,
এমন কেনো সত্যিই হয় না আহা..”
এ কথা শুধুমাত্র রবীন্দ্রনাথই বলতে পারেন ।
বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসুর সাথে ঠাকুরবাড়ির এই কবির একটা বন্ধুত্বের নিবিড় সম্পর্ক ছিল তা আমাদের অনেকেরই হয়তো জানা । জগদীশ চন্দ্র বসু তখন বিলেতে বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজে সেখানে থাকতেন । এবং দেশে ফিরে আসলে বন্ধু রবীন্দ্রনাথের সাথে অবশ্যই দেখা আসতেন । অবধারিত ভাবেই একবার বিলেত থেকে দেশে ফেরার পর জগদীশ চন্দ্র বসু কবির সাথে দেখা করে উনি খুব অনুরোধ করলেন বন্ধুর কিছু গল্প বিদেশী পত্রিকায় ইংরাজিতে লিখে ছাপবেন বলে। কবি তখন বিদেশী পত্র পত্রিকায় ছাপানোর ব্যাপারে রাজি ছিলেন না যদিও বন্ধুর অনুরোধে অবশেষে তিনি কয়েকটি পাণ্ডুলিপি বন্ধু জগদীশের হাতে দিয়ে দিলেন ।
জগদীশ চন্দ্র বসু বিলেত পৌঁছার পর রবীন্দ্রনাথ উনাকে একটা চিটি লিখলেন এই ভাবে যে ,
প্রিয় বন্ধু, আমার ঘরের কর্ম লক্ষ্মীকে তুমি যেভাবে বিদেশে জনসমক্ষে তুলে ধরতে উদ্যত হয়েছো, তাহাতে কি বিষয়টা দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণের ন্যায় হবে না হে বন্ধু?
উল্লেখ্য ১৯১২ সালে রবীন্দ্রনাথ বিলেতে গীতাঞ্জলি কাব্য নিয়ে জাহাজ পথে যাওয়ার সময় জাহাজে বসেই সেই কাব্যের অনুবাদে ব্যস্ত ছিলেন কবি । তখন গীতাঞ্জলির প্রায় সমস্ত অনুবাদ করেই ফেলেছেন । তার পরে লন্ডনে ভাড়া করা বাড়িতে বসেও চললো গীতাঞ্জলির ইংরেজি অনুবাদের কাজ । তখন চরম ব্যস্ততার মাঝেও আমাদের কবির শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে । দেখতে দেখতে অচিরেই কবি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং গীতাঞ্জলির কাজও যেনো একটা অসমাপ্ত রূপকথার গল্পের বইয়ের মতো বন্ধ হয়ে গেল । হয়তো নিয়তি সেই বৎসর অর্থাৎ ১৯১২ সালে গীতাঞ্জলি কে বিশ্বের দরবারে নিয়ে যেতে চাইছিল না । তবে ঠিক পরের বৎসর অর্থাৎ ১৯১৩ সালে কবি আবার সেই জাহাজ পথেই পরিবারের কজন সদস্যের সাথে ফের পাড়ি দিলেন লন্ডনের উদ্দেশে । গীতাঞ্জলির অবশিষ্ঠ অনুবাদের আজে সাহায্য করলেন কবির এক প্রবাসী বন্ধু । সারা বাংলা তথা ভারতবর্ষের গৌরব সেই গ্রন্থ এবার নিয়ে আসা হলো বিশ্বের দরবারে । সাল ১৯১৩ এর মে মাস । বিচারকরা গীতাঞ্জলি-কে নির্বাচিত করেন । কবি তখন দেশে ফিরে এসেছেন । নোবেল পুরস্কারের আসা হয়তো তখনও তিনি করেননি । অবশেষে প্রতীক্ষার অবসান হলো । এবং এরকমই এক নতুন প্রভাত হলো । সে প্রভাতে যেনো এক নতুন যুগের সূচনা হতে যাচ্ছিল । গড়তে যাচ্ছিল একটা নতুন ইতিহাস । কবিকে সেই বিশ্বখ্যাত নোবেল পুরস্কারের প্রদান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো সেই বছরের ৭ই মে । যেনো জনগন সহ অগোচরে থাকা অব্যক্ত বৃক্ষ, এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা তাল গাছ, মৌমাছি, প্রজাপতি, জল পড়ে যে পাতায় সেই গাছের পাতারা, পাখিরা .তারা সবাই যেভাবে প্রকৃতির হয়ে স্থান পেয়েছিল কবিগুরুর গানে, কাব্যে, সাহিত্যে, আজ তারাও যেনো গীতাঞ্জলির সাফল্যের উর্ধ্বে উঠে এসেছে সাক্ষী হয়ে ।
চারদিকে শুধু “আমাদের বিশ্বকবি” । গৌরবের এই রবে বাঙ্গালী তথা দেশবাসী যেনো ফের আলোকিত হয়ে উঠলো তখনকার ব্রিটিশ শাসিত ভারতে । ঘরে নোবেল পুরস্কার এসেছে । আমাদের রবি এনে বক্ষ উঁচু দিয়েছেন । আজও বহু বাঙ্গালীদের আশ্রয় সেই রবীন্দ্রনাথ । রবিঠাকুরের সাহিত্যের পথ ধরেই হোক আমাদের পরিচয় এবং বাঙালি আজও বিশ্বাসী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আবার ফিরে আসবেন ।
কীভাবে লেখা পাঠাবেন?
নীচে উল্লিখিত হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার কিংবা ইমেল আইডিতে লেখা পাঠাতে পারবেন।
হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার~ 9635459953
ইমেল আইডি~ bengalliveportzine@gmail.com
লেখার সঙ্গে নিজের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর এবং একটি ছবি পাঠানো আবশ্যক।
ভ্রমণ কাহিনীর সঙ্গে নিজের তোলা দুটো ছবি পাঠাতে হবে।