পোর্টজিন
“ভালোবাসার পলাশ-কদম” লিখেছেন দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়
Bengal Live পোর্টজিনঃ পোর্টজিন কি? পোর্টজিন একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। প্রতি সপ্তাহের রবিবার এটি বেঙ্গল লাইভের (bengallive.in) এর পোর্টজিন বিভাগ থেকে প্রকাশিত হয়।
কদম সুখী, খুব সুখী। অনেক না -পাওয়ার মাঝে ওর বরের ভালোবাসা ওর জীবনে যেন সূর্যের আলো। বেঁধে বেঁধে রাখে ওকে।ও হেসে উঠলেই ওর বর পলাশ বলে ওঠে ” কুঁড়েঘরে জোছনা” !
কেমন যেন মন শরীর অবশ হয়ে আসে ভালোলাগায়।মা মারা যাবার পর বাবার আদরে মানুষ। বিয়ের আগে বেশ ভয়ে ভয়ে থাকতো ও।কেমন হবে ওর বর? ভালোবাসবে তো ওকে? চারিদিকে যা শোনে সব,ভয় এমনিই চলে আসে ! বিয়ের পর থেকেই বোঝে পলাশ একটু অন্যরকম। নিজের গন্ডির মধ্যে থেকেই সব করে ও। হাওড়ার একটা লোহার কারখানায় কাজে যায়। সকালে বেড়িয়ে সন্ধ্যেয় ফেরে। বাড়িতে ঐ সময়টা কদম একা।
না,একা বলা ভুল !ওর সব্জিবাগান থাকে সঙ্গে। সেখানে ঢেঁড়স, বেগুন, পুঁই,লাউ দাঁড়িয়ে থাকে ওর অপেক্ষায়।ও যত্ন করে,জল দেয়।পলাশ বলে, গাছেরা ভালোবাসা বোঝে। সত্যিই ভালোবেসে ওরা উপহারের ডালি সাজিয়ে দেয় যেন !আর আছে দুটো ছাগল !গরু রাখার খরচ খুব।তাই পলাশ দুটো ছাগল কিনেছে কদমের জন্য।না,ভুল হলো ।কদমের ভেতর যে আর একটা প্রাণ সঞ্জীবিত হচ্ছে তার জন্য। ছাগলের দুধে পুষ্টিগুণ প্রচুর।তাই ছাগলের দুধে কদমের শরীরের যত্ন ! হাঁস মুরগিও আছে কয়েকটা। ওদের ডিম সংসারের কাজে লাগে। কখনোবা অতিরিক্ত হলে আশপাশের বাড়ি থেকে নিয়ে যায় দাম দিয়ে।দরজার পাশে ওর সর্বক্ষণের সঙ্গী জুঁই ড্যাবড্যাব করে চেয়ে দেখে ওদের ভালোবাসা।কদম জুঁই ফুল পছন্দ করে শুনে মেলা থেকে চারা কিনে লাগিয়েছিল পলাশ।সুখঝরা রাতে ওর মাথায় জুঁই ফুল গুঁজে পলাশের আদরে কদম তখন যেন লজ্জাবতী লতা !
ওদের সংসারে অভাব নিত্যসঙ্গী। তবুও সুখে থাকার চেষ্টা করে কদম।পলাশকে সুখে রাখার চেষ্টা করে।পলাশ বলে, সংসারে স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসাই হলো পবিত্র বন্ধন। স্বর্গ নেমে আসে তখন ঘরের দুয়ারে।পলাশ কদমের খেয়াল রাখে খুব ।মেলায় নিয়ে যায়। কাঁচের চুড়ি কিনে দেয়। ফুচকা খাওয়ায়। মাঝে মাঝে সিনেমায়ও যায় ওরা। প্রতি রবিবার ওরা বিকেলে বাইরে বেড়োয়। হেঁটে হেঁটে অনেক দূর যায়। পলাশের জড়িয়ে থাকা হাত তখন অনেক না -বলা কথা বলে চলে । তবে এখন কিছুদিন আর বাইরে বের হতে পারে না। বাড়িতেই পায়চারি করে। পেটে যেটা বাড়ছে তার জন্য আর ঝুঁকি নেয় না।
ওর বাচ্চা পৃথিবীর আলো দেখবে মাস দুয়েক পরেই, ডাক্তারবাবু সেরকমই বলেছেন।পলাশ খুব চিন্তায় থাকে। ওকে কাজে বেড়োতেই হয় প্রতিদিন।না হয়ে মাইনে কাটা যায়।তাই কদম ওর সব অসুবিধার কথা বলে না ওকে।ও যা পাগল ! কাজ কামাই করে ওর কাছেই বসে থাকবে তাহলে ! কদমের ন্যুনতম অসুবিধাও ওর বুকে বাজে, কদম জানে।আর জানে বলেই চায় ওদের সন্তান যেন গরীবীর আঁচ না পায়।যেন মাছে ভাতে থাকে সারা জীবন।
সেদিন সকাল থেকেই শরীরটা কেমন যেন আনচান করছে।পলাশ কাজে বেড়িয়ে যেতেই পেটের ভেতরে দস্যিটার ছটফটানি শুরু। শুয়ে থাকে চুপ করে ও। ভাবে,একটু বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যাবে। ডাক্তারবাবুর কথামতো দস্যিটার পৃথিবীর আলো দেখতে এখনো মাস খানেক বাকি। কিন্তু বেলা বাড়ার সাথে সাথে ব্যাথাও বাড়তে থাকে। হাসপাতাল প্রায় দু কিলোমিটার দূরে।কি করবে ও এখন? পাশের বাড়ির রুমা বৌদিও তো নেই এখন।বাপের বাড়ি গেছে। এভাবে বাড়িতে পড়ে থাকলে যদি বাচ্চাটার কিছু ক্ষতি হয় ! পলাশের মুখটা মনে পড়লো কদমের। সন্তানের আনন্দে ওর চোখে মুখে খুশির আনন্দ দেখতে পায় যেন কদম।নাহ্ এভাবে আর পড়ে থাকা নয়। যেভাবেই হোক হাসপাতাল পৌঁছতেই হবে। কিন্তু যাবে কি করে? এলাকা শুনশান।এখন ডাকবেই বা কাকে?
হঠাৎ মনের ভেতর যেন একরাশ সাহস দাপাদাপি করে উঠলো। দরজায় চাবি দিয়ে ওর সাইকেলটা নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো ও।মরিয়া কদম সাইকেলের প্যাডেলে জোরে চাপ দিয়ে চলল হাসপাতালের দিকে টলোমলো শরীরে। যেভাবেই হোক পৌঁছতে হবে। বাচ্চাটাকে বাঁচাতেই হবে। যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাচ্ছে শরীর। শুধু পলাশের মুখটা মনে পড়ছে। সন্তান দেখে ওর সুখী মুখটা কল্পনা করতে লাগলো ও। মনে ওর প্রার্থনা,”হে ঈশ্বর শক্তি দাও, শক্তি দাও আমায়” !
এতোটা পথ কিভাবে এলো ও জানে না! হাসপাতালের ভেতরে এসেই অসহ্য যন্ত্রণায় সাইকেল থেকে পড়ে গেল মাটিতে।সকলের চিৎকার চেঁচামেচিতে হাসপাতালের কর্মীরা ছুটে এলো।তারা তো দেখে থ। ডাক্তারবাবুও অবাক এরকম কান্ড দেখে। সাইকেল চালিয়ে আসন্নপ্রসবা নিজেই আসছে হাসপাতালে একা,এটা এতো বছরের কর্ম জীবনে উনি দেখেন নি কখনো। সন্তানকে বাঁচাতে মায়ের এই লড়াই সত্যিই কুর্নিশ করার মতো। একরাশ শ্রদ্ধায় ওনার মাথা নত হয়ে এলো । সংবাদপত্রে এরকম খবর মাঝে মাঝেই পড়ে থাকেন। কিন্তু এ যে নিজের চোখে দেখা! ডাক্তারবাবু ছুটলেন প্রসব করাতে। চমকে উঠলেন উনি। বাচ্ছার মাথা কিছুটা বেড়িয়ে এসেছে।আর একটু হলেই বড়ো ক্ষতি হয়ে যেতে পারতো।পরম মমতায় ডাক্তারবাবু কদমের সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখালেন। এক সাহসী মায়ের লড়াইয়ের পূর্ণ মর্যাদা দিতে পেরে তাঁরও হৃদয়ে খুশির প্লাবন !
এদিকে খবরটা রটে গেল দিকে দিকে ।দলে দলে লোক দেখতে আসছে এক সাহসিনী মাকে।কদমের খবর এখন ব্রেকিং নিউজ।পলাশ ষ্টেশনে নামতেই শুনলো সব।এক ছুটে হাসপাতালে ও। দেখলো কদমের পাশে শুয়ে ছোট্ট এক মেয়ে।এক কাদার তাল ! হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো পলাশ সব পেয়েছির এক কান্নায় !
কীভাবে লেখা পাঠাবেন?
নীচে উল্লিখিত হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার কিংবা ইমেল আইডিতে লেখা পাঠাতে পারবেন।
হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার~ 9635459953
ইমেল আইডি~ bengalliveportzine@gmail.com
লেখার সঙ্গে নিজের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর এবং একটি ছবি পাঠানো আবশ্যক।
ভ্রমণ কাহিনীর সঙ্গে নিজের তোলা দুটো ছবি পাঠাতে হবে।