পোর্টজিন

“ডি লি ট” লিখেছেন রবীন বসু

Bengal Live পোর্টজিনঃ পোর্টজিন কি? পোর্টজিন একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। প্রতি সপ্তাহের রবিবার এটি বেঙ্গল লাইভের (bengallive.in) এর পোর্টজিন বিভাগ থেকে প্রকাশিত হয়।

bengal live portizine rabin basu

রাকা যখন বাস থেকে নামল তখনও বৃষ্টি পড়ছে l ছাতা নিয়ে বের হলেও বাসস্ট্যাণ্ড থেকে বাড়ি— এই রাস্তাটুকু আসতে ভিজে একসা l আজ শনিবার, তাড়াতাড়ি স্কুল ছুটি l বিকেলে মাকে নিয়ে ডাক্তার বাবুর চেম্বারে যেতে হবে চেক-আপে।

বাড়ি ঢুকতেই মা বলল, জানিস রাকা রজত আজ ফোন করেছিল l

—কেন? সেসব পাট তো চুকিয়ে দিয়ে এসেছি l আমি ওর ব্যাপারে আর ইন্টারেস্টেড নই l

—বলল, তোর সাথে নাকি জরুরি দরকার l বিকেলের দিকে আসবে বলেছে l

রাকা আর কথা বাড়ায় না l মাকে বলে, ভিজে গেছি খুব l একটু কড়া করে চা কর তো মা l

—তুই চেঞ্জ করে আয়, আমি চা বসাচ্ছি l

রজতকান্তি রায় l স্কুলমাস্টার বাবার প্রিয় ও মেধাবি ছাত্র l এম বি এ করার পর কর্পোরেট দুনিয়ায় মোটা বেতনের চাকরি l রাকা মাস্টার্স আর বি এড করে এস এস সি দিয়ে একটা স্কুল জয়েন করেছে l বাবা একদিন সান্ধ্যভ্রমণ সেরে বাড়ি ফিরে জানাল, রাকার একটা সম্বন্ধ করে এলাম l রবিবার ওকে দেখতে আসবে l

রাকার মা তো অবাক l

—কী বলছ তুমি? সম্বন্ধ, দেখতে আসবে l তুমি রাকার মত নিয়েছ? ও এখন বিয়েতে রাজি হবে?

—শোন, ছেলেটি আমার ছাত্র ছিল l ওর নাম রজত l ওর বাবা সুবিমল আমার কলেজবন্ধু l রাকাকে চেনে l ওর মেয়ে প্রিয়া, আমাদের রাকার সঙ্গে একই নাচের স্কুলে নাচ শিখত l রাকাকে সুবিমলের খুব পছন্দ,তাই ছেলের বউ করতে চায় l

এরপর একটু থেমে রাকার বাবা আরও বলেছিল, আর মাত্র এক বছর আমার চাকরি আছে l আমার তো কোন ছেলে নেই, আমার অবর্তমানে কে রাকার বিয়ে দেবে?

তাই আমি চাই, চাকরি থাকতে থাকতে রাকাকে পাত্রস্থ করতে l এখন তোমরা যদি অমত কর, তাহলে থাক l

রাকা বাবার দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মুখের দিকে তাকিয়ে মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল l বিয়ে সে করবে l তবে শর্ত দিয়েছিল l বিয়ের খরচ সে ব্যাঙ্ক থেকে পার্সোন্যাল লোন নেবে l মাসে মাসে তার মাইনে থেকে ইএমআই কাটা যাবে l বাবাকে সে নিঃসম্বল হতে দিতে পারে না l

বিয়ের দু’তিন বছর পর থেকে রজতের পরিবর্তন শুরু হল l সে শুধু কাজের জায়গায় প্রমোশন আর উপরে ওঠার সিঁড়ির খোঁজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল l অফিস মিটিং পার্টি l এরই মধ্যে অফিসের বস মিস বিয়াসের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ল l বিজনেস ট্যুর আছে বলে দিনের পর দিন বাইরে যেত l ড্রিংকের মাত্রাও বেড়ে চলল l প্রথম প্রথম রাকা বুঝিয়েছিল l

— কী দরকার অত টাকা আর প্রমোশনের পেছনে ছোটা l বেশ তো আছি আমরা l শুধু শুধু টেনশন নেওয়া l তার থেকে আমাদের দু’জনের মাঝে তৃতীয় কেউ আসুক l

ছিটকে গিয়েছিল রজত l বিকৃত মুখভঙ্গি করে রূঢ়স্বরে বলেছিল, এই না হলে মাস্টারনি l যত্তসব ন্যাকামি l স্বপ্ন দেখতেই শেখেনি l রাবিশ l

রজতের এই রূপ রাকা ভাবতেই পারে নি l সেদিন মনে মনে শুধু আহত হয় নি, নারী হিসেবে অপমানিত বোধ করেছিল l

এরপর নিজেকে শামুকের মত গুটিয়ে নিয়েছিল l শক্ত খোলসের আবরণে নিজের সব চাওয়া-পাওয়া আর স্বপ্নকে ঢাকা দিয়েছিল l রজত কিন্তু থামেনি l বাড়িতে পার্টি অ্যারেঞ্জ শুরু করল l অনেক রাত পর্যন্ত নাচ-গান হৈ-হট্টগোল l রাকার কোন আপত্তি কানে তুলত না l দিন দিন কেমন মরিয়া আর হিংস্র হয়ে উঠতে লাগল l মাত্রা ছাড়াল যেদিন মদ্যপ অবস্থায় বাড়ি ফিরে কয়েক লাখ টাকা চাইল l কারণ জেনে রাকা কঠিন হয়েছিল l বলেছিল, না, টাকা আমি দেব না l প্রথমত অত টাকা আমার কাছে নেই l আর দ্বিতীয়ত থাকলেও আমি হোটেলের বিল মেটাতে টাকা দেব না l

রজত খেপে গিয়ে হাতের কাছে থাকা কাঁচের গ্লাস ছুঁড়ে রাকার কপালে মারল l রক্তাক্ত রাকার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল l সে সিদ্ধান্ত নিল আর না l এ সম্পর্ক থেকে মুক্তি চাই l

সুযোগও এসে গেল l কয়েক দিন পর মা ফোন করল, তোর বাবার খুব শরীর খারাপ l আমার কেমন ভয় করছে l বোধহয় হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে l তুই একবার আসবি, মা?

সেদিনই রাকা ও-বাড়ি ছেড়ে বাপের বাড়ি চলে এল l আর সে মাসেই পর পর দু’বার অ্যাটাক হয়ে বাবা চলে গেলেন l

সেই থেকে রাকা মায়ের কাছে l ফোনে শাশুড়িকে বলে দিয়েছে, সে সেপারেশন চায় l ও বাড়িতে আর ফিরবে না l

একদিনের জন্যও রজত মাকে ফোন করে নি l বাবার কাজের সময় ও নাকি বিদেশে ট্যুরে ছিল l বাবা চলে যাওয়ার পর আস্তে আস্তে মাকে অনেকটা স্বাভাবিক করেছে রাকা l এমন সময় কানে এল অনেক কথা l যাকে সিঁড়ি করে রজত কোম্পানীর শিখরে পৌঁছতে চেয়েছিল, সেই মিস বিয়াস তাকে পথে বসিয়ে অন্যতম এম ডি মিঃ চৌধুরীর কাঁধে ঝুলে পড়েছেন l রজতের প্রমোশন তো হলই না, উল্টে মিস বিয়াসের তছরূপ করা অনেক টাকার দায় ওর ঘাড়ে পড়েছে l মোটা ফাইন দিয়ে চাকরি বাঁচিয়েছে রজত l

মা চা দিতে রাকা কাপ হাতে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল l এখন আর বৃষ্টি নেই l গাছের মাথাগুলো বৃষ্টি-ধোওয়া হয়ে বেশি সবুজ দেখাচ্ছে l সাধারণ স্কুলমাস্টারের আটপৌরে মেয়ে জীবনে খুব বেশি স্বপ্ন দেখেনি, শুধু মর্যাদা নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিল l সেই মর্যাদায় আঘাত l অভিমানী রাকার চোখ জলে ভরে গেল l ঝাপসা চোখ নিয়ে সে দেখল, একটা গাড়ি দাঁড়াল গেটের সামনে l রাকা দেখল রজত নামছে l ও তাড়াতাড়ি নিচে নেমে এল l এসিটা অন করে রজতকে বসার ঘরে বসাল l ওকে কেমন কাহিল দেখাচ্ছে l অফিস থেকে সোজা এসেছে l রাকাকে এক পলক দেখে রজত বলল, কেমন আছো?

—ভালো l রাকা মুখ নিচু করে হাতের বলাটায় একবার হাত বুলিয়ে নিল l তা হঠাৎ কী এমন জরুরি দরকার পড়ল?

—জরুরি তো বটে, দরকারও l

—যা বলার তাড়াতাড়ি বল l মাকে নিয়ে ডাক্তারবাবুর কাছে যাব l

—শুনেছ তো নিশ্চয়ই l সব ব্যাপার l

—হ্যাঁ, তোমার মা আমার মাকে ফোন করেছিল l

—আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি l সরি, বাড়ি ফিরে চল রাকা l

—তা আর হয় না রজত l অনেকটা সময় চলে গেছে l আমি আবার নতুন করে সবকিছু ভাবতে শুরু করেছি l তোমার মানসিকতার সঙ্গে আমার কোন মিল নেই l তাছাড়া মা এখন একা, আমাকে মায়ের পাশে থাকতে হবে l

রাকা সোফা থেকে উঠে দেয়াল আলমারির কাছে গেল l পাল্লা খুলে কিছু পেপার্স বের করে রজতের সামনে রাখল l

—আমি ল-ইয়ারকে দিয়ে আমাদের মিউচিউয়্যাল সেপারেশনের ডিড করিয়ে রেখেছি l সইও করে দিয়েছি l তুমি সই করে কোর্টে জমা দিলেই হবে l আমার কোন ক্লেম নেই l তুমি তোমার মনের মত একজন গতিশীল অ্যাম্বিশাসী আধুনিকাকে বিয়ে কর l

—তা হয় না রাকা, প্লিজ ফিরে চল l

—কোন ভাবেই আমার সিদ্ধান্ত বদলাবে না l

—তুমি তাহলে তোমার জীবন থেকে আমাকে ডিলিট করে দিচ্ছ?

—হয়তো তাই l ইনবক্স ভরে গেলে লোক তো তাই করে l

টেবিল থেকে পেপার্সগুলো নিয়ে ঝড়ের বেগে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল রজত l ওর গাড়ি বের হবার শব্দ কানে যেতেই রাকা আকুল হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ল l আজ সত্যি সে তার জীবন থেকে একটা অধ্যায়কে ডিলিট করে দিল l

কীভাবে লেখা পাঠাবেন?
নীচে উল্লিখিত হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার কিংবা ইমেল আইডিতে লেখা পাঠাতে পারবেন।
হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার~ 9635459953
ইমেল আইডি~ bengalliveportzine@gmail.com
লেখার সঙ্গে নিজের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর এবং একটি ছবি পাঠানো আবশ্যক।
ভ্রমণ কাহিনীর সঙ্গে নিজের তোলা দুটো ছবি পাঠাতে হবে।

Related News

Back to top button