পোর্টজিন

লাস্ট সিগারেট – পার্টনার

Bengal Live পোর্টজিনঃ পোর্টজিন কি? পোর্টজিন একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। প্রতি সপ্তাহের রবিবার এটি বেঙ্গল লাইভের (bengallive.in) এর পোর্টজিন বিভাগ থেকে প্রকাশিত হয়।

bangla golpo bengal live portzine

লাস্ট ট্রেনের লালবাতিটা দপদপ করতে করতে মিলিয়ে গেল দূরে। অনেকক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল নীলু। সিগারেটটা মুখে নিয়ে পকেট হাতরেও লাইটারটা খুঁজে পেল না কিছুতেই। কোথায় যে ফেললো? এবার কিছু একটা করতেই হবে। ভাবতে ভাবতে ওভার ব্রিজ থেকে ধীর গতিতে সিঁড়ি বেয়ে নামতে লাগল নিচে। ঠিক তখনই চেনা গলায় একটা মিষ্টি প্রশ্ন, “এখনো সিগারেট ছাড়তে পারোনি ?” পেছনে ফিরতেই যেন মনের ভেতর সুনামি হয়ে গেল নীলুর। সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে তার প্রথম প্রেম অনামিকা। অনামিকা সেন, সাউথ কলকাতার বনেদী বাড়ির কন্যা। ভীষণ মেধাবী ছিল অনু। দীর্ঘ ১৫ বছর পর দেখা হলেও এতদিনেও একটুও পরিবর্তন হয়নি তার। সেই পাট করে পড়া শাড়ি, মিষ্টি চাহনি, মিষ্টি হাসি অপরিবর্তিত রয়েছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনু আর আজকের অনামিকার মধ্যে ফারাক বলতে শুধু তার সিঁথির সিঁদুর। সেদিকে তাকাতেই অনুর সঙ্গে করা নিজের বেইমানির কথা মনে পড়ে যায় নীলুর। দেশের জন্য কিছু করার নেশায় বিভোর নীলু তখন কতভাবেই না তাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল ! আচমকা মনের কোণায় স্মৃতি ভেসে ওঠে। বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ার পর শেষবারের মতো যখন অনু ফোন করে তাকে বিয়ে করার জন্য কাকুতি মিনতি করেছিল, তখন কঠোরভাবে তাকে মানা করেছিল নীলু। “তুমি অন্য কারো সঙ্গে ঘর বাঁধো। আমার জীবনে বিয়ে বলে কিছুই নেই অনু।” জীবনের প্রথম প্রেমকে চিরতরে বিদায় জানিয়েছিল নীলু। আচমকা সবকিছুই যেন মনে পড়ে যায় তার।

তবে রাজনীতির নগ্নরূপ তার সামনে আসতে একটু দেরি হয়েছিল বৈকি। যে উদ্দেশ্য নিয়ে রাজনীতি করে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করার কথা নীলু চিন্তা করছিল, তাদের একাংশ নেতাদের কাছে শুধুমাত্র পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা বুঝতে বুঝতে বয়স চল্লিশের কাছে চলে গিয়েছিল তার। সবকিছু ছেড়ে বর্তমানে মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ হয়েছে সে। বিয়ে করে সংসারী হয়েছে। বছর তিনেকের ছেলে, বউ আর বাবা মাকে নিয়ে দিব্যি সংসার করছে সে। তবে সারা জীবন নিজেকে অনুর কাছে দোষী হিসেবেই মনে মনে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে সে। বয়সে অনেকটাই বড় বিজনেসম্যানকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিল অনু। তবে ব্যবসায় ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা পঙ্গু হয়ে যায় তার স্বামী। বর্তমানে সে স্বামী ও মেয়ের দায়িত্ব নিয়েছে। আলিশান বাংলা ছেড়ে ঠাঁই হয়েছে দো-কামরার ভাড়াবাড়িতে। নীলু শুনেছিল, ঢাকুরিয়া থেকে যাদবপুর সন্তোষপুরেই ভাড়া থাকছে সে। ভয়ে ভয়ে থাকত যদি হঠাৎ সামনে পড়ে যায়। আজ সেই ভয় সামনে এল। কথায় আছে না, যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয়। খানিকটা তেমনই চিন্তা করছিল নীলু। “কী হল ? উত্তর দিলে না যে।” অনুর দ্বিতীয় প্রশ্নে সম্বিৎ ফিরলো তার। “পুরনো জিনিসকে এত সহজে ছাড়া যায় ?”- সিঁড়ি ভেঙে নামতে নামতে উত্তর দিল নীলু।”
–“তা অবশ্য ঠিক। জানো তো আমি বহুদিন তোমাদের পাড়ায় এসেছি। মাঝে ভাবি তোমার সঙ্গে দেখা হবে। কিন্তু কখনো হয় না। মাঝেমধ্যে ভাবি, তোমাদের বাড়িতে গিয়ে কাকীমার হাতের ডালের বড়া,আলুপোস্ত দিয়ে ভাত খেয়ে আসি। কিন্তু আশাকর্মীর কাজ করে আর সময় করে উঠতে পারি না।”- একনাগারে কলেজের মতোই বকতে থাকে অনু। শান্তভাবে কথাগুলো আগের মতোই গিলছিল নীলু। আশাকর্মীর কথায় প্রথম প্রতিক্রিয়া দেয় সে। “তুমি আশা কর্মীর কাজ করছো? তুমি না স্কলার!”
–“থামো তো, ছাড়ো ওসব কথা।” ধমক দেয় অনু। “আসলে জীবন বড়ই নিষ্ঠুর। কাকে যে কখন রাজা বানাবে। আবার কখন কে ফকির হয়ে যাবে তা কেউ বলতে পারে না। আর হ্যাঁ আমি শুনেছি তুমি বিয়ে করেছ। সংসারী হয়েছ। আমি সত্যি খুব খুশি হয়েছি। ভালো থেকো, এই টোটো- ” হাক পাড়ে অনু।
–“আরে আবার টোটো কেন? আমার বাইক আছে আমি ছেড়ে দিয়ে আসছি।”
–না বাবা।এই বয়সে বদনাম নিতে চাই না। তুমি বাড়ি যাও। তোমার পরিবার অপেক্ষা করছে। বলতে বলতেই টোটোতে চেপে বসে অনু। টোটো চলতে শুরু করতেই আচমকা থেমে যায়। মুখ বাড়িয়ে হাতের ইশারায় নীলুকে কাছে ডাকে অনু। কাছে যেতেই চোখে চোখ রেখে স্থির দৃষ্টিতে সে বলে, “পুরনো জিনিস অনেক ছেড়েছো তুমি। প্লিজ, এবার সিগারেটটা ছেড়ে দাও। নিজের আগামী প্রজন্মের জন্য।” বলেই টোটোচালককে এগিয়ে চলার নির্দেশ দেয় সে। মিষ্টি হেসে মিলিয়ে যায় দূরে। বাইকস্ট্যান্ডের দিকে পা বাড়ানোর আগে পানের দোকান থেকে সিগারেট ধরাতে গিয়ে হঠাৎ এবারে অনুর কথা মানতে ইচ্ছে হল তার। কিছু না ভেবে মুখের সিগারেটটা ফেলে দিয়ে বাইক স্ট্যান্ডের দিকে আস্তে আস্তে পা বাড়ায় নীলু।

কীভাবে লেখা পাঠাবেন?
নীচে উল্লিখিত হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার কিংবা ইমেল আইডিতে লেখা পাঠাতে পারবেন।
হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার~ 9636459953
ইমেল আইডি~ bengalliveportzine@gmail.com
লেখার সঙ্গে নিজের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর এবং একটি ছবি পাঠানো আবশ্যক।
ভ্রমণ কাহিনীর সঙ্গে নিজের তোলা দুটো ছবি পাঠাতে হবে।

Related News

Back to top button