তারা খসল উত্তর দিনাজপুর জেলা সিপিএমে, প্রয়াত অশোক সিং
উত্তর দিনাজপুর জেলা সিপিএমে নক্ষত্র পতন। চলে গেলেন অশোক সিং। উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদের প্রাক্তন পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ ও সহ-সভাধিপতি ছিলেন। দলের জেলা কমিটির সদস্য এই নেতার মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।
Bengal Live রায়গঞ্জঃ খসে পড়ল আরও একটি তারা। প্রয়াত হলেন সিপিএমের উত্তর দিনাজপুর জেলা কমিটির সদস্য তথা জনপ্রিয় সিপিএম নেতা অশোক সিং। এমন এক সঙ্কটকালে অশোক সিংয়ের মতো নেতার মৃত্যু জেলা সিপিএমের কাছে নিঃসন্দেহে বড় ধাক্কা বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। রেখে গেলেন স্ত্রী, দুই পুত্র, এক কন্যা ও নাতি-নাতনি সহ বহু গুণমুগ্ধ পার্টিকর্মী ও সমর্থক। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৩ টে নাগাদ কিষাণগঞ্জে নিজের বাড়িতেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয় বলে সিপিএম পার্টি সূত্রে জানা গেছে। মৃত্যুর দিন পর্যন্ত তিনি ছিলেন সিপিএমের কানকি এরিয়া কমিটির সম্পাদক।
অশোক সিংয়ের আদি বাসস্থান পাঞ্জাব প্রদেশে। গত শতকের পঞ্চাশের দশকে পাঞ্চাব ছাড়েন তাঁর বাবা বসন্ত সিং। অসম, গৌহাটি ঘুরে শেষ পর্যন্ত উত্তর দিনাজপুরের অসুরাগড়ে ৩১ নং জাতীয় সড়কের ধারে ধাবা খুলে বসেন বসন্ত সিং। ষাটের দশক থেকে চলে আসা সেই ধাবা পরবর্তীতে পরিচালনা করতেন অশোক সিং। প্রবীন পার্টি কর্মীরা বলেন, অবিভক্ত পশ্চিম দিনাজপুর জেলার কমিউনিষ্ট পার্টির নেতাদের কাছে অসুরাগড়ের এই ধাবা বা লাইন হোটেলটিই ছিল চাকুলিয়া, ডালখোলা, গোয়ালপোখর এলাকায় বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র। রক্তে ও পোশাকে পিওর পাঞ্জাবী হলেও বাংলায় বড় হয়ে ওঠা অশোক সিং নিজের আচরণ ও ব্যবহারে খুব সহজেই মন জয় করে নিয়েছিলেন স্থানীয় বাঙালিদের। সেই জনপ্রিয়তাকে সুচারুভাবে কাজে লাগিয়েছেন রাজনীতিতে। ফলও পেয়েছেন হাতেনাতে। বামফ্রন্ট জমানায় প্রথম পঞ্চায়েত ভোটে অসুরাগড় থেকে জয়ী হন অশোক সিং। ১৯৮৩ ও ১৯৮৮ -র পঞ্চায়েত নির্বাচনে পরপর দুইবার চাকুলিয়া থেকে পঞ্চায়েত সমিতির আসনে নির্বাচিত হন তিনি। নির্মল মুখার্জীর মৃত্যুর পর উপনির্বাচনেও প্রচুর ভোটে জয়ী হয়েছিলেন অশোক সিং।
মাত্র ২২ বছর বয়সে সিপিএমের পার্টি সদস্যপদ লাভের পর অশোক সিংয়ের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ছিল ক্রমশ ঊর্ধ্বগামী। ১৯৯৮ সালে নির্বাচিত হয়ে উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদের পুর্ত কর্মাধক্ষ হয়েছিলেন। ২০০৩ সালে ফের জেলা পরিষদে জয়ী হয়ে উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতির দায়িত্বভার সামলেছেন। পরিবারের একটি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট থাকলেও, এই বাংলায় আদতে প্রয়াত সিপিএম সাংসদ সুব্রত মুখার্জীর হাত ধরেই রাজনীতিতে আসেন অশোক সিং। এদিন কানকি এরিয়া পার্টি অফিসে তাঁর মরদেহ কিছুক্ষণ রাখার পর নিয়ে যাওয়া হয় চাকুলিয়া পার্টি অফিসে। দুই জায়গাতেই পার্টি কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি বহু সাধারণ মানুষও শেষ শ্রদ্ধা জানান প্রয়াত অশোক সিংকে। তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় কিষাণগঞ্জে।
তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে সিপিএমের উত্তর দিনাজপুর জেলা সম্পাদক অপুর্ব পাল বলেন, “অশোক সিংয়ের মৃত্যু আমাদের পার্টির কাছে নিঃসন্দেহে এক অপূরণীয় ক্ষতি।”