উত্তর দিনাজপুরের নদী কাহিনী (পঞ্চম পর্ব)

কুলিক, মহানন্দা, নাগর, টাঙন — প্রধান এই নদীগুলি ছাড়াও জেলার বুকে প্রায় ২৮টি নদীর চিহ্ন। তবে বেশিরভাগ নদীরই আজ প্রবাহ নেই। হাতে গোনা কয়েকটি নদীই আজ বর্তমান। তবে এক সময় এই এলাকা ছিল নদী কেন্দ্রীক। বড়বড় সওদাগরী নৌকা নোঙর করত এই জেলায়। নদী পথে চলত ব্যবসা বাণিজ্য। কিন্তু আজ সেকথা শুধুই ইতিহাস।
Bengal Live রায়গঞ্জঃ
সুধানীঃ সুধানীর জন্ম হয়েছে বিহার থেকে। সেখান থেকে চাকুলিয়া থানার ভারনা, হাটওয়ার, খিকিরটোলা, শিবরামপুর ও লালগঞ্জ হয়ে করণদিঘিতে ঢুকেছে। গোয়াবাড়ি সোহারই হয়ে নদীটি আবার বিহারে প্রবেশ করেছে। সুধানী সুদানী নামেও পরিচিত।
পিতানুঃ সুধানীর একটি উপনদী পিতানু। ধরমপুর, বাখারী বিল থেকে এই নদীর উৎপত্তি। নদীটির অনেকটা অংশ গোয়ালপোখর, চাকুলিয়া থানার সীমানা নির্দেশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এরপর করণদিঘি ও চাকুলিয়া থানার গোয়াবাড়িতে সুধানী নদীর সাথে মিশেছে। এই নদীর গভীরতা তেমন না থাকলেও প্রাচীন কালে বাজারগাঁতে এই নদীর তীরে গড় তৈরি হয়েছিল। যার ভগ্নাবশেষ আজও দেখা যায়।
কুরসাঃ কুরসা নদীর উৎপত্তি হয়েছে চাকুলিয়া থানার গোবিন্দপুর গণ্ডাল সন্নিকটস্থ গান্ডুয়া বিল থেকে। এই নদীর পশ্চিম ধারে আরানি, লউচা, খুদান, এবং পূর্ব দিকে সাতভেটি, সমসপুর, নবীপুর গ্রাম দেখা যায়। এইসব গ্রাম অতিক্রম করে তারাপুর এসে সুধানী নদীর সাথে মিলিত হয় কুরসা। একসময় এই নদীতে কুরসা মাছ মিলত। অনুমান, সেই থেকেই এই নদীর নাম হয়েছে কুরসা। গান্ডুয়া বিল থেকে চানা নামক আরও একটি নদীর উৎপত্তি ঘটে। পরে চানা নদীও কুরসার সাথে মিলিত হয়েছে।
বালাকরঃ বিহারের কিষাণগঞ্জ থানার মেহেনগাঁওয়ের আকুয়ার বিবির স্থান থেকে উৎপত্তি হয়েছে এই নদীর। সেখান থেকে দক্ষিণ পূর্বমুখী হয়ে এই জেলার হাটোয়ারে এসে পড়েছে। এরপর মনোরা, নিজামপুর, রামকৃষ্ণপুর, চানথোল, মির্জাতপুর, হয়ে বোচাগড়িদের কাছে এসে সুধানীর সাথে মিলিত হয়েছে। প্রায় সারা বছরই এই নদীতে জল থাকে।
গয়রাঃ এই নদীর উৎপত্তি হয়েছে গোয়ালপোখর থানার খিকিরটোলায়। সেখান থেকে মানুষকোল, জিয়াগাছি হয়ে সুধানীর সাথে মিলিত হয়েছে গয়রা। বর্তমানে এই নদীর অনেকাংশই কৃষিজমিতে পরিণত হয়েছে।