সংবাদ মাধ্যমের দৌলতে তাঁর গল্প এখন অনেকেই জেনে গেছেন। সেলিনা বেগম শুধু জেলার নয়, রাজ্যেরও পরিচিত মুখ। নারী দিবসে সেই সেলিনা বেগমকে আরও একবার স্যালুট বেঙ্গল লাইভের তরফে।
Bengal Live হেমতাবাদঃ বাংলা নিয়ে এম এ পাশ করে ভেবেছিলেন শিক্ষকতার চাকুরি করবেন। পরীক্ষা দিয়েছিলেন নানান সরকারি বিভাগে। কিন্তু হয়নি। বৃদ্ধ বাবামায়ের নুন আনতে পান্তা ফুরোনো হতদরিদ্র পরিবারের বোঝা টানতে উত্তর দিনাজপুর জেলার দক্ষিণ হেমতাবাদ গ্রামের মেয়ে সেলিনা বেছে নিয়েছেন অ্যাম্বুলেন্স চালকের কাজ। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে প্রসূতি মায়েদের মাতৃযানে তাদের চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান হেমতাবাদ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কিংবা রায়গঞ্জ গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এভাবেই দিনরাত অসহায় দরিদ্র প্রসূতি মহিলা ও সাধারণ রোগীদেরকে তাঁর অ্যাম্বুলেন্সে করে পৌঁছে দিচ্ছেন হাসপাতালে। সেলিনা জানালেন, বাংলার মেয়েদের বাংলার উন্নয়নের জন্য যেকোনও কাজেই এগিয়ে আসতে হবে। সব মেয়েরাই যদি সমাজের পরিষেবা ও উন্নয়নমূলক কাজে এগিয়ে আসে তবে আরও উন্নয়ন হবে বাংলার। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বাংলার মেয়েদের উদ্দেশ্যে এমনই বার্তা দিলেন মহিলা অ্যাম্বুলেন্স চালক সেলিনা বেগম।
একেবারে হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম সেলিনা বেগমের। প্রত্যন্ত গ্রামের গরিব মেয়েটিই নিজের অদম্য জেদকে সঙ্গী করে রায়গঞ্জ কলেজ থেকে স্নাতক ও উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এম এ পাশ করেন। চোখে স্বপ্ন ছিল একটা ভালো সরকারি চাকুরি করার। পরীক্ষা ও ইন্টারভিউ দিয়েছিলেন অনেক দপ্তরে। কিন্তু হয়নি। এরপর আর বসে না থেকে সংসারের জোয়াল নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে হাতে ধরলেন অ্যাম্বুলেন্সের স্টিয়ারিং। ছুটে চলেছেন হেমতাবাদ ব্লকের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। সকাল থেকে রাত অসহায় প্রসূতি নারী থেকে গ্রামগঞ্জের দুঃস্থ অসুস্থ মানুষদের তাঁর অ্যাম্বুলেন্সে শুইয়ে নিয়ে যাচ্ছেন হেমতাবাদ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কিংবা রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। প্রায় আড়াই বছর ধরে মাতৃযান অ্যাম্বুলেন্সের চালক হিসেবে কাজ করে পরিষেবা দিয়ে চলেছেন হেমতাবাদ ব্লকের মানুষদের। সেলিনা বলেন, শুধু পুরুষরাই কেন নারীরাও যে কোনও অংশে পিছিয়ে নেই সেই জেদ আর মানসিকতা নিয়ে জীবনযুদ্ধের লড়াইয়ে নেমেছেন তিনি। গর্ব বোধ করেন সমাজের মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পেরে। প্রত্যন্ত গ্রামের কোনও অসহায় প্রসূতি নারী যখন প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করেন, ঠিক তখনই সেলিনা ওই প্রসূতির বাড়িতে পৌঁছে তাঁকে অ্যাম্বুলেন্সে উঠিয়ে নিয়ে যান হাসপাতালে। সেই কাজ করতে গিয়ে এক অনাবিল আনন্দ পান অ্যাম্বুলেন্স চালক সেলিনা বেগম। সমাজের মেয়েদের কাছে তাঁর বার্তা, বাংলার উন্নয়ন ও বিকাশে ঘরে বসে না থেকে প্রতিটি মেয়েদের বাইরে বেরিয়ে এসে বাংলার উন্নয়নে এগিয়ে আসা উচিত।