বেঙ্গল লাইভ Special

উত্তর দিনাজপুরের নদী কাহিনী। (প্রথম পর্ব)

কুলিক, মহানন্দা, নাগর, টাঙন — প্রধান এই নদীগুলি ছাড়াও জেলার বুকে প্রায় ২৮টি নদীর চিহ্ন। তবে বেশিরভাগ নদীরই আজ প্রবাহ নেই। হাতে গোনা কয়েকটি নদীই আজ বর্তমান। তবে এক সময় এই এলাকা ছিল নদী কেন্দ্রীক। বড়বড় সওদাগরী নৌকা নোঙর করত এই জেলায়। নদী পথে চলত ব্যবসা বাণিজ্য। কিন্তু আজ সেকথা শুধুই ইতিহাস।

Bengal Live রায়গঞ্জঃ জেলা সদর রায়গঞ্জের লাইফ লাইন কুলিক। কুলিকের উৎপত্তি হয়েছে বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার ঠাকুরগাঁ গ্রামের নিম্ন অঞ্চল থেকে। এখান থেকে উৎপত্তি হয়ে নদীর নিয়ম মেনেই দক্ষিণ মুখে বয়েছে। বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার অধীনে থাকা রানি শঙ্কাইল,পীরগঞ্জ প্রভৃতি স্থানের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে প্রবেশ করেছে উত্তর দিনাজপুরে। এর পর এই জেলার হেমতাবাদ ও রায়গঞ্জ থানা এলাকার মধ্যে দিয়ে বাহিত হয়ে রায়গঞ্জ সদরের প্রায় ১১কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে বিশাহার গ্রামে কুলিক মিলিত হয়েছে নাগর নদীর সাথে। রায়গঞ্জ মহকুমা অঞ্চলে কুলিকের দৈর্ঘ্য ১৫ মাইল হলেও নদীপথ ৩০ মাইলের মতো। রায়গঞ্জ বন্দর এলাকায় নদীর গভীরতা সর্বাধিক ২০ ফুটের মতো বলে জানা যায়।

কুলিক নদীর নামকরণ সম্পর্কে বিভিন্ন মত থাকলেও সর্বাপেক্ষা গ্রহণযোগ্য মত, যেহেতু কুলিক নদী খননকরা হয়েছিল তাই প্রাচীন কালে এই নদীকে বলা হত “কুদ্দলীখাত”। সংস্কৃতে কুদ্দল কথাটির অর্থ মাটি কোপাবার যন্ত্র, গ্রাম্য ভাষায় যাকে কোদাল, কুদাল অথবা কুদালি বলা হয়। এবং “খত” কথাটির অর্থ খদিত, খাদ অথবা খাই। সেই অর্থে কুলিক নদী মানুষ দ্বারা খদিত খাল। পুরাকালে নদীমাতৃক উত্তরবঙ্গে আত্রেয়ী, পুনর্ভবা, করতোয়া নদীগুলি বর্ষায় প্লাবিত হত। ঠাকুরগাঁ সংলগ্ন বিস্তৃত অঞ্চল প্লাবনের ফলে জলমগ্ন হয়ে উঠত। এই জল নিষ্কাসনের জন্য খাল কেটে তা নাগর নদীতে ফেলার ব্যবস্থা করা হয়েছিল বলে মনে করেন অনেকে।

এই বিষয়ে প্রমান স্বরূপ বলা যেতে পারে খনন এর ফলে উদ্ভুত মাটি দিয়ে কুলিক নদীর পশ্চিমপারে একটি প্রশস্থ রাজ পথ তৈরি হয়েছিল। যার ধবংশাবশেষ এখনও সুভাষগঞ্জের ঘোষপাড়া ও দেবীনগর অঞ্চলে দেখা যায়। রাজপথটির নাম রাখা হয়েছিল “ মগদম-এর আলপথ”। কথিত আছে বক্তিয়ার খলজি এই পথে এসে সেনা সহ কুলিক নদী পার হয়েছিলেন। পরবর্তিতে রাজা গনেশের পুত্র “যদু” পীর মগদম সাহেবের কাছে ধর্মান্তরিত হয়ে জালালুদ্দিন সাহ নাম গ্রহণ করেন। এবং গৌড়ের সিংহাসন অধিকার করেন। সম্ভবত তাঁর সময়েই এই আলপথটির সংস্কার হয়। এবং তাঁর গুরুর স্মৃতিতেই আলপথটির নামকরণ করা হয় “মগদম-এর আলপথ”।

Related News

Back to top button