সন্তানের ওজন আর স্থুলতা চিন্তার কারণ ? সমাধানের পথ জেনে নিন
আপনার সন্তান অন্যদের মত নয় বলে আপনি কি চিন্তিত? সন্তানকে কি আপনি নিজের মনের মতো করে গড়ে তুলতে চান? ওজন কি শুধু শরীরেরই হয়, মনের কিংবা তথ্যের ওজন থেকে আপনার শিশুকে রক্ষা করবেন কিভাবে?শিশু ও বয়ঃসন্ধিকালীন সমস্যার কথা লিখছেন অমিতাভ দাষ।
পড়তে থাকুন। আজ প্রথম কিস্তি।
প্রথম ভাগ
শরীরের ওজন কি মনে প্রভাব ফেলে?
Bengal Live স্পেশালঃ “গুবলুর বয়স আট বছর দশ মাস।চেহারাটা জলহস্তীর মতো। হঠাৎ করে অন্ধকারে দেখলে একটা বাচ্চা দৈত্যের মতো মনে হয়। চোদ্দ-পনেরো বছরের বাচ্চার জামা তার কোনোমতে গায়ে ঢোকে। তার খাওয়া- দাওয়া দেখলে একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষও লজ্জা পাবে। তার পায়ের মাপের জুতো খুঁজতে গেলে মোটামুটি সারাদিন পেরিয়ে যায়। তার বয়সের বাচ্চাদের কাছে সে অজানা আতঙ্ক।“
এই যে, যা যা লিখলাম,তার জন্য ক্ষমা চাইছি। এসবই তার এক বন্ধুর মায়ের কাছে শোনা। আসলে গুবলুর ওজনটা একটু বেশির দিকে।পোশাক কেনার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়।তার বয়সের বাচ্চারা তাকে খেপায়।একবার সে একটা বাচ্চার গায়ে পড়ে গিয়েছিল। তার পর থেকেই তাকে কেউ খেলা নেয় না। এজন্য গুবলুও আর কারো সাথে খেলে না।
এই সব ঘটনাগুলো আমাকে লিখতেই হত না, যদি সেদিন একটা দুর্ঘটনা না ঘটত, আর গুবলুর বাড়ির লোক আমার সাথে দেখা না করত।
জানেন কি আপনার শিশু মিথ্যে বলে কেন ? জেনে নিন, সংশোধনের পথ খুঁজে পাবেন
গুবলুদের বাড়ির সামনে একটা ছোট ফাঁকা জায়গা আছে। সেখানে বাচ্চারা প্রতিদিন বিকেলে খেলাধুলা করে। গুবলু কিন্তু খেলে না । সে বাড়ির সামনে বসে থাকে। কিন্তু সে দিন কী জানি কী হয়েছিল? কোন কারণে মাঠের কোন একটা বাচ্চা হয়তো গুবলুর কাছে এসেছিল। গুবলু তাকে মারতে মারতে মাটিতে শুইয়ে দেয়। বাচ্চাটির নাক মুখ দিয়ে রক্ত পড়তে শুরু করে। পাড়ার লোক ছুটে আসে। তার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি কোন এক শুভাকাঙ্খির পরামর্শে গুবলুর কাউন্সেলিং।
আমার কাছে কোনো শিশুর কাউন্সেলিং শুধুমাত্র তাকে আর তার বাবা-মায়ের সাথে গল্পের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। আমি বাচ্চাটির বাড়িতে যাই,ভালোভাবে খুঁটিয়ে দেখি। দেখি তার পড়ার ঘর,তার বইপত্র, তার শখ, তার বিশেষ কোনো ভালোলাগার জায়গা,কোনো বিশেষ ব্যক্তি,তার চাহিদা,আরো অনেক কিছু। এসব ক্ষেত্রে আমি শার্লক হোমস বা ফেলুদার মতোই ক্রমে ক্রমে একটা গল্প সাজাই। যে গল্পের নায়ক বা নায়িকা আমাদের সেই শিশুটি। আর দেখা যায় তার সবচেয়ে কাছের মানুষগুলোই মাঝে মাঝে খলনায়কের ভূমিকা পালন করে। অবশ্যই তাদের নিজেরই অজান্তে।
যাই হোক! একটি মানুষকে আর তার অদ্ভুত আচরণের কারণগুলোকে বুঝতে হলে সামগ্রিকভাবে তার জীবনযাপনকে বুঝতে হয়।দৈহিক ওজনের বৃদ্ধি অনেক ক্ষেত্রেই জীবনযাপনের ক্ষেত্রে বহু সমস্যা তৈরি করে। শরীরের সমস্যার সাথে সাথে মনের সমস্যাগুলিও চিন্তাভাবনার মধ্যে আনার দরকার।আবার কখনো শরীরের সমস্যাগুলির সাথে সাথে মনের সমস্যাগুলির প্রত্যক্ষ যোগও থাকে। ওজন বেড়ে গেলে যেসব প্রধান মনের সমস্যা তৈরি হয় ,সেগুলি হলো।
হীনমন্যতাঃ হীনমন্যতা বা inferiority complex এর ক্ষেত্রে কোনো মানুষ তার নিজের ক্ষমতা বা ability গুলোকে ছোট করে দেখতে শুরু করে। তার বদলে তার নিজের অক্ষমতাগুলি কে বড় করে সে নিজের অক্ষমতার সঙ্গে অন্যের
সক্ষমতার তুলনা করতে থাকে।কিন্তু কখনোই এর উল্টোটা কিন্তু সে করে না।এজন্যই এটি একটি complex বা মানসিক জটিল অবস্থা।এখন যার ওজন বেশি, তাকে তার পারিপার্শ্বিক অস্বাভাবিক বলেই মনে করে। তাকে মোটা বা অন্যান্য নামে ডাকা হয়।তাকে দলছুট অবস্থাতেই থাকতে হয়। বিখ্যাত জার্মান মনস্তাত্বিক অ্যলফ্রেড আইডলার (Alfred Adler) এর মতে একটি শিশুর মধ্যে হীনমন্যতার বীজ কিন্তু প্রোথিত হয় প্রধানত বাবা মায়ের কাছ থেকেই। শিশুকে কথায় কথায় তার ভাইবোন বা অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে ক্রমাগত তুলনা করতে থাকলে শিশুটিও নিজের অজান্তেই নিজেকে বারবার দাঁড়িপাল্লায় মেপে নিজের অস্তিত্বের বিচার করতে থাকে।একটি বেশি ওজনের শিশু স্বাভাবিকভাবেই একটি কম ওজনের শিশুর থেকে দৌড়ে মন্থর হবে, বা তার অঙ্গ সঞ্চালনে কম পারদর্শী হবে। সেক্ষেত্রে বাবা মার দেখা উচিৎ তার অতিরিক্ত ওজনের কারণগুলো খুঁজে বের করা। ক্রমাগত সন্তানকে দোষারোপ করলে ও তার সাথে অন্যান্য রোগা ও কম ওজনের বাচ্চার সক্ষমতার তুলনা করলে শিশুটি জীবনের সব ক্ষেত্রে নিজেকে একজন হেরে যাওয়া সৈনিক হিসেবে মনে করতে থাকবে। পরবর্তীকালে যা থেকে মারাত্মক সমস্যা তৈরি হতে পারে।
অতি আত্মসচেতনতাঃ ওজন বেশি হলে এবং তার ফলে জীবনে চলার পথে সমস্যা তৈরি হলে যে কোনো শিশু নিজেকে নিয়ে অতিরিক্ত সচেতন হয়ে যায়। সে নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা করে নেয়, সে সবসময় ভাবতে থাকে অন্যরা তার সম্বন্ধেই কথা বলছে, সে নিজের চেহারা নিয়ে অতিমাত্রায় যত্নশীল হতে শুরু করে,যা ক্রমে ক্রমে পাগলামির পর্যায়ে চলে যেতে পারে। মনস্তাত্বিকরা আত্মসচেতনতার দুটো স্তরের কথা সাধারণত বলে থাকেন প্রথমটি ব্যক্তিগত বা অভ্যন্তরীণ আত্মসচেতনতা যার ফলে যে কোনো মানুষ তার নিজের চিন্তাভাবনা ও কাজকর্মের ক্রমাগত মূল্যায়ন করতে থাকে। দ্বিতীয়তঃ বাহ্যিক আত্মসচেতনতা ,যার ফলে কেউ সর্বক্ষণ সামাজিক গ্লানিতে (social anxiety) ভোগেন যে তাকে কেউ বা সবাই সবসময় লক্ষ্য করছে, তার সম্পর্কে হাসাহাসি করছে,আলোচনা করছে। এরকম মানসিক অবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই কোনো মস্তিষ্ক কখনোই কোনো সূক্ষ ও জটিল কাজে মনোনিবেশ করতে পারে না।এর ফলে হীনমন্যতা আরো বাড়তে থাকে এবং এটা একটা cyclical disorder বা unending loop- এ (জটিল ফাঁদের মত মানসিক অবস্থা) পরিণত হয়।
মনোযোগহীনতাঃ অতি আত্মসচেতনতার স্বাভাবিক ফলাফলই মনোযোগহীনতা। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা নিজেদের দৈহিক ওজন নিয়ে বেশিমাত্রায় চিন্তিত,তারা কোন কাজে দীর্ঘক্ষণ ধরে মনোনিবেশ করতে পারেন না। তাদের কোনো কাজে মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে যায়। এই মনোযোগহীনতা কিন্তু কোনো চারিত্রিক স্থায়ী বৈশিষ্ট্য নয়। আসলে নিজেকে নিয়ে অতিমাত্রায় চিন্তিত থাকার কারণে অন্যান্য কাজেও সেই বিরূপ আত্মসচেতনতার প্রভাব পড়ে। তার ফলে কোনো কাজে লম্বা সময় মনোনিবেশ করার ক্ষমতা কমে যায়।কর্পোরেট সংস্থাগুলিতে অতিরিক্ত ওজনযুক্ত ব্যক্তিদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব দেবার ক্ষেত্রে বিভিন্নরকম ভেদাভেদ লক্ষ্য করা গেছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল, যে সব ব্যক্তি মোটা হওয়া সত্ত্বেও নিজেদের ওজন নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তিত নন, তাদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা থাকলেও মনোযোগহীনতা কিন্তু পাওয়া যায়নি। তবে এমন ব্যক্তি খুব কমই আছেন, যাদের ওজন খুব বেশি, কিন্তু তারা এই বেশি ওজন নিয়ে একদমই চিন্তিত নন।
ডিপ্রেশনঃ অতিরিক্ত ওজন থাকলে ডিপ্রেশনে ভোগার সম্ভাবনা পাঁচগুণ বেড়ে যায়। দেখা গেছে একজন স্বাভাবিক ওজনের মানুষের ছোটখাট মানসিক চাপ সহ্য করে নেবার ক্ষমতা ও তুচ্ছ ব্যাপারগুলোকে পাশ কাটিয়ে যাবার প্রবণতা একজন মোটা মানুষের থেকে বেশি। এইসব ছোটখাট মানসিক চাপ ক্রমাগত বাড়তে বাড়তে ডিপ্রেশনের জায়গায় যেতে পারে। আবার মেয়েদের ক্ষেত্রে এই ডিপ্রেশনে ভোগার প্রবণতা ছেলেদের থেকে এক তৃতীয়াংশ বেশি। মনস্তত্ববিদরা মনে করেন এর পেছনে নারীদের চিরাচরিত বিশ্বাস অর্থাৎ “নারীদের সৌন্দর্য তার শরীরের গঠনে” এবং স্থূলশরীর মানে অসুন্দর এই ধারণায় নারীরা মোটা হলে তাদের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা কমে যাবে, এমনটাই আশঙ্কা করেন।
নিজের যত্ন নিন: সন্তানকে বড় হতে দিন।
খাদ্যাভ্যাসঃ খাদ্যাভ্যাস মানসিক সমস্যার মধ্যে কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে বলি খাদ্য কি শুধু আমাদের শারীরিক প্রয়োজন মেটায়? নিশ্চই নয়। মায়ের হাতের রান্নার কথা মনে করুন।স্থূলত্বের সমস্যায় খাদ্যাভ্যাস একটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ন সমস্যা। জানেন কি? পেট ভরে খাওয়া একটি মানসিক অনুভুতি। একই ওজনের ও দৈহিক গঠনের দুজন মানুষের খাবার পরিমান একদমই আলাদা হতে পারে। স্থূল মানুষেরা, অনেক সময়ই দেখা যায়,বেশি কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার খেতে পছন্দ করেন। হয়ত তারা না জেনেই অতিরিক্ত পরিমান ভাত বা রুটিজাতীয় খাদ্য খান তাদের পেট না ভরা অবধি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, পারিবারিক অভ্যাস ও পেট ভরার প্রচলিত ধারণার বশবর্তী হয়ে অনেকে মোটা হয়েও খাদ্যাভ্যাস পাল্টান না। তারা ভাবেন পেট ভরে না খেলে তারা দুর্বল হয়ে যাবে। একে বুলিমিয়া (bulimia nervosa)বলে। তারপর তারা ওজন কমানোর জন্য দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকেন। কিন্তু শরীরের সবলতা বা দুর্বলতার সঙ্গে যে পেট ভরা ,না ভরার কোনো সম্পর্ক নেই, তা অনেকেই জানে না। কখনো উল্টোটাও হয়, শরীরের স্থূলতা কমানোর জন্য অনেকে ডায়েট মেন্টেন করার নামে হঠাৎ করে খাওয়া কমিয়ে দেন অথবা খাবার প্রতি একটা ভীতি বা অনিহা তৈরি হয়। একে খাদ্যভীতি(anorexia nervosa)বলে। এই দুটি ক্ষেত্রেই কিন্তু শরীরের ভয়ানক ক্ষতি হয়ে যায়।কখনো কখনো শরীরে শর্করার পরিমান কমে গিয়ে জ্ঞান হারানো বা মৃত্যুর মত ঘটনাও ঘটতে পারে। ডায়েট মানে কিন্তু কম খাওয়া নয়,বরং সঠিক সময়ে সঠিক পরিমানে ও সঠিক পুষ্টিগুণের খাবার খাওয়া।
এ সমস্ত সমস্যা ছাড়াও আরো বহুরকমের মানসিক সমস্যার সাথে ওজনবৃদ্ধি জড়িত।
ওজনবৃদ্ধিতে বয়ঃসন্ধিকালীন শারীরিক সমস্যাঃ
ওজনবৃদ্ধিতে এন্ডোক্রিন গ্রন্থির বিভিন্ন সমস্যা যেমন থাইরয়েড গ্রন্থির হরমোন উৎপাদনের সমস্যা (hypothyroidism), শরীরের বৃদ্ধি ঠিকমত না হওয়া, কর্টিসল এর অতিরিক্ত প্রবাহ,ছাড়াও অন্যান্য সম্পর্কিত সমস্যা, মেয়েদের ক্ষেত্রে PCOS(Polycystic ovarian syndrome) বা ডিম্বাশয়ের আকার বৃদ্ধি পাওয়া ও অতিরিক্ত সিস্ট তৈরি হওয়া, যার ফলে ডিম্বাশয়ের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হ্রাস,শরীরের অতিরিক্ত ওজনের ফলে কোমর ও পায়ের ও হাঁটুর বিভিন্ন সমস্যা,ইনসুলিন গ্রন্থির সমস্যার ফলে শরীরে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে না থাকা,খাদ্যনালীর হরমোন ঘেরলিন (Ghrelin),যা ক্ষুধা বাড়ায় এবং (PYY ),পেপটাইড টাইরোসিন , যা আমাদের ক্ষুধাকালীন খাদ্য খাবার পরিমান নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে…..এবং আরো অনেক হরমোনের ও তৎসংক্রান্ত শারীরিক সমস্যা যেগুলির সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পর্কিত পড়াশুনায় মনোযোগ রাখার সক্ষমতা ও নিজেকে আনন্দে রেখে জীবনে এগিয়ে যাওয়ার প্রবণতা।
খুব সোজা ভাষায় বললে, শিশু ও বয়সন্ধিকালে শরীরের অতিরিক্ত ওজন আগামী জীবনকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করতে পারে, এটা বোঝার জন্য কোনো বিশেষজ্ঞ হবার প্রয়োজন নেই।
ইমোজির মানে না বুঝে ব্যবহার ? সাবধান ! ইমোজির পেছনে যৌনতার ব্যঞ্জনা
ওজনের দাঁড়ি -পাল্লাঃ
কারো কারো স্বাভাবিক প্রশ্ন থাকে, যে কতখানি ওজন বাড়লে চিন্তিত হওয়া উচিৎ। ইন্টারনেটে যে ওজনের সাথে উচ্চতার চার্ট পাওয়া যায় ,ও BMI (body mass index,) অর্থাৎ শরীরের ওজনের সাথে উচ্চতার স্বাভাবিক গড় মান পাওয়া যায়( সুত্র: kg/m^2), তা কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই অতি সরলীকরণ করা। (কখনো ইউরোপিয়ান মানদণ্ডে ভারতীয় ওজনকে ধরার চেষ্টা করা হয় ওইসব মাপের মধ্যে। WHO (world health organization) এর সাধারণ BMI 18.5 থেকে 24.9 অর্থাৎ 18.5 এর কমকে কম ওজনের এবং 25 কে বেশি ওজনের ব্যক্তি হিসেবে মেনে নেওয়া হবে । কিন্তু অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞদের মতামত নিলে দেখা যাবে যে,সেভাবে কিন্তু কোনো সরল মাপ নেই,কারণ প্রত্যেক মানুষের দৈহিক গঠন ও শরীরের শক্তি খাদ্যের মাধ্যমে গ্রহণ ও কর্মের মাধ্যমে খরচ করার প্রবণতা আলাদা। যদি কোনো ব্যক্তি সম্পূর্ন কর্মক্ষম হয়, শরীর ও মন সুস্থ ও নীরোগ থাকে, সে হাসিখুশি ও প্রাণচঞ্চল হয়, তার খাওয়াদাওয়া হয় পুষ্টিকর ও পরিমান মতো, তাহলেই সে সুস্থ ।সেক্ষেত্রে এইসব জটিল হিসেবে যাবার কোনো প্রয়োজন নেই।
আবার অনেকে মনে করেন, ফ্যাট খুব ক্ষতিকর।কিন্তু শরীরে ফ্যাটের ও একটা গঠনমূলক ভূমিকা আছে ,সেটাও কিন্তু বুঝতে হবে। শরীরের ওজন কম করতে বলা হচ্ছে মানে তথাকথিত স্লিম ফিগার বা জিরো ফিগারের কথা বলা হচ্ছে, এমনটা ভাববেন না দয়া করে। একটু ভুঁড়ি থাকলে সে অসুস্থ,এমনটা ভাবলে কিন্তু সুপারস্টার রজনীকান্ত ভক্তরা আপনাকে ছাড়বে না।
এখন তাহলে উপায় কী?
আপনার সন্তানের খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণে আপনার কী ভূমিকা থাকা উচিৎ, সেটা আপনাকেই ঠিক করতে হবে।কারো কারো জিনগতভাবে ওজনবৃদ্ধির সমস্যা রয়েছে, সেক্ষেত্রে তো খাদ্যাভ্যাস আরো সচেতনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।এখন কেউ কেউ বলেন যে তারা তো বেশি ভাত খান না,তাহলে ওজন বেড়ে যাচ্ছে কিভাবে? সেক্ষেত্রে দেখতে হবে তারা কি ভাতের বদলে অন্যান্য কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার, বা বাইরের খাবার,যেমন ফাস্ট ফুড,কোল্ড ড্রিংকস, বারবার চিনি দিয়ে চা বা কফি, এসব খান কিনা? অনেক সময় দুটো খাবার সময়ের মধ্যবর্তী সময় অনেক বেশি হলে আমরা নিজেদের অজান্তেই বেশি বেশি খেয়ে নেই। আবার আমাদের খাবার খেতে শুরু করার ১৫-২০ মিনিট পর থেকে আমাদের পেট ভরার অনুভূতি হয় বলে ১৫-২০ মিনিটের আগে খাওয়া শেষ করতে মানা করা হয়,এবং ধীরে ধীরে খেতে বলা হয়, কারণ সেক্ষেত্রে আমরা বুঝতে পারি, ঠিক কতখানি খাবার খেলে আমাদের ক্ষুধার উপশম হবে।কেউ কেউ আবার সকালে না খেয়ে একেবারে দুপুরের ভরপেট খেয়ে নেন।
এরকম অভ্যাসও শরীরে ফ্যাট জমতে সাহায্য করে। মনে রাখবেন বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে ছাড়া শরীরের অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধিতে আপনার খাবার অভ্যাসই দায়ী, আর তার একমাত্র ওষুধ এই অভ্যাস বদলানো।
রোগা হবার ওষুধ খেয়ে বা নিজের মর্জিমতো উপোস করে বা শুধু শশা খেয়ে সারাদিন থাকলে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে শরীরের। যদি নিজে নিজে খোঁজখবর নিয়ে এর একটা সমাধান বের করতে পারেন, তবে খুবই ভালো ।না হলে এর একমাত্র ওষুধ ভালো কোনো ডায়েটিশিয়ান এর কাছে একবার গিয়ে আপনার ও আপনার সন্তানের খাবার অভ্যাস বদলে ফেলুন তাড়াতাড়ি।সেই অভ্যাস নিয়মিত পালন করে সুস্থ থাকুন ও সুস্থ রাখুন বাড়ির সকলকে। তাহলে মাঝে মাঝে রেস্তোরার বিরিয়ানি খেলেও খুব একটা ক্ষতি হবেনা। (চলবে)
বন্ধু-বান্ধবী ও যৌনতা নিয়ে শিশুর মনের কৌতুহল কীভাবে সামলাবেন বাবা-মা ?
লেখক:
অমিতাভ দাষ।
(Child and adolescent counsellor.
Psychotherapist.)