এই কয়টি গুণ রপ্ত করতে পারলেই সন্তানের মানুষ হওয়ার পথ অপ্রতিরোধ্

Bengal Live স্পেশালঃ

 

 কিভাবে তৈরি করবেন সন্তানের সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার উপযুক্ত পরিবেশ। লিখছেন অমিতাভ দাষ।
পড়তে থাকুন। আজ তৃতীয় কিস্তি।

কিন্তু একটি মানুষের ভবিষ্যৎ জীবন ও জীবনে সফলতা ও সেই সফলতাকে সঠিকভাবে বহন করার ক্ষমতা নির্ভর করে তার ছোটবেলার ভাবনাচিন্তার ওপর।এই ভাবনাচিন্তাগুলো আবার নির্ভর করে তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশের ওপর।কাজেই সন্তানকে আমরা সঠিকভাবে বড় হবার উপযুক্ত পরিবেশ দিচ্ছি কিনা তা নিয়ে তর্কের অবকাশ থাকতেই পারে।

এই সবকটি গুণ কিন্তু শুধুই জিনগত সংরূপনের মাধ্যমে তৈরি হয় না।শিশু ছোটবেলা থেকে এই গুনগুলি পরিবেশ থেকে দেখে দেখে তার নিজের মধ্যে আয়ত্ত করে।
খুব সোজাভাবে বললে ব্যাপারটা এইরকম, আপনি আপনার সন্তানকে যতই দামি স্কুলে পড়ান,যতই ভালো গৃহশিক্ষক রেখে তার মেধা ও নম্বর বাড়ানোর চেষ্টা করুন,যতই তাকে বড় কিছু হবার স্বপ্ন দেখার কথা বলুন, সে যদি ওপরের গুণগুলো আয়ত্ত না করতে পারে; সে সফল হলেও সেই সফলতা ধরে রাখতে পারবে না।কারণ জীবন মানে শুধু বড় চাকরি,বড় ব্যবসা শুরু করা নয়, সেই সফলতাকে বহন করতে শেখা।আবার শুধু পার্থিব সফলতা,অর্থাৎ,টাকা-পয়সা,বাড়ি-গাড়ি এসবই তো শুধু সফলতা নয়। সফলতার আসল অর্থ নিজের শরীর-স্বাস্থ্য ও মন ভালো রেখে স্বচ্ছলভাবে বাঁচা।সমাজে দশজনের মধ্যে একজন হয়ে একজন ভালো মানুষ হবার উদাহরণ তৈরি করা। তা না হলে যতই টাকা-পয়সা একজন উপার্জন করুক না কেন;যদি কেউ মানসিক ও শারীরিকভাবে ভালো না থাকে, সেই অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার সে কোনোদিনও করতে পারবে না।

তাই সন্তানকে তার বেড়ে ওঠার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে বাবা-মা কেই এগিয়ে আসতে হবে।বসতে হবে পাশাপাশি আলোচনায়।সন্তানের জন্য করতে হবে short-term plan বা স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা এবং long-term plan বা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। পরিকল্পনা গুলির অভিমুখ হবে তিনটি।

প্রথমতঃ  তার বেড়ে ওঠার পরিবেশ সংক্রান্ত।

দ্বিতীয়তঃ  তার পড়াশোনা ও শিখন সংক্রান্ত।

তৃতীয়তঃ  আর্থিক পরিকল্পনা।

 

সন্তানের মার্কশিট এর চেয়েও তার হাতের লেখার প্রতি মনোযোগ দিন। দেখুন আপনার সন্তান নিজে নিজে বই পড়ে বুঝতে পারে কিনা?নিজে নিজে সে ছবি আঁকছে কিনা?গান গাইছে কিনা? সে নিজের কোনো পছন্দের খাবার আপনাদের সাথে ভাগ করে খেতে চায় কিনা? কোনো কবিতার মানে সে নিজের মতো করে বলতে পারে কিনা?শুধু বই এর তথ্যভিত্তিক নয়, আপনার সন্তানের cognitive এবং metacognitive skills অৰ্থাৎ জ্ঞানভিত্তিক ও বোধভিত্তিক কুশলতার বিকাশ ঘটছে কিনা ,তার খেয়াল রাখুন। দরকার মনে হলে শিক্ষকদের সাহায্য নিন।আপনার সন্তান কোনো বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দিতে পারছে কিনা, দেখুন। দেখুন তার বন্ধুবান্ধব আছে কিনা?সে কোন কোন ব্যাপারে বেশি উৎসাহী। পড়াশোনার বাইরেও অন্যান্য কুশলতার বিকাশ তার মধ্যে ঘটছে কিনা, খেয়াল রাখুন। সবাইকে যে শুধু পড়াশুনায় খুব ভালো হতে হবে,তার কোনো মানে নেই। কিন্তু ডিসিপ্লিন যেন থাকে। সন্তানের কেরিয়ার নিয়ে আপনার মতামত বা ইচ্ছে চাপাবেন না। আপনার সন্তান কী হতে চায়, সেটাও অতটা গুরুত্বপূর্ন নয়। সে কোনক্ষেত্রে ভালো, কোন কাজের ক্ষেত্রে তার বেশি সফল হবার সম্ভাবনা রয়েছে, তার জন্য বিভিন্ন কেরিয়ার টেস্ট রয়েছে, যেগুলি আপনার সন্তানের আট বছর বয়সের পর আপনি করাতে পারেন। সচেতন বাবা – মা নিশ্চয়ই সন্তানের ভবিষ্যৎ কেরিয়ার নিয়ে ঠিকঠাক পরিকল্পনা করে এগোবেন।
(এ বিষয়ে পরের কোনো এক সংখ্যায় বিশদ আলোচনা করা যাবে)

 

সন্তানের জন্য চিন্তা করবেন,দুশ্চিন্তা করবেন না। সন্তানকে ভালোভাবে মানুষ করতে চাইলে মানবিক গুণগুলোর বিকাশ ঘটান তার মধ্যে।তাকে মানুষের মতো গড়ে তুলুন, রোবটের মত নয়।তাকে বড় হতে দিন ধীরে ,ধীরে।তার মধ্যে একাগ্রতা বৃদ্ধি করুন ,যাতে সে কোনো সাধারণ কাজকেও হালকাভাবে না নেয়।
আমি যখন এই লেখা লিখছি,বিকেল পাঁচটা বাজে। কিছুক্ষণ আগেই আমার মেয়েকে ডেকেছিলাম একটা বই পড়ে আমাকে শোনানোর জন্য।সে কার্টুন দেখছিল।পেপা পিগ।সে টিভি বন্ধ করে খুব ধীরে ধীরে কেটে পড়েছে অনেকক্ষণ আগেই।আমি পাশের ঘরে গিয়ে দেখি একটা কম্বল জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।অন্য দিন পাঁচটায় তার দিদিমনি আসে।আজ শনিবার ,তাই ছুটি।আমিও এই লেখা শেষ করে, তার কম্বলে ঢুকে তাকে জড়িয়ে একটুক্ষণ শুয়ে থাকবো।জানিনা আর কতটুকু সময় আমার কাছে আছে।জানিনা,কবে ,এই শীতটুকুও চলে যাবে। জানিনা,আর কতদিন পর সে বড় হয়ে যাবে।কিন্তু আজকের এই সময়টুকু খুব দামী।এই ঘুমটুকুর মধ্যে না জানি,সে কী কী হবার স্বপ্ন দেখছে। এ সময়, তার পাশে তো আমাকে থাকতেই হবে।তাই না!!

অমিতাভ দাষ।
(Child and adolescent counselor.)

Exit mobile version