ব্রিটিশদের হাতে ধরা দেবেন না বলে নিজেই বুলেটবিদ্ধ হয়েছিলেন চন্দ্রশেখর আজাদ
শপথ ছিল, কোনও অবস্থাতেই ব্রিটিশ পুলিশের হাতে ধরা দেবেন না। ১৯৩১-এর ২৭ ফেব্রুয়ারি। আলফ্রেড পার্কে পুলিশের হাতে ধরা পড়ার উপক্রম হতেই নিজের পিস্তল চালিয়ে দিলেন। আজ চন্দ্রশেখর আজাদের আত্মবলিদান দিবস।
স্পেশালঃ আত্মসমর্পণের চেয়ে আত্মবিসর্জন অনেক সম্মানের, অনেক গৌরবের। নিজেকে শেষ করে দেবেন তবু ব্রিটিশদের কাছে ধরা না দেওয়ার অদম্য জেদ তাঁর বীরগাঁথাকে আলোড়িত করে। ১৯৩১ সালের ২৭ শে ফেব্রুয়ারী এলাহাবাদের আলফ্রেড পার্কে এক বিশ্বাসঘাতকের ষড়যন্ত্রে পুলিশ তাঁকে ঘিরে ফেললে, বন্ধু সুখদেব রাজকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের গুলিতে শহীদ হন বিপ্লবী বীর চন্দ্রশেখর আজাদ। আজ তাঁরই আত্মবলিদান দিবস।
চন্দ্রশেখর আজাদ ১৯০৬ সালের ২৩ জুলাই মধ্যপ্রদেশের ভব্রায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতা পন্ডিত সীতারাম তিওয়ারি এবং মাতা জাগরণী দেবী। তিনি তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা ভব্রাতেই লাভ করেন এবং পরবর্তী উচ্চশিক্ষা উত্তর প্রদেশের বারাণসী সংস্কৃত পাঠশালায় শেষ করেন। খুব অল্প বয়সেই বিপ্লবী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েন চন্দ্রশেখর। মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেওয়ার সময় থেকেই তিনি বিপ্লবী হয়ে ওঠেন। ব্রিটিশদের হাতে ধরা পড়লে, ১৫ টি কশাঘাতে দণ্ডিত হওয়ার পরে ১৫ বছর বয়সে তিনি আজাদ উপাধি গ্রহণ করেন এবং চন্দ্রশেখর আজাদ হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন ।
জালিয়ানওয়ালাবাগের গণহত্যা (১৯১৯) চন্দ্রশেখর আজাদকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। মহাত্মা গান্ধী ১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করলে চন্দ্রশেখর আজাদ তাতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। তবে চৌরি-চৌরা ঘটনার কারণে, গান্ধীজি ১৯২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে অসহযোগ আন্দোলন স্থগিত করলে আজাদের জাতীয়তাবাদী অনুভূতিতে নতুন মোড় আসে। তিনি সিদ্ধান্ত নেন, পুরোপুরি আক্রমণাত্মক হলেই আশানুরূপ ফল লাভ করা সম্ভব। এরপর হিন্দুস্তান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি সংগঠনে যোগ দেন তিনি। কাকোরি ট্রেন লুন্ঠন (১৯২৫) এবং ব্রিটিশ পুলিশ অফিসারকে হত্যা (১৯২৮) সহ বেশ কয়েকটি সহিংস কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন তিনি।
২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৩১, এলাহাবাদের আলফ্রেড পার্কে (বর্তমানে চন্দ্রশেখর আজাদ পার্ক) বিপ্লবীদের সাথে একটি সভায় যোগ দিয়েছিলেন চন্দ্রশেখর আজাদ। এক সহযোগীর বিশ্বাসঘাতকতার জেরে সেখানেই ব্রিটিশ পুলিশ তাঁকে ঘিরে ফেললে সাহসিকতার সাথে লড়াই করেন। পালানোর আর কোনও উপায় ছিল না। পরিনাম, তিনি নিজেই নিজেকে গুলিবিদ্ধ করে দেশের জন্য মৃত্যুবরণ করেন। এভাবেই ব্রিটিশদের হাতে জীবিত ধরা না পড়ার শপথ পূরণ করেছিলেন এই বীর বিপ্লবী। স্বাধীনতার পর এলাহাবাদের সেই রক্তঝরা আলফ্রেড পার্কটির নামকরণ করা হয় চন্দ্রশেখর আজাদ পার্ক।