রায়গঞ্জের বন্দর আদি কালী পূজায় জড়িয়ে আছে সন্ন্যাসী বিদ্রোহের ইতিহাস

Nblive রায়গঞ্জঃ রায়গঞ্জেরর প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী  কালী পূজাগুলির মধ্যে অন্যতম রায়গঞ্জ বন্দর করুণাময়ী আদি কালী মন্দিরের কালী পূজা। আনুমানিক ৫০০ বছর পূর্বে এই মন্দির স্থাপন করা হয়েছিল। যদিও স্থাপন কাল নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কুলিক নদীর বন্দর ঘাট ছিল অত্যন্ত সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল। কথিত রয়েছে কুলিক নদী পথে বাণিজ্যের জন্য আগত ব্যাবসায়ী মালবাহক, সওদাগররা মন্দিরের বেদীতে পুজো দিয়ে ব্যাবসা বাণিজ্য শুরু করতেন। বন্দর আদি দুর্গা মন্দিরের সমসাময়িক কালেই এই মন্দিরের স্থাপন হয়েছিল বলেও মনে করা হয়। কোনও এক পাঞ্জাবী সাধু মন্দিরে পঞ্চমুন্ডির আসন স্থাপন করেছিলেন। যদিও এই পাঞ্জাবী সাধু আদতে কে ছিলেন তা নিয়ে যথেষ্ট মত বিরোধ রয়েছে এলাকাবাসী তথা রায়গঞ্জবাসীর মনে। বেশির ভাগ মানুষেরই ধারনা, সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের অন্যতম নেতা রঘুনন্দন গিরি গোঁসাই ছিলেন সেই পাঞ্জাবী সাধু। তিনিই ইংরেজ শাষনকালে অত্যাচারী জমিদারদের লুট করা সম্পত্তি ফের লুন্ঠন করে দরিদ্র কৃষকশ্রেণীর মানুষদের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন। এই মন্দিরের পূজারী ছিলেন যথাক্রমে নবীন ঠকুর, ভৈরব ঠাকুর, যোগেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, নারায়নচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মদনমোহন চট্টোপাধ্যায়। বংশ পরম্পরাক্রমে এখন মদনমোহন বাবুর ছেলে মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় মন্দিরের সেবায়েত রূপে রয়েছেন।

১৮০৯ সালে দিনাজপুর রাজ এস্টেট থেকে মন্দিরটি সংস্কার করে পাকা করা হয়। সাবেক কালে দেবীর মাটির মূর্তিতেই পূজা হত। পরবর্তিকালে ১৯৩০-৪০ এর দশকে রায়গঞ্জের ধর্মপ্রাণ মানুষদের অনুদানে বেনারস থেকে দেবীর কষ্টি পাথরের মূর্তি নিয়ে আসা হয়।

সকাল থেকেই চণ্ডীপাঠ, মঙ্গল আরতির মধ্য দিয়ে চলে পূজা। মন্দিরের বর্তমান সেবায়েত মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় বলেন সারা বছর ধরেই নিয়মনিষ্ঠা মেনে কালী পূজা করা হয়ে থাকে। রোজ সকালেই রায়গঞ্জের প্রচুর ধর্মপ্রাণ মানুষদের আগমন ঘটে মন্দির প্রাঙ্গনে। কালী পুজোর রাতে এখানে পাঁঠা বলি দেবার প্রথা এখনও রয়েছে।

কালী পুজোকে কেন্দ্র করে মন্দির সাজিয়ে তোলা হচ্ছে বিভিন্ন রঙে। আলোকসজ্জাতে মুড়ে ফেলা হচ্ছে গোটা এলাকাকে। এই পূজাকে কেন্দ্র করে যেন উৎসবের আমেজে ঢলে পড়তে চলেছে বন্দর এলাকার মানুষ সহ রায়গঞ্জবাসী।  সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে দেবীর প্রতি শ্রদ্ধা আজও অটুট।

Exit mobile version