– তাপস দাস
Nblive পোর্টজিনঃ যাঁরা বৃত্তে ছিলেন তাঁরাই জানেন কেমন ছিলেন। আমরা জানি তাঁর গান। আমরা চিনি তাঁর গান। দোহারের গান, বাংলার লোকায়ত গান। কালিকাপ্রসাদকে জেনেছি দোহারে। মেঠো কথা খোল-করতাল বাঁশি, তুলে আনতেন একখণ্ড বাংলাকে।
প্রগতিশীল মানুষ। শিলচরের পাঠ চুকিয়ে একসময় চলে এলেন কোলকাতায়। একষট্টির ভাষা আন্দোলনের শিলচর। জন্ম-ভাষার প্রতি টান তাঁর সহজাত। দলের নাম রাখলেন দোহার। সহকারী গায়ক। ও মোর বন্ধু ধন রসিয়া। ভালো লেগে গেল। মননে বামপন্থা। একসময় ভারতের ছাত্র ফেডারেশন আসাম রাজ্য কমিটির সদস্য ছিলেন। তাই বোধ হয় সোচ্চারে নীরবতা ভেঙ্গে সুর বাঁধেন ভাষা শহীদের টানে। বলে ওঠেন রাজাকার নিপাত যাক। ”আজ আমাদের প্রেম, আমাদের গান শাহবাগ শাহবাগ।”
সদ্য শিলচর থেকে ঘুরে এসেছি। ওখানেই শুনেছি, “জানেন, কালিকাপ্রসাদ আমাদের শিলচরের লোক?” বরাক নদীর মত দরাজ। ”কই গেলা রে বন্ধু, কই গেলা / আমারে ছাড়িয়া কই গেলা?” একজন মাটির মানুষ একজন শিল্পীকে ভালোবাসার জন্য আর কী চাই?
টিভির পর্দায় তাকিয়ে দেখতাম জ্ঞান তাপস তুলে আনছেন লালন, রবীন্দ্রনাথ, মুর্শেদী গান। আলো ছড়িয়ে পড়তো। গাঙের পানি বয়ে যেত মঞ্চে। দোহার থাকবে, তাঁর গান থাকবে, দোতারা থাকবে। তিনি নেই। যাপনে যাঁরা জড়িয়ে ছিলেন তাঁরা জানেন শূণ্যতা। আমাদের বুক তবু টনটন করে। এক আকাশ বিষাদ। সুরমা সিলেটে মেঘ জমে। সারাদিন কাজে মন বসে না। খারাপ মন ঘুরে বেড়ায় ভাঙ্গা গাড়ির চারপাশে। কেন এমন হয়? কেন এমন হয়? শেষবার দেখেছি টিভিতে। বলছেন চিনের রূপকথা। হেমাঙ্গ বিশ্বাসের কথা। উপস্থাপনা করেছিলেন ”আমি যে দেখেছি সেই দেশ।” গানের মাঝে ইতিহাস বলতেন। বলছিলেন ভাওয়াইয়া গানের কথা, গলার খাঁজের কথা, চরাই উতরাই। বুঁদ হয়ে আছি ”আসিবার চায়া আসিলেন না/ মনের আগুন মোর নিভাইলেন না।” আমরা তাঁকে মনে রাখব মুগ্ধতায়। মন খারাপে। বৃত্তের বাইরে থেকে আমরা তাঁকে চিনি। ”ঢেউ খেলানো মাটির পরে / উজান টানে বরাক নদী।মনদুয়ারে আরশি নগর / বসত করে কয়জনা। যোগ ছিল না তোমার সাথে / বিয়োগ কেন এত বাজে?