NBlive অপরাজিতা জোয়ারদারঃ শ্রাবণের ধারার মত বৃষ্টির সুর ঝড়ে পড়বে উত্তর দিনাজপুর জেলা জুড়ে। আকাশে.. বাতাসে.. সোনার ফসলের আলে দূর থেকে ভেসে আসবে তারই সুর.. ছন্দ। তবে এই বৃষ্টিকে কি চেনেন আপনারা ? আসুন জেনে নিই অজানা বৃষ্টিকে।
জেলার দুর্গাপুর এলাকার প্রত্যন্ত গ্রামের কৃতি ছাত্রী বৃষ্টি সাহা। রায়গঞ্জের দেবীনগর কৈলাশচন্দ্র রাধারানী বিদ্যাপীঠ থেকে কলা বিভাগে এই ছাত্রী সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৮৬% নম্বর পেয়ে পাশ করেছে। তার বাবা হাটে হাটে সবজি বিক্রি করেন। সঙ্গীত বিষয় নিয়ে বিশ্বভারতীতে পড়াশোনা করার ইচ্ছে থাকলেও আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় রায়গঞ্জ সুরেন্দ্রনাথ কলেজে ইংরেজি অনার্স নিয়ে ভর্তি হয়েছে বৃষ্টি।
গান নিয়ে পড়ার স্বপ্ন পেছনে ফেলে আসা এই বৃষ্টির কণ্ঠস্বরই এখন থেকে স্বনির্ভর হতে উদ্বুদ্ধ করবে হাজার হাজার মহিলাকে। উত্তর দিনাজপুরের পূর্বতন জেলাশাসক আয়েষা রাণী এ, যিনি বর্তমানে ঝাড়গ্রাম জেলাশাসকের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন, এই জেলার মহিলাদের আরও বেশি করে স্বনির্ভর করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তাঁরই নির্দেশে জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের মহিলাদের কাছে স্বনির্ভর হওয়ার বার্তা সহজ ভাবে পৌঁছে দিতে গান বাঁধার কাজ শুরু করেন গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের জেলা প্রকল্প আধিকারিক সব্যসাচী রায় । এই দায়িত্বকে সর্বতোভাবে পালন করতে দ্রুততার সাথে বাঁধা হয় গান। লেখা হয় আনন্দধারা প্রকল্পের সুবিধা সম্পর্কে নানা তথ্য সম্বলিত গীতিকবিতা। বৃষ্টির স্কুলের দুই শিক্ষক শুভ্রশঙ্কর নাগ ও ননীগোপাল রায়ের ঐকান্তিক সহযোগিতায় লোকসঙ্গীতের সুর দেওয়া হয় তাতে। আর এর পরই জেলার আনন্দধারা প্রকল্পের বিষয়ভিত্তিক এক শ্রুতিমধুর গান সৃষ্টি হয়। এই গান শুনে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত রাজ্যের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সি ই ও দিচেন ডি. লামা। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শহর জুড়ে স্বনির্ভর দলকে উৎসাহিত করার যেকোনো অনুষ্ঠানে এখন থেকে থিম সং হিসেবে বেজে উঠবে বৃষ্টির সুরেলা কন্ঠস্বরে এই গানটি। সব্যসাচীবাবু জানিয়েছেন, স্বনির্ভর দলের পঞ্চসূত্রে এই গান বাঁধা হয়েছে। নিয়মিত মিটিং করা ও সব সদস্যদের হাজির থাকা, নিয়মিত সঞ্চয় করা, যৌথ সঞ্চয় তহবিল থেকে প্রয়োজনে ঋণ দেওয়া অথবা নেওয়া, সময়মতো ঋণ পরিশোধ করা, নিয়মিত খাতাপত্র লেখা ও হিসাবপত্র ঠিক রাখার কথাই তুলে ধরা হয়েছে গানের কলিতে। এছাড়াও আরো কিছু বিষয় নিয়ে এই গানের কথা লেখা হয়েছে।
প্রায় ১০ জন শিল্পী মহড়াপর্বে কন্ঠ দিয়েছিলেন এই গানে। কিন্তু বৃষ্টি সাহা নামে এই ছাত্রীর সুরেলা কন্ঠের যাদু লোকআঙ্গিকে এই গানকে আলাদারকম স্বাদ এনে দিয়েছে। গানের বাদ্যযন্ত্র পরিচালনার জন্য জলপাইগুড়ি থেকে বাদকদের আনা হয়েছিল। এরপর তৎকালীন জেলা শাসকও অনুমোদন দেন এই গানে। রাজ্য থেকেও ভীষণ ভাবে প্রশংসিত হয় এই গান। এই গানে আরো বেশিসংখ্যক মহিলারা স্বনির্ভর হতে উদ্বুদ্ধ হবেন বলে আশা সকলের। পরিবর্তন হবে গ্রামাঞ্চলের মহিলাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার। একে অপরের সহযোগিতায় পরিবারের রোজগার বাড়ানো , পরিবারের উন্নতি ঘটানো ও সমাজে নিজেদের মর্যাদা বাড়ানোর বিষয়টি বুঝবেন গ্রামের এই সাধারণ মানুষগুলো। আর এই কাজ তরান্বিত করবে বৃষ্টি সাহার কণ্ঠস্বর…সাথে সাথে এগিয়ে যাবে রাজ্যের মধ্যে পিছিয়ে পড়া উত্তর দিনাজপুর জেলার মহিলারা।