NBlive ইটাহারঃ বিশ্বের ৫৫ টি দেশকে পেছনে ফেলে রূপকথার নায়ক সাগ্নিক। সাগ্নিক সাহা। উত্তর দিনাজপুরের ছোট্ট ছেলেটিই আজ বিস্ময় বালক কিকবক্সিং দুনিয়ায়। কঠিন যুদ্ধে রুপোর পদক পেলেও তার রণকৌশল ও দক্ষতা প্রশংসা কুড়িয়েছে গোটা বিশ্বের। “তৃতীয় ইন্টারন্যাশনাল থাই মার্শাল আর্টস গেমস অ্যাণ্ড ফেস্টিভাল – ২০১৮” প্রতিযোগিতায় কিকবক্সিং-এ রৌপ্য পদক নিয়ে দেশে ফিরেছে সাগ্নিক। গত ১২ থেকে ২২ শে মার্চ পর্যন্ত থাইল্যাণ্ডের রাজধানী ব্যাঙ্ককে এই আন্তর্জাতিক স্তরের কিকবক্সিং প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
সাগ্নিকের জন্মভূমি ইটাহার থানার গুলন্দর-১ অঞ্চলের ধুলোহর গ্রাম। বাবা অনুপ সাহা পেশায় রেশন ডিলার ও কেবল অপারেটর। মা হ্যাপি সাহা নিতান্তই গৃহবধূ। সাগ্নিক ইটাহারের দুর্গাপুর পাবলিক স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র। আবাসিক ওই স্কুলে পড়াশোনার পাশাপাশি প্রথম থেকেই কিকবক্সিং-এর প্রশিক্ষণও নিতে শুরু করে সাগ্নিক। সাগ্নিকের বাবা বলেন, “আমি চেয়েছিলাম, একটু আলাদা কিছু করুক ছেলে। সাগ্নিকেরও ছোট থেকেই তেমনই মন-মানসিকতা। তাই স্কুলে যখন দেখলাম এরকম একটি সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে, তখন সেটা আর হাতছাড়া করতে চাইনি। কিন্তু সে যে এভাবে এতদূর এগিয়ে যাবে সেটা কল্পনাতেও আসেনি।”
সাগ্নিকের এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে তার স্কুলের অনবদ্য অবদান। স্কুলের উদ্যোগেই জেলা ও রাজ্য কিকবক্সিং অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায় সুদক্ষ প্রশিক্ষক এনে তাকে আরও ভাল ও আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ দিয়ে সুদক্ষ প্রতিযোগী করে তোলা হয়েছে। জেলা ও রাজ্য স্তরের গণ্ডি পেরিয়ে ২০১৭-এর সেপ্টেম্বরে সাগ্নিক অংশ নিয়েছিল জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতা “ন্যাশনাল কিকবক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপ ২০১৭” তে।
ভারতের পাঞ্জাবে অনুষ্ঠিত সেই প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক পেয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরেই বিশ্বের দরবারে পৌঁছে যায় সে। স্কুল ও সংস্থার উদ্যোগে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ব্যাংককে অনুষ্ঠিত “থার্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাণ্ড থাই মার্শাল আর্টস গেমস অ্যাণ্ড ফেস্টিভাল-২০১৮” তে। সেখানে ১৮ — ২৮ কেজির গ্রুপে অংশ নিয়েছিল ১৯ কেজি ওজনের সাগ্নিক। মোট ৫৭ টি দেশ এই কিকবক্সিং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করে। একে একে ৫৫ টি দেশকে পেছনে ফেলে সাগ্নিক পৌঁছে যায় ফাইনালে। ফাইনালে তার প্রতিপক্ষ ছিল নিউজিল্যাণ্ডের বাসিন্দা ২৮ কেজি ওজনের এক কিশোর। ফলে ফাইনালের ফাইটটা সহজ ছিল না সাগ্নিকের কাছে।
বরং এক অসম লড়াই লড়তে হয়েছিল তাকে। সাগ্নিকের তুলনায় প্রতিপক্ষ নিউজিল্যাণ্ডের কিশোর দৈর্ঘ্যে প্রস্থেও ছিল ঢেরগুণ বেশি। তবু এই অসম যুদ্ধে পরপর তিনটি রাউন্ডই কভার করেছে সাগ্নিক। যা পারেনি অন্য দেশগুলির অনেক প্রতিযোগীই। আকারে ছোট হলেও সাগ্নিকের হাত ও পায়ের ক্ষিপ্র গতির আক্রমণ সামলাতে বহুবার হিমসিম খেতে হয় তার প্রতিপক্ষকে। তিন রাউণ্ড-এর যোগফল শেষে মাত্র ৩ পয়েন্টের জন্য স্বর্ণ পদক হাতছাড়া হয়ে যায় সাগ্নিকের। তার গলায় ঝোলানো হয় রৌপ্য পদক। কিন্তু তা সত্ত্বেও স্পট লাইটটা এসে পড়ে সাগ্নিকের উপরেই। স্টেডিয়ামে সকলের মধ্যমণি হয়ে ওঠে গ্রামবাংলার এই ছোট্ট বালক।
ওয়েস্ট বেঙ্গল কিকবক্সিং অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সম্পাদক বিশ্বনাথ রায় বলেন, “ফাইনালে দুই প্রতিযোগীর দৈহিক মাপ এবং ওজনের বিস্তর ব্যবধানের কারবে সাগ্নিকের কাছে সেটা ছিল একটা অসম্ভব অসম লড়াই। কিন্তু তা সত্ত্বেও সে যেভাবে লড়েছে তাতে ওর ফাইট স্কিল ও কৌশল দেখে বিস্মিত হয়েছেন বিশ্বের অংশগ্রহনকারী সমস্ত দেশের কিকবক্সিং তারকারা, অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য থেকে শুরু করে তাবড় ফাইটিং ইনস্ট্রাক্টর ও টেকনিক্যাল ডাইরেক্টররা। প্রতিযোগিতার শেষে সবাই সাগ্নিককে নিয়েই মাতামাতি শুরু করে দেন। সকলে ওর সঙ্গে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। একাধিক টেকনিক্যাল ডাইরেক্টর এমন মন্তব্যও করেছেন, সাগ্নিক একদিন বিশ্বের স্টার কিকবক্সার হবে।”