সুকুমার বাড়ই
Nblive রায়গঞ্জঃ একটি ভিন্নধর্মী আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হল রায়গঞ্জ শহরের হৃদয়কেন্দ্রে অবস্থিত “রায়গঞ্জ ইন্সটিটিউট” মঞ্চে। রায়গঞ্জে ২০১৫ এর ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য তৈরি হয়েছিল “শিশুমঙ্গল” নামক একটি শিশু বিকাশ এবং গবেষণা কেন্দ্র। ইতিমধ্যে এই সংস্থা অনেকগুলি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সফল। তাঁদের হাতে আরও বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। সংস্থার কর্ণধার রীমা মুখোপাধ্যায় বলেন সকলের সহযোগিতায় আমরা ধীরে ধীরে এগোচ্ছি। সমাজের যে শিশুরা জন্মের সময় স্বাভাবিকভাবে এ পৃথিবীতে আসেনি তাদের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু বলে। এদের নানা রকম প্রায়োগিক শিক্ষা দিয়ে সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনাই হল আমাদের লক্ষ্য – বলেন রীমা মুখার্জী।
আর এই কাজ করতে গিয়ে সবার আগে যেটা দরকার তা হল সচেতনতা। এই ভাবনাকে মাথায় রেখে ২৯শে এপ্রিল সকাল ১১টায় উক্ত মঞ্চে অনুস্থিত হল বিশেষ চাহিদাপ্রাপ্ত শিশুদের জন্য সচেতনতা আলোচনা সভা। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুর্গাপুরের সিটি মেডিকেল কলেজের বিশিষ্ট অধ্যাপিকা ডঃ নন্দিতা চট্টোপাধ্যায় ও কলকাতার আই আই সি পি প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষা সুস্রিতা প্রধান। তাঁরা তাঁদের আলোচনার মাধ্যমে বিষয়ের গভীরে প্রবেশ করেন। মানুষ সচেতন হলে এই সমস্যা অনেকটাই সমাধান করা যেতে পারে বলে তাঁরা উল্লেখ করেন। উপস্থিত বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক -শিক্ষিকা ও অনেক অভিভাবক -অভিভাবিকাগণ এই আলোচনা শোনার পর পুরনো অনেক ধারনা
পাল্টে ফেলার জন্য মন প্রস্তুত করেন। ‘এচিভ’ নামের পত্রিকাটির তৃতীয় সংখ্যা প্রকাশিত হয়। এই পত্রিকা মূলত শিশুমঙ্গলের মুখপত্র হিসেবে কাজ করে।
অনেক অসম্ভব কাজকে সম্ভব করেছেন বহু ক্ষেত্রে এই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষেরা। দেবেন্দ্র ঝাঝারিয়ার নাম নিশ্চয় আমাদের মনে আছে। ২০১৬ সালে প্যারা অলিম্পিক গেমসের জ্যাভেলিন থ্রো ইভেন্টে ভারতের জন্যে সোনা এনে প্রমাণ করেছিলেন তিনি যে তাঁরাও আর সকলের মতই যোগ্য। স্টিফেন হকিন্স এর উদাহরণও এ প্রসঙ্গে দেওয়া যেতে পারে।
এদিন অনুষ্ঠানে সকলের মাঝে উপস্থিত ছিলেন জেলার গর্ব শোভা মজুমদার যিনি শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করে মনের জোরে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন l উপযুক্ত শিক্ষা পেলে কোন বাধা যে থাকে না তা তাঁরা বারবার প্রমাণ করেছেন। । এই অসাধ্য সাধনে সবেচেয়ে বড় ভূমিকা যাঁদের তারা হলেন মা। যাঁরা প্রতি মুহূর্তে সন্তানকে যোগান মানসিক শক্তি৷ আসলে স্বপ্ন দেখতে হবে, স্বপ্ন দেখাতে হবে। আর সেই স্বপ্নই দেখতে শুরু করেছেন রায়গঞ্জ “শিশুমঙ্গল”-এর অটিজম, অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাক্টিভ ডিসঅর্ডার, মেন্টাল রিটার্ডেশন বা সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত অনেক বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর জননীরা৷ সংস্থার সাইকোথেরাপিস্ট, স্পিচ থেরাপিস্ট, স্পেসাল এডুকেটর তথা শিশু চিকিৎসক ডাঃ নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায় বলেন সংস্থার উদ্যোগে শিশুমঙ্গলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য চালু করা হয়েছে বিশেষ স্কুল৷
উদ্দেশ্যে একটাই, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন এই শিশুদের দ্রুত সুস্থ করে তাঁদের এ পৃথিবীতে বাসযোগ্য করে তোলা এবং সমাজের মানসিক মুল সমাজে ফিরিয়ে আনা ৷ তারা যে অন্যের চেয়ে কোন অংশে কম নয় তা প্রমাণ করাই হল এই সংস্থার অন্যতম কাজ। বিশেষ বক্তাদের বক্তব্যের শেষে উপস্থিত অভিভাবক ও দর্শকদের প্রশ্ন করার সুযোগ ছিল । এক্ষেত্রে মেলকের ভূমিকা পালন করেন শিক্ষক শ্রী যাদব চৌধুরী।
পুরো অনুষ্ঠানটি সুন্দর সঞ্চালনা করেন মৈত্রেয়ী সান্যাল ।