NBlive রায়গঞ্জঃ প্রায় সাত মাস থেকে বিনা লাইসেন্সেই চলছে রায়গঞ্জ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক। পরিকাঠামোর দিক থেকে বেশ কিছু খামতি থাকার কারণেই পাঁচ বছরের লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তির্ণ হয়ে যাওয়ার পর নতুন করে লাইসেন্স নবীকরণ করেনি রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগ।
জানা গেছে, বিগত বছর দুর্গা পূজার আগে ও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দুই দফায় কেন্দ্র ও রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগের প্রতিনিধি দল রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের পরিকাঠামো পরিদর্শন করেন। কিন্তু একাধিক খামতি নজরে আসার কারণে পরিকাঠামো উন্নয়ন না করা পর্যন্ত লাইসেন্স নবীকরণ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেওয়া হয়।
রায়গঞ্জ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গেছে, এইচআইভি জীবাণু সম্পন্ন রক্তের অটোক্লেভ করার মতন পরিকাঠামো নিয়ে সমস্যা রয়েছে ব্লাড ব্যাঙ্কে। এই কাজ জারি রাখার জন্য যেই কোম্পানির সাথে চুক্তি করা হয়েছিল তার সময়সীয়া বিগত জানুয়ারি মাসের ১ তারিখে শেষ হয়ে যায়। এরপর থেকে আর এই চুক্তি নবীকরণ করা হয়নি।
এছাড়াও ২৪ ঘন্টা কাজ জারি রাখার জন্য এই ব্লাড ব্যাঙ্কে তিনজন মেডিকাল অফিসার নিযুক্ত থাকলেও ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের জন্য আসা রোগীর আত্মীয়দের অভিযোগ চিকিৎসকদের হাজিরা অনিয়মিত। যার ফলে অনেক ক্ষেত্রেই মেডিকাল অফিসারের সই ছাড়াই রিপোর্ট রোগী ও তাঁদের আত্মীয়দের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হন ব্লাড ব্যাঙ্কে কর্মরত কর্মীরা।
ব্লাড ব্যাঙ্ক সূত্রে আরও জানা গেছে, কোনও ডোনার ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তদান করতে এসে আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসা করার সঠিক বন্দোবস্ত নেই। অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুত থাকলেও দীর্ঘদিন তা ব্যবহার না করার ফলে সেটিও ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্লাড ব্যাঙ্কে কর্মরত কর্মীরা।
এইসব সমস্যার পাশাপাশি সরকারি রেজিস্ট্রারের অভাব ও অসঙ্গতি, রক্ত সংরক্ষণে অনিয়ম, রক্তের নমুনার বিভিন্ন কম্পোনেন্ট পৃথক করার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্র না থাকা, সরকারি নিয়ম না মেনে শৌচাগার তৈরি, অপর্যাপ্ত চেয়ার, টেবিল, একটি মাত্র বিটি ভ্যান সহ একাধিক পরিকাঠামোর অভাবের কারণে পরিদর্শনে এসে অসন্তোষ প্রকাশ করেন কেন্দ্র ও রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগের আধিকারিকরা।
এরপরেই পরিকাঠামো উন্নয়ন না করা পর্যন্ত ব্লাড ব্যাঙ্কের লাইসেন্স নবীকরণ করা সম্ভব নয় বলে কেন্দ্র ও রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগের তরফ থেকে জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়। এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবী, সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী ব্লাড ব্যাঙ্কের পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। পাশাপাশি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবী, লাইসেন্সের নবীকরণ না হওয়ার কারণে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য একাধিক প্রস্তাব পাঠানো হলেও স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে কোনও আর্থিক বরাদ্দ মেলেনি।
জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশ মৃধা জানিয়েছেন, কেন্দ্র ও রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগের প্রতিনিধি দলের সদস্যদের পরামর্শ মেনে রায়গঞ্জ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের পরিকাঠামোর উন্নয়ন করা হয়েছে। ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগের আগামী পরিদর্শনের পরেই আশাকরছি ব্লাড ব্যাঙ্কের লাইসেন্স নবীকরণ করে দেওয়া হবে।