– বিবেকানন্দ সরকার
Nblive পোর্টজিনঃ শুরুটা হয়েছিল ১৩ বছর আগে কোন এক বসন্ত আগমনী সন্ধ্যায়। চায়ের আড্ডায় ভেসে এসেছিল প্রস্তাব। “শান্তিনিকেতনের মতন রায়গঞ্জে বসন্ত উৎসবের আয়োজন করলে কেমন হয়?” ব্যাস সেই থেকেই শুরু। দিনপঞ্জিকা দেখে বসন্ত উৎসব কমিটি গঠন করে শুরু হয়ে গেল রিহার্সাল। গুটি কয়েক মানুষকে সাথে নিয়ে পথ চলা শুরু করেছিল রায়গঞ্জ বসন্ত উৎসব। বছর কয়েক যেতে না যেতেই মানুষের জোয়াড়ে পা রাখার জায়গা পর্যন্ত মিলত না শহরের বুকে অবস্থিত করোনেশন স্কুলের ময়দানে। তিন-চারজন মানুষের ইচ্ছে শহরবাসীর বুকে এমন ভাবে জায়গা করে নেবে সেটা হয়ত খোদ উদ্যোগক্তারাও ভাবতে পারেননি। রায়গঞ্জবাসীর এমন স্বতঃস্ফূর্ত আগমন দেখে আনন্দে আপ্লুত উদ্যোগক্তারা আরও বড় আকাড়ে এই উৎসব পালন করার চিন্তা ভাবনাও শুরু করে দিয়েছিল। ধীরে ধীরে আকাড়েও বড় হচ্ছিল উৎসব। সকালে প্রভাতফেরি এরপর একের পর এক বসন্তের সঙ্গীতের তালে লাল-হলুদের বাসন্তী রঙে প্রকৃতির সঙ্গে নিজেদের সাজিয়ে নৃত্যানুষ্ঠান।
এরপর রায়গঞ্জ বসন্ত উৎসব জোয়াড়ে ভেসে সর্বজনীন থেকে রূপ নিল পাড়ার উৎসবে। ষড়ঋতুর বাংলায় বছর শেষের প্রথম সকাল রায়গঞ্জের পাড়ায় পাড়ায় শোনা গেল “বসন্ত এসে গেছে”, “ফাগুন লেগেছে বনে বনে”।
বিগত কয়েক বছর থেকেই বসন্ত উৎসবের মূল স্তম্ভ কিছুটা ম্লান। প্রকৃতির নিয়মে জোয়ারের পর যেমন ভাটা আসে ঠিক তেমনই দৃশ্য দেখা গিয়েছে রায়গঞ্জ বসন্ত উৎসবের এদিনের অনুষ্ঠানেও। ছোট কচিকাঁচাদের দেখা গেলেও এই উৎসবের বিগত বছরের শরিকদের দেখা মেলেনি। প্রভাতফেরি হয়ে গিয়েছে বন্ধ। পাঁচ সাড়ে পাঁচ ঘন্টা ধরে চলতে থাকা মূল অনুষ্ঠান নেমে এসেছে ঘন্টা দুয়েকে। দর্শকের স্থানে বসে থাকা রায়গঞ্জবাসীর সংখ্যাও আগের থেকে অনেকটাই কম। তবে স্কুল কলেজের তরুন-তরুনীদের ভিড় প্রায় অনেকটাই আগের মতন।
স্কুল প্রাঙ্গন থেকে মানুষের ঢল নেমে এসেছে শহরের বিভিন্ন রাস্তায়। পাড়ায় পাড়ায় গঠিত হয়েছে কমিটি। পাড়ার আট থেকে আশি এখন নিজেদের পাড়ার উৎসব নিয়ে মাতোয়ারা। শহরের রাস্তায় চলছে শোভাযাত্রা, নাচ ও গান। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে বসন্ত উৎসব।
বছর তেরো আগের ওই চায়ের আড্ডায় উঠে আসা প্রস্তাব যে সঠিক ভাবেই মানুষের মনে জায়গা করে নিতে পেরেছে সেই বিষয়ে কোনও দ্বিমত না থাকলেও ওই তিন-চারজন মানুষের উদ্দেশ্য কী আদতেও আসল রূপ পেল? হয়তো হ্যাঁ, হয়তো না। তবে প্রশ্নটা থেকেই গেল।