Archiveবেঙ্গল লাইভ Special

কুয়াশায় ঢাকা বোবা আলো আর দার্জিলিং: তৃতীয় কিস্তি

Nblive বিশেষ প্রতিবেদনঃ

দার্জিলিং ও সাম্রাজ্যবাদী টানাপোড়েন

দার্জিলিং ছিল মূলত সিকিম সাম্রাজ্যের অংশ। গোর্খা অধ্যুষিত হবার অনেক আগেই, প্রায় আদিকাল থেকেই এই পাহাড়ি অঞ্চলটি ছিল লেপচা উপজাতি দ্বারা অধ্যুষিত। গোর্খারা সিকিম সাম্রাজ্যের দেশীয় লেপচা ও ভুটিয়া সেনাদের দমন করে এই জায়গা দখল করে। পরবর্তীকালে নেপালের গোর্খা আর্মি ১৭৯০ সালে দার্জিলিং, পাশাপাশি সিকিমের রাজধানী রাবডেন্টসেও আক্রমন করে। এর ফলে নেপালি গোর্খা আর্মি তাদের সাম্রাজ্যকে নেপাল থেকে শুরু করে তিস্তা নদী পর্যন্ত তাদের রাজ্যভুক্ত করে নেয় (গোদা বাংলায় যাকে বলে “সাম্রাজ্য বিস্তার”।

কাহানিমে ট্যুইস্ট

এই পর্যন্ত ঠিক ছিল, কিন্তু এরপরেই কাহানি মে ট্যুইস্ট। ১৮১৫ তে ঘটে ইঙ্গ – গোর্খা যুদ্ধ এবং ফলস্বরুপ “সুগৌলি চুক্তি”। চুক্তি অনুযায়ী নেপাল তাদের সাম্রাজ্যের তিন ভাগের এক ভাগ ব্রিটিশদের কাছে সমর্পণ করে, যার মধ্যে ছিল মেচি থেকে তিস্তা পর্যন্ত অংশও।

এর ঠিক দুবছর পর, ফেব্রুয়ারি ১০, ১৮১৭- নেপালের কাছ থেকে পাওয়া মেচি থেকে তিস্তা নদী পর্যন্ত অংশ ব্রিটিশরা “তিতালিয়া চুক্তি”র অজুহাতে সিকিমের রাজাকে হস্তান্তর করে।

আবারও ক্ষণিকের বাঁকবদল

এর মধ্যে ঘটে যায় একটি অঘটন। তিতালিয়া চুক্তিই হোক বা অন্য কোন কারণেই হোক সিকিমের প্রধানমন্ত্রী ভো – লড কে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে লেপচারা নেপাল ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য হন।

১৮২৬ সালে সিকিমের রাজা সেদুপ নামগেল তাঁর মায়ের পরামর্শে ( যিনি নিজেও একজন লেপচা ছিলেন) ভো – লড হত্যা রহস্য সমাধান করেন। প্রসঙ্গত বলে রাখা ভাল, এই ভো- লড শুধুমাত্র সিকিমের প্রধানমন্ত্রীই ছিলেন না, সম্পর্কের দিক থেকে তিনি নামগেলের কাকাও হন।

যাই হোক, জানা যায়, ভো লডের হত্যার পেছনে “লাহাচোস” অর্থাৎ ‘চিবু লামা’র বাবার হাত ছিল। কারণ চিবু লামা নিজেও ছিলেন একজন লেপচা, আর এই চিবু লামার ১১ টি প্রজন্মের নাম সিকিমের সরকারি গ্যাজেটে জ্বলজ্বল করত।

দ্বন্দ্বের আড়াল আবডাল

এই দ্বন্দ্বের মূল কারণ, লেপচাদের মধ্যে সেই সময় কোন একতা ছিল না। ভো লডের অনুগামী যারা, তারা মূলত আশ্রয় হিসেবে ইলমেই থাকতে চেয়েছিল (ইলমে এখনো তাদের উত্তরসূরিরা বাস করেন বহাল তবিয়তে)। আর এখান থেকেই তারা চোরাগোপ্তা হানা দিত দার্জিলিং-এ ও সিকিমের তরাই অঞ্চলগুলিতে। এই ঘটনা পরিচিত “কোটাপা বিদ্রোহ” (কাটাপ্পা নয় কিন্তু) নামে, যা শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশরা ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাহায্যে দমন করতে সমর্থ হয়।

এই যে দুটো জাতির নিজেদের মধ্যে এই কলহ, বিবাদ – এর পেছনে রয়েছে অন্য ইতিহাস। এই যে দুটো জাতির মধ্যেকার অসমান দৌড়ের লড়াই- এ লড়াই আসলে নিজেদের জাতির… নিজেদের “গৌরবের সিংহাসন” দখলের লড়াই।

প্রতিযোগিতায় দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার কারণে পরবর্তীতে আমরা দেখি, ১৮২৬-এ সিকিমের এই রাজকীয় সাম্রাজ্য ভবিষ্যতের চলার শরিক হিসেবে বেছে নেয় তিব্বতীয় আভিজাত্যকে। অস্বীকার করে বিগত দিনের পথিক লেপচাদের।

চলবে…

Related News

Back to top button