Nblive,পোর্টজিনঃ
ভাষা আন্দোলনের ঘটনাপ্রবাহ
১৯৪৭
মে
হায়দরাবাদে এক ভাষণে মুসলিম লীগের নেতা চৌধুরী খালিকুজ্জামান বলেন, “উর্দুই পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা হবে।”
জুন
কলকাতার ইত্তেহাদ ও আজাদ পত্রিকায় বাংলার পক্ষে আবদুল হকের ‘বাংলা ভাষা বিষয়ক প্রস্তাব’ ও ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’ শীর্ষক প্রবন্ধ প্রকাশ।
কমরুদ্দীন আহমদ, তাজউদ্দীন আহমদ প্রমুখের নেতৃত্বে গণ-আজাদী লীগ তার দলীয় ইশতেহারে ঘোষণা করেন, ‘মাতৃভাষার সাহায্যে শিক্ষাদান করিতে হইবে’ এবং ‘বাংলা হইবে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’।
নভেম্বর
করাচিতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান শিক্ষা সম্মেলনে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুর পক্ষে সুপারিশ করা হয়।
ডিসেম্বর
শিক্ষা সম্মেলনের সুপারিশের বিরুদ্ধে ঢাকার ছাত্র-শিক্ষক-বুদ্ধিজীবীদের বিক্ষোভ প্রদর্শন।
তমদ্দুন মজলিস ও নুরুল হক ভূঁইয়াকে আহ্বায়ক করে প্রথম রাষ্ট্রভাষা সঙ্গগ্রাম কমিটি গঠন।
১৯৪৮
ফেব্রুয়ারি
বাংলা ভাষার পক্ষে সহস্র ব্যক্তির স্বাক্ষর সংগ্রহ করে সরকারকে স্মারকলিপি দেয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি।
গণপরিষদের অধিবেশনে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ইংংরেজি ও উর্দুর সঙ্গে বাংলাকেও গণপরিষদের ব্যবহারিক ভাষা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি তুলে সংশোধনী প্রস্তাব আনলে মুসলিম লীগের সদস্যদের বিরোধীতায় তা বাতিল হয়ে যায়।
রাজশাহীতে স্কুল-কলেজের ছাত্রীছাত্ররা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার পক্ষে ধর্মঘট করে।
মার্চ
সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বানে পূর্ব পাকিস্তানে হরতাল, মিছিল, সভা-সমাবেশ শুরু। আহত হন ২০০, কারাবন্দী হন ৬৯ জন।
১৩ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এবং ১৪ ও ১৫ মার্চ পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র ধর্মঘট পালিত হয়।
২১ মার্চ পাকিস্তানের প্রথম গভর্ণর জেনারেল মহ আলী জিন্নাহ বলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে আপনাদের বলে দিতে চাই যে, উর্দুউই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা, অন্য কোনো ভাষা নয়।’
১৯৪৯
১১ মার্চ পালিত হয় ‘রাষ্ট্রভাষা দিবস’।
১৯৫০
সারা দেশে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৫২
জানুয়ারি
মুসলীম লীগ কাউন্সিল অধিবেশনের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দীন বলেন, ‘পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু’।
কাজী গোলাম মাহবুবকে আহ্বায়ক এবং মওলানা ভাসানীকে সভাপতি করে ঢাকা বার লাইব্রেরিতে এক কর্মিসভায় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন।
ফেব্রুয়ারি
৪
রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি এবং রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সমর্থনে শিক্ষায়নে ধর্মঘট ও বিক্ষোভ প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রতিবাদ ও ২১ ফেব্রুয়ারি দেশে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত।
১২
পাকিস্তান অবজারভার-এ খাজা নাজিমউদ্দীনের বিরুদ্ধে ‘ছদ্ম ফ্যাসিজম’ শিরোনামে সম্পাদকীয় প্রকাশ
১৪
পাকিস্তান অবজারভার-এর ওপর নিষেধাজ্ঞা।
১৬
মুক্তির দাবিতে জেলবন্দী আওয়ামী মুসলিম লীগের যুগ্ম সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান ও মহিউদ্দীন আহমদের অনশন শুরু।
২০
এক মাসের জন্য ঢাকা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে জনসভা, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ মিছিল নিষিদ্ধ।
সন্ধ্যায় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির বৈঠকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ না করার সিদ্ধান্ত।
২১
সকাল থেকেই আগ্নেয়াস্ত্র সহ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বাইরে পুলিশের অবস্থান।
নির্ধারিত কর্মসূচী মেনে সকাল আটটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়-চত্বরে(বর্তমান মেডিকেল কলেজ)ছাত্রীছাত্রদের জমায়েত শুরু।
গাজীউল হকের সভাপতিত্বে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছাত্রের মত অনুসারে ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত।
১০ জনের একেকটি দলে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে বেরোনোমাত্র পুলিশ হামলা চালায়।
বিকেল তিনটা নাগাদ পুলিশ দুই দফায় ২৭ রাউন্ড গুলি চালায়।
২১ জন হতাহত হন। শহীদ হন কমপক্ষে চারজন।
প্রথম শহীদ এম এ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবুল বরকত। বাকিরা হলেন আবদুল জব্বার ও রফীকউদ্দীন; পরে আবদুস সালাম।
রাজশাহী কলেজের নিউ হোস্টেল প্রাঙ্গণে রাতে তৈরি হয় দেশের প্রথম শহীদ মিনার।
২২
হরতাল।
মেডিকেল হোস্টেলের প্রাঙ্গণে প্রায় ৩০হাজার লোকের অংশগ্রহণে ভাষাশহীদদের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জমায়েত থেকে স্ফুরিত হয় গণবিক্ষোভ।
ঢাকার বিভিন্ন স্থানে জনতার ওপর পুলিশ-ইপআর হামলা চালায়। গুলিতে নিহত হন শফিউর রহমান সহ অজ্ঞাতসংখ্যক লোক।
১৪৪ ধারার পাশাপাশি জারি হয় সান্ধ্য আইন।
পুলিশ গুঁড়িয়ে দেয় দেশের প্রথম শহীদ মিনার।
২৩
১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে জনতার ঢল। বাড়িতে বাড়িতে কালো পতাকা।
বেলা ২টায় সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে প্রায় চার হাজার লোকের অংশগ্রহণে ভাষাশহীদদের গায়েবানা জানাজা।
মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের ১২ নম্বর শেডের কাছে এক রাতের মধ্যে শহীদ মিনার নির্মাণ।
২৪
শহীদ মিনারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন শহীদ শফিউর রহমানের পিতা।
২৬
জননিরাপত্তা আইনে শিক্ষক ও ছাত্রদের গ্রেপ্তার করতে থাকে পুলিশ।
অনশন ধর্মঘটের কারণে বাধ্য হয়ে ফরিদপুর জেল থেকে শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তিদান।
২৭
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা।
এপ্রিল
একুশে ফেব্রুয়ারিতে গুলিবিদ্ধ আবদুস সালাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন ৭ এপ্রিল।
১৯৫৬
সরকারিভাবে প্রথম শহীদ দিবস পালিত হয়। একুশের দিনে সরকারি ছুটি ঘোষণা।
১৭ নভেম্বর ১৯৯৯
ইউনেসকো একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ ঘোষণা করে।
Nblive-এর পক্ষ থেকে ভাষা শহীদদের জানাই প্রণাম।