ছায়া থাক আমার কাছে
Nblive ওয়েব ডেস্কঃ
ঋকসুন্দর বন্দ্যোপাধ্যায়
পাতার পর পাতা অথবা মাঝরাত্তিরে ল্যাপটপের আলো। শব্দের পর শব্দ আসে অনেকটা আদর করার মতই , ঠিক যেভাবে অন্ধকারেও ঠোঁট খুঁজে নেয় ঠোঁট – শব্দেরাও পাহাড়ের এপার থেকে পরের শব্দের প্রতিধ্বনি শুনে ঠিক করে নেয় কাকে পাশে রাখবে জীবনভর। একটা শব্দই আরেকটা শব্দের প্রেমে পড়ে যায়। আস্টে- পৃষ্টে জড়িয়ে থাকে। ঠিক যেন পেলব সন্ধ্যেয় সঙ্গীকে কাছে পাওয়া।
সেই শব্দের খোঁজেই বন্ধুবর শান্তনু বার বার বলছিল ‘ পাঠারে … লেখাটা দে রে … ’ আর আমিও খুঁজে পাচ্ছিলাম না কি অভিসন্ধি করবো আবার ? মনের ভিতর তো অনেকগুলো পরত – একটা দরজা খুলে আরেকটা তারপর আরেকটা। আজ যাকে ছাড়া সূর্য ওঠে না কদিন পর সেই অমাবস্যা। জীবন তো আর হাততালি দিয়ে বলে না এসো শব্দের মেলা বসেছে – যেমন খুশি শব্দ সাজাও।
যে লেখায় অভিসন্ধির সুযোগ থাকে সেখানে তো নিজের খেলা দেখাতেই হয়। সেখানেই তো খেয়াল মতো দেওয়াল গড়ে তোলা আবার দেওয়াল ভাঙা। একটা শব্দকে আরেকটা শব্দের দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বলা – ‘ যে জন্ম আমাদের ঝাঁঝালো কেসুতপাতা মদ/ তার কি অনর্থ হতে আছে ? / ঘাসের বাহান্ন পথে পোকাদের হাঁটি হাঁটি গ্রাম। / কেউটের এলেবেলে বিষ পড়ে থাকে / যে ছেলেটি শান্ত আর যে মেয়েটি আছাড়িপিছাড়ি / উহাদের দেখা হোক শালিখঠাকুর । ’’
কেটে ফেলা শব্দরা খাতায় থেকে যায় আর স্ক্রিনে শব্দ মুছে ফেলা যায়। জীবন এখনো স্ক্রিন হতে পারেনি , পাতার মতই কাটা দাগ নিয়ে ঘুরে ফেরে।
‘ অস্ত্র মাটিতে , অস্ত্র আকাশগামী / দিগন্ত রাঙা অস্ত্রের মহিমায়/ এসো কবি , এসো বাঁধা দাও , / বলে ওঠো – ‘ মা নিষাদ ’ / ভেঙে যাক উইঢিপি । ’
যুদ্ধের নাম যদি হতো প্রেম আর প্রেমের নাম যুদ্ধ , প্রেমিকার জন্যও তো সীমান্ত বরাদ্দ – গন্ডি কাটা । পেরোলেই লাইন অফ কন্ট্রোল টপকানো পর পর গুলি – বোমার বর্ষণ। আর প্রেমিকাও তখন দেশ থেকে দ্বেষে।
‘ কে কার সঙ্গে থাকে সে এক রহস্য ।
চোখের জল মুছিয়ে হাঁটুর কাছে বসে বলেছিলাম
ভেবো না
আমি সারাজীবন তোমার সঙ্গে থাকব।
কিন্তু থাকতে পারিনি ।
কেন পারিনি ?
বাবা ছিল, হঠাৎ ‘ এই আসছি ’ বলে কোথায় যে গেল।
আমার মনে হয় বাবা একটা অরণ্যে ঢুকে
তার ছেলেকে ডাকছে।
কে যে কার সঙ্গে থাকে সে এক রহস্য । ’
আবার দোরগোড়ায় পুজো সঙ্গে আছে বুকের ভিতর সামান্য কিছু পুঁজ ও। ট্রেনের বাইরে রোদটার রঙ বদলাচ্ছে যখন বিকেলের হাওয়ায় একটু ঠাণ্ডা ভাব তখন সকালের স্বপ্ন মনে পড়ে একলাই হেসে ফেলেছিলাম –
“ আজ তিনদিন তিনরাত্রি হয়ে গেল আমি তোমার কথা ভাবছি। ভাবছি আর স্তরে স্তরে হাঁটু ও তোমার বুক অবধি উঠে আসছে জল, যমুনার স্ফীত ও ক্ষিপ্ত জল , ভেসে যাচ্ছে মজনু কা টিলা, আমি তার শেষ প্রহরা। শেষ সান্ত্রি, আমি তোমার কথা ভাবছি, তুমি বিষম খাচ্ছো, তোমার কথা ভাবছি, তুমি জিভ কামড়ে ফেলছ, তোমার কথা ভাবছি, আমিই শেষ মানুষ যার বুক থেকে গলা থেকে চিবুকেও উঁকি দিচ্ছে জল, আমি তোমার কথা ভাবছি, আমার কান ছুঁচ্ছে, লতি ছুঁচ্ছে জল, শেষরাতে খাঁ খাঁ করছে মজনু কা টিলা । ’’
প্রেমের পরেও আবার প্রেমই আসে । ঠিক যেভাবে বছর ঘুরে পুজো। ভাসান হয়ে যাওয়ার পর ডুব সাঁতার দিতে পারলেই – চোখের কোলে লুকিয়ে থাকা জলাশয়ে মণি – মুক্তোর খোঁজ ।