মূর্তিটি অতিক্ষুদ্র হওয়ায় তা অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মধ্যে দিয়ে দেখলে দেবী দুর্গার দশ হাত সহ অন্যান্য বাকি সব বৈশিষ্ট্যই ধরা পড়ে।
Bengal Live রায়গঞ্জঃ পরম ধৈর্য্য ও দক্ষতায় পুজোর আগে শিল্পী গড়ে তুলেছেন অসামান্যা দেবী মূর্তি। তবে তা খালি চোখে স্পষ্ট দেখা যায় না বললেই চলে। ভালো করে দেবী দুর্গার রূপ প্রত্যক্ষ করতে সেখানে প্রয়োজন অণুবীক্ষণ যন্ত্রের, কারণ প্রতিমাটি মাত্র ২ মিলিমিটারের। এমনই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র দেবী মূর্তি তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন রায়গঞ্জের বাসিন্দা মানস রায়। একটি দেশলাই কাঠিকে কাঠামো করে তৈরি করে ফেলেছেন স্বয়ং মা দুর্গার প্রতিরূপ।
শিল্পের সঙ্গে আত্মিক বন্ধন রায়গঞ্জ বীরনগরের বাসিন্দা মানস রায়ের। করণদিঘিতে চশমার দোকান রয়েছে মানস বাবুর। পেশায় ব্যবসায়ী হলেও নেশায় তিনি শিল্পী, দীর্ঘদিনের অধ্যবসায় ও ধৈর্য্যে অসাধারণ দক্ষতা অর্জন করেছেন হাতের কাজে। এর আগেও একাধিক ক্ষুদ্রাকৃতি দেবী প্রতিমা তিনি তৈরি করেছেন। শুরু করেছিলেন ৫ মিলিমিটার থেকে তারপর ক্রমশ চেষ্টা করে গেছেন তা আকৃতিতে আরও ছোট করার। সফলও হয়েছেন নিঃসন্দেহে, মানস বাবুর দশভূজাকে স্পষ্টভাবে দেখতে এবার প্রয়োজন পড়ছে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের। রায়গঞ্জের বুকে এমন প্রতিভা নিঃসন্দেহে বিরল। ফলতঃ মাত্র ২ মিলিমিটার আয়তনের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র দেবী মূর্তি গড়ে তিনি বিস্মিত করেছেন আপামর শহরবাসীকে।
শিল্পী মানস রায় জানিয়েছেন, এর আগে এত ক্ষুদ্র দুর্গা প্রতিমা তৈরি করেনি কেউ। আমার তৈরি প্রতিমাটির আয়তন মাত্র ২ মিলিমিটার। অতিক্ষুদ্র হাওয়ায় এটি খালি চোখে দেখা যায় না, অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে স্পষ্ট দেখা যায়। অন্যান্য প্রতিমা তৈরীর মতোই একই পদ্ধতিতে খড়-মাটি-আঁঠা প্রভৃতি ব্যবহার করে একটি দেশলাই কাঠিকে কাঠামো করে এই অতি ক্ষুদ্র দুর্গা প্রতিমা তৈরি করেছি। এই ধরনের সূক্ষাতিসূক্ষ কাজের প্রতি আমার ভালোবাসা চিরকালীন। প্রায় তিন বছর ধরে এই কাজ করছি। প্রথম ক্ষুদ্র দেবীমূর্তির আয়তন ছিল ৫ মিলিমিটার, এরপর ক্রমশ তা আকৃতিতে আরও ক্ষুদ্র করার চেষ্টায় ২ মিলিমিটারের মূর্তিটি বানাই। পাশাপাশি তিনি এও জানিয়েছেন, তাঁর লক্ষ্য রয়েছে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মূর্তি তৈরিতে বিশ্ব রেকর্ড তৈরি করার। তিনি গিনেস্ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের তালিকায় স্বর্নাক্ষরে দেখতে চান নিজের নাম। তার জন্যই প্রতিনিয়ত ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর প্রতিমা তৈরীর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মানস বাবু।
মানস বাবুর প্রতিবেশী অরিন্দম কুন্ডুর গলায় ঝরে পড়ছে উচ্ছ্বাস। তিনি বলেন, এর আগে এত ক্ষুদ্র দেবীমূর্তির কথা কখনো শুনিনি, তা চোখের সামনে দেখতে পেয়ে খুব ভালো লাগছে। মানস বাবুর তৈরি মূর্তিটি পিঁপড়ের মতো ক্ষুদ্র, ফলে তা খালি চোখে স্পষ্ট দেখা যায় না। তবে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মধ্যে দিয়ে দেখলে মূর্তিটিতে দেবী দুর্গার দশ হাত সহ অন্যান্য বাকি সব বৈশিষ্ট্যই ধরা পড়ে। এমন শিল্পীর সান্নিধ্য পেয়ে আমরা মানস বাবুর প্রতিবেশী তথা রায়গঞ্জবাসি হিসেবে গর্ববোধ করি এবং তিনি খুব শীঘ্রই তাঁর নিরলস চেষ্টা এবং দক্ষতায় ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মূর্তি তৈরিতে ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়ে তুলবেন এই আশা করছি।