কতটা ভয়ঙ্কর কালাচ? দংশনের উপসর্গ কী কী?
একরাতেই তিনটি কালাচ উদ্ধার হয়েছে রায়গঞ্জে। চাপদুয়ার, সুদর্শনপুর ও কাঞ্চনপল্লী থেকে উদ্ধার হয়েছে বিষধর গুপ্তঘাতক কালাচ। এই ঘটনার পর থেকেই সাধারণ নাগরিকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে পশুপ্রেমী সংস্থার সদস্যরা৷
Bengal Live ডেস্কঃ সাপকে ভয় পায় না এমন ব্যক্তি খুব কমই আছে। প্রতিবছর ৮১ হাজার থেকে ১ লক্ষ ৩৮ হাজার মানুষ সাপের কামড়ে মারা যায়, যার প্রায় অর্ধেক মৃত্যুর ঘটনাই ঘটে ভারতে। বিষধর সাপ বলতে আমরা সাধারণত শঙ্খচূড়, গোখরো, কেউটে এদেরকেই বুঝে থাকি কিন্তু কালাচ সাপ বিষধর হিসেবে আমজনতার কাছে অতটাও পরিচিত নয়। অথচ পশ্চিমবঙ্গে গড়ে প্রায় এক হাজার মানুষ প্রতিবছর শুধুমাত্র এই সাপের কামড়ে মারা যান। তবুও সাধারণ মানুষ এর গতিবিধি সম্পর্কে এখনো অনেকটাই অন্ধকারে রয়ে গেছে। তাই কালাচকে বলা হয় বাংলার গুপ্তঘাতক।
কেন গুপ্তঘাতক বলা হয় কালাচকে?
বিষাক্ত সাপ এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য গুপ্তঘাতক কালাচ, যার দংশনে সঠিক সময়ে চিকিৎসা না মিললে অল্প কিছুক্ষণ সময়ের মধ্যেই মৃত্যুমুখে ঢলে পড়ে মানুষ। পশ্চিমবঙ্গ তথা সারা ভারতে মূলত মূলত বর্ষাকালে কালাচের উপদ্রব বৃদ্ধি পায়। নিশাচর হওয়ায় এরা সাধারণত মানুষের চোখে পড়ে না। কালাচের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিক হলো এরা শতভাগ বিষ প্রয়োগ করে। তবে কালাচের ক্ষেত্রে কোন ড্রাই বাইট নেই। পাশাপাশি কালাচের আর একটি ভয়ানক বৈশিষ্ট্য হলো এদের দাঁত মশার হুলের মতো। ফলে এদের দংশনে কোনও দাগ পড়ে না। এমনকি আক্রান্ত স্থানে কোন ব্যথা বা ফোলার অনুভূতিও হয় না। ফলে ৯০ % শতাংশ আক্রান্ত ব্যক্তি বুঝতেই পারেন না তাকে সাপে কামড়েছে, আর ঠিক এই কারণেই কালাচকে গুপ্তঘাতক নামে আখ্যায়িত করা হয়।
কালাচ ওরফে ঘামচাটা।
এই সাপ এবং সাপের কামড় আগাগোড়া রহস্যে মোড়া। কথিত আছে এই সাপ ঘুমন্ত ব্যক্তির ঘামের গন্ধ নিতে বিছানায় উঠে আসে। তাই গ্রামবাংলায় এই সাপ ঘামচাটা বলেও পরিচিত।
কালাচ সাপ দংশনের উপসর্গ কী কী?
কালাচ বা কালচিতির ইংরেজি নাম Common Crate. নামে ক্রেট বা কেউটের চিহ্ন থাকলেও কার্যক্ষেত্রে এরা তার চেয়েও ভয়ঙ্কর। কারণ কেউটের কামড় আক্রান্ত ব্যক্তি তৎক্ষণাৎ বুঝতে পারলেও কালাচ আদতেই নিঃশব্দ ঘাতক। শরীরে এর কামড়ের কোন চিহ্ন থাকে না। ফলে কালাচ কামড়ালে কেবলমাত্র সর্তকতা ও সাবধানতা অবলম্বন করেই মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে আসা সম্ভব। আসুন জেনে নেওয়া যাক
কীভাবে বুঝবেন কালাচ সাপ কামড়েছে?
- কালাচ নিশাচর হওয়ায় সাধারণত গভীর রাত্রে দংশন করে থাকে। ফলে সকালের দিক থেকে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে অস্বস্তিবোধ এবং জ্বর জ্বর ভাব হতে পারে।
- অনেক ক্ষেত্রে এই সাপ কামড়ানোর পর ভোর কিংবা সকালের দিকে আক্রান্ত ব্যক্তির গলা বা পেটে ব্যথা শুরু হতে দেখা যায় ।
- এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ হলো যত সময় যাবে রোগী ততোই ঝিমিয়ে পড়বেন। তার পক্ষে চোখের পাতা খুলে রাখা দুঃসাধ্য হয়ে উঠবে। আর এতেই নিশ্চিত ভাবে বোঝা যায় যে ওই ব্যক্তিকে কালাচ সাপে কামড়েছে।
এই সমস্ত উপসর্গগুলি প্রকাশ করতে বেশ অনেকখানি সময় নেয় ততক্ষণে আক্রান্ত ব্যক্তির অনেকাংশে শারীরিক ক্ষতি হয়ে যায় তাই এই উপসর্গগুলো দেখা গেলে দেরি না করে তৎক্ষণাৎ যোগাযোগ করুন নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে।