হোলির আগের দিন নেড়াপোড়া হয় কেন ? জানুন দোলের পৌরাণিক ইতিহাস
হোলি ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে দোল উৎসব, মেটে হোলি, আহেরিয়া, বসন্ত উৎসব ইত্যাদি নানা নামে পরিচিত।
সকাল হলেই বাড়ির সামনে বাঁশি বাজান গীতা লিপি করুণা স্বপ্না ও কবিতারা
Bengal Live বিভিন্ন পুরাণে, মহাকবি কালিদাস, শ্রীহর্ষের লেখাতেও ‘হোলি’ শব্দটির উল্লেখ পাওয়া যায়। সপ্তদশ শতকে ব্রিটিশরা এই উৎসবকে গ্রহণ করলে অক্সফোর্ড ডিকশনারিতেও হোলি(Holi) শব্দটি জায়গা করে নেয়। ‘হোলি’ শব্দটি এসেছে ‘হোলিকা’ থেকে। পুরাণ মতে, হোলিকা হল মূলতানবাসী (বর্তমানে পাকিস্তানে অবস্থিত) র রাজা তথা দানবরাজ হিরণ্যকশিপুর ভগিনী। ভগবান বিষ্ণু হিরণ্যকশিপুর ভক্তিতে খুশি হয়ে তাকে দেব-দানব-মানব-পশু কর্তৃক জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে যেকোনো অস্ত্র দ্বারাই আবদ্ধ হওয়ার বর দেন। গর্বে-অহংকারে হিরণ্যকশিপু তখন মূলতানবাসীকে, বিষ্ণুর আরাধনা ছেড়ে তার উপাসনা করতে বাধ্য করেন। শ্রীহরি এবিষয়ে তাকে সাবধান করলেও কর্নপাত করেননি দানবরাজ হিরণ্যকশিপু। কিন্তু তাঁর নিজের পুত্র প্রহ্লাদ বাবার পুজো করতে রাজি হয়নি। সে ছিল পরম বিষ্ণুভক্ত। হিরণ্যকশিপু প্রহ্লাদকে শাস্তিস্বরূপ নানা বিপদের মুখে ঠেলে দিলেও শ্রীবিষ্ণুর কৃপায় রক্ষা পায় প্রহ্লাদ। হিরণ্যকশিপু তখন ভগিনী হোলিকার সাহায্যে প্রহ্লাদকে হত্যা করতে উদ্যত হয়।
আপনার ভোট ঠিক জায়গায় পড়ল কিনা বুঝবেন কিভাবে ? জানুন ভিভি প্যাটের ব্যবহার
কথিত আছে, হোলিকার ভক্তিতে সন্তুষ্ট হয়ে ভগবান বিষ্ণু তাকে একটি মন্ত্রপুত চাদর দিয়েছিলেন, যা আগুন ও বিভিন্ন বিপদ হতে তাকে রক্ষা করতো। হোলিকা নিজে ওই চাদর জড়িয়ে প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে আগুনে প্রবেশ করলে এক দমকা হাওয়া ওঠে। হাওয়ায় চাদর উড়ে গিয়ে জড়িয়ে যায় প্রহ্লাদের শরীরে। এ যাত্রায়ও ভগবানের কৃপায় প্রহ্লাদ বেঁচে যায়। আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয় হোলিকার। অতঃপর দানবরাজার পাপের শাস্তি দিতে শ্রীবিষ্ণু নরসিংহ অবতারে আবির্ভূত হয়ে তার জঙ্ঘার উপর রেখে নখ দিয়ে হত্যা করেন পাপী হিরণ্যকশিপুকে। সেই সময় থেকে হোলিকার মৃত্যুকে স্মরণ করে এবং প্রহ্লাদের অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুভ শক্তির জয়ের আনন্দে হোলি উৎসব পালন করা হয়। ভারতবর্ষের অনেক জায়গায় হোলির আগের দিন কাঠ, খড় দিয়ে মূর্তির অবয়ব গড়ে দহন করে এই উৎসব উদযাপন করা হয়।
নিজের যত্ন নিন: সন্তানকে বড় হতে দিন।
ব্রজধামে প্রায় ১৬দিনব্যাপী হোলি উৎসবের আয়োজন করা হয়। জনশ্রুতি আছে যে, রাক্ষসী পুতনার দুগ্ধ পান করে বিষবর্ণ ধারণ করে কৃষ্ণের দেহ। স্বাভাবিক ভাবেই গোপীদের সঙ্গলাভ থেকে বঞ্চিত হলে হতাশ হয়ে পড়েন যুবক কানাই। তখন মা যশোদার কথামতো রাধিকাকে তাঁর পছন্দের রং মাখিয়ে প্রেম নিবেদন করেন শ্রীকৃষ্ণ। সেই দিন থেকেই এই হোলি উৎসব পালিত হয়ে আসছে। অন্য মতে এদিন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মতিথি হিসেবেও পালন করা হয়।
বাংলা ছাড়াও বৃন্দাবন, মথুরা, নন্দগাঁও সহ বহু জায়গায় রঙের এই উৎসবে মহাসমারোহে মেতে ওঠে জনসাধারণ। প্রকৃতির কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৩১ সালে ব্রহ্ম বিদ্যালয় স্থাপনের পর থেকেই ঋতু উৎসবের আয়োজন করেন। তার মধ্যে প্রধান বসন্ত উৎসব যা একই দিনে পালিত হয়। দেশ-দেশান্তর থেকে বহু মানুষ যোগ দিতে আসেন এই মিলন মেলায়।
উল্লেখ্য, বাংলায় হোলি উৎসবের ঠিক পরের দিন উত্তরপ্রদেশে এই উৎসব পালন করা হয়। বাংলা ক্যালেন্ডার অনুসারে এবছরের হোলি উৎসবের নির্ঘন্টঃ
১)১৪ই চৈত্র আবির(ইংরেজি ২৮ মার্চ)
২)১৫ই চৈত্র হোলি (ইংরেজি ২৯ মার্চ)