সান্দাকফুতে একদিন – মধুসূদন দেবগুপ্ত
Bengal Live পোর্টজিনঃ পোর্টজিন কি? পোর্টজিন একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। প্রতি সপ্তাহের রবিবার এটি বেঙ্গল লাইভের (bengallive.in) এর পোর্টজিন বিভাগ থেকে প্রকাশিত হয়।
সান্দাকফু শব্দের অর্থ বিষাক্ত গাছের পাহাড়। একসময় এই পাহাড়ে বিষাক্ত একোনিটাম গাছ প্রচুর পরিমানে পাওয়া যেত, তাই এইরকম নাম। এই গাছের ফুলের গন্ধে শরীর ঝিমিয়ে পরে, আর কেউ যদি সেই গন্ধে ঘুমিয়ে পরে তবে তার মৃত্যু অবধারিত। তবে এখন এই গাছের সংখ্যা অত্যন্ত কম।
দার্জিলিং পাহাড়ে প্রথম ব্যাচের ল্যান্ড রোভার আসে ১৯৫৮ সালে। প্রধানত চা বাগানের মালপত্র আনা বা উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের আসা যাওয়ার জন্য। এরপর রাস্তাঘাট ভালো হওয়ার সাথে সাথে এই গাড়িগুলো সরে যায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের দিকে, প্রধানত সান্দাকফুর পথে। ২০১৮ সালেও এই রাস্তায় ৪২ টি ল্যান্ড রোভার ছিল। রাস্তা ভালো হওয়ার সাথে সাথে এই গাড়িগুলো ভিন্টেজ কার হিসেবে হাতবদল হচ্ছে।পুরোনো কলকব্জা সহ এক একটা গাড়ি প্রায় ১৮ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে যে কয়টি গাড়ি আছে তার বেশিরভাগের কাঠামো ল্যান্ড রোভারের, কিন্তু ভেতরের কলকব্জা মাহিন্দ্র এন্ড মাহিন্দ্রের।বেলা ২ টা নাগাদ সান্দাকফুতে পা রাখলাম, বৃহৎ পরিবার সহ। ঢোকার মুখে সান্দাকফুর সেই মাইল ফলকটা এখন আর নেই। যেখানে লেখা ছিল, সান্দাকফু ৩৬৩৬ মিটার। এছাড়া ভারতের দিকের সবকিছু প্রায় একইরকম আছে। সেই ট্রেকার্স হাট, পি ডব্লু ডি বাংলো, ডি এম বাংলো, এস এস বি ক্যাম্প। কিন্তু নেপালের দিকে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। শেরপা হোটেল বড়ো হয়েছে, অনেক নীচ থেকে এই হোটেল দেখা যায়। । দোতলার রুমগুলো নতুন, খাবারের মান ভালো, ডাইনিং বিশাল – সেখানে সন্ধেবেলায় আড্ডা মারতে পারবেন। এছাড়া এই হোটেলের ছাদ থেকেই সানরাইজ দেখতে পারবেন, হোটেলের বাইরে যাবার প্রয়োজন নেই।
সান্দাকফু আমার মান রেখেছে। ছেলেকে নিয়ে উঠতে উঠতেই দেখছি ডানদিকে কাঞ্চনজঙ্ঘা রেঞ্জ। এরপর ট্রেকার্স হাট পর্যন্ত এসে দেখা গেল মাউন্ট এভারেস্ট। সান্দাকফু থেকে প্রায় ১৮০° অর্ধবৃত্তে দেখলাম অনেক বিখ্যাত শৃঙ্গ। বাঁদিক থেকে টুৎসে(৬৭৩৯ মি), চামলাং(৭৩১৯ মি), বরুনোৎসে (৭১৫২ মি), লোৎসে (৮৫১৬ মি), মাউন্ট এভারেস্ট (৮৮৪৮ মি), মাকালু (৮৪৮৫ মি), চোমোলোনজো (৮৪৬৩ মি), থ্রি সিস্টার্স, কুম্ভকর্ণ, কাঞ্চনজঙ্ঘা (৮৫৮৬ মি), সিম্ভো, পান্ডিম (৬৬৯১ মি), তিনচেনখাং, জোপুনো, নরসিং, সিনিঅলচু, চোমোলহরি। এছাড়াও আরো অনেক জানা অজানা শৃঙ্গ।পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো পাঁচটি শৃঙ্গের চারটিই এখান থেকে দেখা যায়। তবে এখানকার সবচেয়ে বিখ্যাত রেঞ্জ হলো স্লিপিং বুদ্ধ। সেই বুদ্ধের মাথা হল কুম্ভকর্ণ ( জানু), হাত ও পেট কাঞ্চনজঙ্ঘা আর পায়ের পাতা হল পান্ডিম।
ভাত, ডাল, পাঁপরভাজা, ওমলেট দিয়ে দুপুরের খাওয়া সেরে এদিক সেদিক পাইচারি করতে করতে কিছু নতুন বন্ধু পেলাম। বিকেলে সান্দাকফু থেকে প্রায় ২ কিমি দূরে ফালুটের দিকে আল বলে এক জায়গায় যাওয়া হল, সানসেট দেখতে। অসাধারণ জায়গা। পশ্চিম আর উত্তর খোলা বলে সানসেট, এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘা একসাথে দেখা যায়। তবে একফ্রেমে নেওয়া মুশকিল।
সন্ধেবেলার ডাইনিং হলের আড্ডা জমে উঠল। গরম কফি, পকোড়া, দার্জিলিং চায়ের গন্ধে ম ম ডাইনিং তখন মিনি ভারতের চেহারা নিয়েছে। এর মধ্যে কয়েকজন গান গাইতে শুরু করলো সাথে বিট বক্সিং। নাচানাচি শুরু হতে দেরি হল না। আমরা যদিও দর্শক হওয়াই পছন্দ করলাম। ১০ টা নাগাদ আড্ডা শেষে চিকেন চাউমিন আর চিলি চিকেন দিয়ে রাতের খাবার সেরে যে যার ঘরে। আবার প্রতীক্ষা কাল সকালের, সান্দাকফুর সানরাইজের।
কীভাবে লেখা পাঠাবেন?
নীচে উল্লিখিত হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার কিংবা ইমেল আইডিতে লেখা পাঠাতে পারবেন।
হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার~ 9636459953
ইমেল আইডি~ bengalliveportzine@gmail.com
লেখার সঙ্গে নিজের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর এবং একটি ছবি পাঠানো আবশ্যক।
ভ্রমণ কাহিনীর সঙ্গে নিজের তোলা দুটো ছবি পাঠাতে হবে।