NBlive তাপস জোয়ারদারঃঃ যেখানে সময় থমকে দাঁড়ায়।
আস্ত একটা ঝর্না কোন এক জাদুকরের মন্ত্রবলে এক মুহুর্তে তার সমস্ত চঞ্চলতা হারিয়ে জমে বরফ হয়ে অপার্থিব রূপের ডালি নিয়ে দাঁড়িয়ে। তিনদিন ধরে জমাট নদীর পিচ্ছিল বরফের উপর দিয়ে ফাটল বাঁচিয়ে ৩/৪ লেয়ার গরম জামা, পায়ে গামবুট পরে এই অপার অ্যাডভেঞ্চারাস সৌন্দর্যের টানে লেহ-তে যাবেন বলে যাঁরা মনস্থির করছিলেন —-এই লেখাটা বিশেষত তাদের জন্য।
চাদ্দর ট্রেক :– লাদাখ এর লেহ শহরের কাছে জাঁসকার নদীর উপর জমাট বরফের উপর দিয়ে হাঁটা দূরত্ব ৬২ কিমি, সময় ৭ দিন। যাবার সময় জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাস। দিনে উষ্ণতা মাইনাস ১০ ডিগ্রী, রাতে উষ্ণতা মাইনাস ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত। এই ট্রেকের পোশাকি নাম frozen Zanskar riverine route।
মূলত এই অঞ্চলের অধিবাসীরা এই সময় তামার তৈরি জিনিস,ছাগলের চামড়া, ইয়াকের দুধের জমানো মাখন ইত্যাদি নিয়ে ব্যবসার প্রয়োজনে এই রুটকে সংক্ষিপ্ত পথ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে বহুকাল থেকে। সিন্ধু ও জাঁসকা নদীর মিলনস্থলের কাছে চিলিং থেকে শুরু হয়ে শেষ হয় গ্যালপোতে। প্রতি মুহুর্তে জমাট বাধা বরফের ভাঙা-গড়া, রং পরিবর্তনের খেলার অমোঘ অাকর্ষণে দেশ-বিদেশের অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষেরা এই সময় ভিড় জমায় লেহ-তে।
প্রতি বছর গড়ে ৪/৫ জনের মৃত্যু ও বেশ কিছু দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে লেহ প্রশাসন এই বছর থেকে তৈরি করেছেন SOPs ( Standard Operating Procedures)
১) ট্রেক শুরু করার আগে বাধ্যতামূলক ভাবে ৩ রাত্রি লেহতে থাকতে হবে আবহাওয়া অভ্যস্ত করার (acclimatisation) জন্য।
২) লেহতে প্রি-মেডিক্যাল চেক আপ ক্যাম্প থেকে ফিটনেস সার্টিফিকেট নিতে হবে।
৩) স্পেশাল মেডিক্যাল ইনসিওরেন্স করতে হবে।
৪) ওয়াইল্ড লাইফ পারমিট সংগ্রহ করতে হবে।
ভারতীয়দের জন্য : ওয়াইল্ড লাইফ ফি ২০০ টাকা।
মেডিক্যাল চেক আপ ও ইনসিওরেন্স ফি ২০০০ টাকা।
এর বিনিময়ে যা সুবিধে পাওয়া যাবে তা হল — চিকিৎসা খরচ বাবদ সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা। মৃত্যু ও শারিরীক বিকলতার জন্য ৩ লাখ টাকা। মেডিক্যাল ইভাক্যুয়েশন- এর জন্য ৪ লাখ টাকা। এছাড়াও প্রত্যেক পর্যটককে আবর্জনা ব্যাগ নিতে হবে। ফেরার সময় টিনের ক্যান,প্লাস্টিকজাত বস্তু ইত্যাদি ঠিকমত ফিরিয়ে আনছেন কিনা তা যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।
লেহ প্রশাসনের পক্ষ থেকে অারো জানানো হয়েছে এই “Do before you die “ ট্রেকে পরিবেশ সুরক্ষার জন্য প্রতিদিন ১০০ জনকে অনুমতি দেওয়া হবে। গ্লোবাল ওয়ার্মিং ও ভিড়ের চাপ থেকে রক্ষা করতে আগামী ২০২০ সালে চাদ্দর ট্রেক বন্ধ করা হতে পারে।