রানার ছুটছে বক্সা পাহাড়ের পথে, ইণ্ডিয়া ছুটছে ডিজিটালের পথে
Nblive আলিপুরদুয়ারঃ “রানার ছুটেছে তাই ঝুম্ ঝুম্ ঘণ্টা বাজছে রাতে
রানার চলেছে খবরের বোঝা হাতে,
রানার চলেছে, রানার !”
হ্যাঁ এখনও ছুটে চলেছে রানার। উন্নত প্রযুক্তির দেশে এখনও ছুটে চলেছে রানার। ছুটতে যে তাঁকে হবেই। কারণ তাঁর ওপরেই তো ভার রয়েছে নতুন খবর আনার।
উত্তরবঙ্গের বক্সা পাহাড়ের ডরাগাঁও গ্রামে অবস্থিত ১১১ বছরের পুরোন এই হেরিটেজ ডাকঘর আজও চলছে রানারের ভরসায়। বক্সাদুয়ার মহকুমা গঠনের পর প্রশাসনিক কাজের সুবিধার জন্য ব্রিটিশরা এই ডাকঘর গড়ে তুলেছিলেন ১৯০৫ সালে। ডাকঘরের পুরোন বাড়ি নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে বক্সা দুর্গের ফিনলে সাহেবের বাড়িই এখন ডাকঘরের ঠিকানা। জানা গেছে, হেরিটেজ এই ডাকঘরের কর্মী বলতে মাত্র দুইজন। পোষ্টমাষ্টার শ্রীজনা থাপা ও রানার শঙ্কর মন্ডল। দেওগাঁও, নামনা, ডরাগাঁও, সেওগাঁও, ও চলুং সহ ২৮ মাইল জুড়ে অবস্থিত বক্সার প্রায় ১৩টি গ্রামে চিঠি পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেন রানার শঙ্কর মন্ডল। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় আড়াই হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই ডাকঘরের রানার শঙ্কর রোজ প্রায় ১০ টি চিঠি বোঝাই ব্যাগ বয়ে নিয়ে যায় বিভিন্ন পাহাড়ি গ্রামে। পাহাড় থেকে নামতে কষ্ট না হলেও ব্যাগ ভরতি চিঠি নিয়ে পাহাড়ে উঠতে কষ্ট হয় খুব। তবে বর্ষাকালে সেই কষ্ট বেড়ে যায় অনেকটাই।
শ্রীজনা থাপার বাবা একসময় এই ডাকঘরের পোষ্টমাষ্টার ছিলেন। ব্রিটিশ আমলে এই ডাকঘরের রানার ছিলেন দৌ ভুটিয়া। এরপর এই দায়িত্ব বংশপরম্পরায় সামলেছেন দৌ ভুটিয়ার ছেলে বাতাসু ভুটিয়া ও নাতি ছিরিং ভুটিয়া। ২০০৮ সাল পর্যন্ত ছিরিং এই দায়িত্ব সামলানোর পর অবসর গ্রহন করেন। এরপর থেকেই চুক্তিভিত্তিক রানার নিয়োগ হয়ে চলেছে। এখন ছয় মাসের জন্য এই দায়িত্ব সামলাচ্ছেন শঙ্কর মন্ডল। পাহাড়ি এই এলাকায় রানার ছাড়া কোনও গতি নেই ফলে রোজ চিঠির বোঝা কাঁধে নিয়ে রানারকেই ছুটতে হয় বিভিন্ন গ্রামে। স্থানীয় বাসিন্দা ইন্দ্র থাপা বলেন, পাহাড়ের বাসিন্দাদের একমাত্র ভরসা এই ডাকঘর। পাহাড় থেকে সমতলে যাওয়ার সময় আমরা প্রত্যেকেই একবার করে এই ডাকঘর ঘুরে যাই। এটা আমাদের অভ্যেস হয়ে গিয়েছে। বক্সা দুর্গ দেখতে যাওয়ার পথে আপনিও একবার ঘুরে আসতেই পারেন চুনসুরকি দিয়ে তৈরি ১১১বছরের পুরোন এই ডাকঘরকে। সাক্ষী হয়ে থাকতে পারেন ইতিহাসের।